ধীমান চন্দ্র সাহা, ফুলবাড়ী ►
আমদানি নির্ভরতা কমাতে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন চাষিরা।
রবি মৌসুমে অন্য ফসল বাদ দিয়ে পেঁয়াজের আবাদ বাড়ানো সম্ভব নয়, তাই সরকার গ্রীষ্মকাল অর্থাৎ খরিপ মৌসুমে পেঁয়াজ আবাদের হাতে নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন এলাকার কৃষকেরা। মসলাজাতীয় ফসল পেঁয়াজ চাষে ঘুরছে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় খরিপ মৌসুমে দুই ধাপে মোট ১১০ জন কৃষককে পেঁয়াজবীজ ও উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ২০২২-২৩ অর্থবছরের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় জমিতে চাষ, সার প্রয়োগসহ সার্বিক বিষয়ে ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রত্যোককে কৃষকে দুই হাজার ৮০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এরপর চারা রোপণের পর অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। এতে আলোর মুখ দেখতে শুরু করে প্রকল্পটি।
উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি শ্রী রাম চন্দ্র রায় বলেন, জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজে এখন গুটি আসতে শুরু করেছে। এন-৫৩ জাতের এই পেঁয়াজ ৬ থেকে ৮টিতেই এক কেজি হয়। আকারে বড় হওয়ায় বিঘাপ্রতি ১৫০-২০০ মণ পেঁয়াজ হবে বলে আশা করছেন।
একই ইউনিয়নের পাঠকপাড়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, এই সময়ে পেঁয়াজ হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম বেশ ভালো।
শুধু কৃষক শ্রী রাম চন্দ্র রায় ও আমিনুল ইসলাম নন, ফুলবাড়ী উপজেলায় এখন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন অনেকেই। ভালো ফলন পাওয়ায় কৃষকের আগ্রহও বাড়ছে দিন দিন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানুর রহমান বলেন, আমদানি নির্ভরতা কমাতে স্থানীয়ভাবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ বৃদ্ধি করতে তারা কাজ করছেন। তাদের সার্বিক সহযোগিতায় উৎপাদিত গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আকার, স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিমান অনেক উন্নত। মসলা জাতীয় ফসল হিসেবে পেঁয়াজের ব্যবহার এক অপরিহার্য উপাদান। বাংলাদেশে বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা ৩৫-৩৬ লাখ টন। কিন্তু উৎপাদিত হয় ৩২ লাখ টন। এ ছাড়া পচনশীল এই ফসল সঠিক সংরণের অভাবে নষ্ট হয়। এই ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। রবি মৌসুমে অন্য ফসলকে বাদ দিয়ে পেঁয়াজের আবাদ বাড়ানো সম্ভব নয়, তাই সরকার গ্রীষ্মকাল অর্থাৎ খরিপ মৌসুমে পেঁয়াজ আবাদের কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পেঁয়াজের আমদানি কমাতে ভবিষ্যতে এই উপজেলায় বেশি পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, এ বছর উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য মাঠপর্যায়ে কৃষি অফিসের প্রত্যেক কর্মকর্তা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ ব্যাপক অবদান রাখবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিযাজ উদ্দিন বলেন, অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে না লাগে, সেজন্য গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ খুবই উপযোগী পদক্ষেপ। ভবিষ্যতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের পরিধি বাড়লে আমদানী নির্ভরতা কমে আসবে।