• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২১-১২-২০২২, সময়ঃ সকাল ০৯:২২

আর্জেন্টিনার জনসমুদ্রে বিশ্বজয়ীরা

আর্জেন্টিনার জনসমুদ্রে বিশ্বজয়ীরা

স্পোর্টস ডেস্ক ►

আর্জেন্টিনায় তখন গভীর রাত, ঘড়ির কাঁটায় আড়াইটা বাজে। এই রাতে বিশ্বকাপজয়ীদের বহনকারী বিমানটি বুয়েন্স আয়ার্সের এজেইজা বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে। কিছুণের মধ্যে হাসিমুখে সোনালি ট্রফি হাতে বিমান থেকে বেরিয়ে আসেন লিওনেল মেসি, তাঁর পেছনে কোচ লিওনেল স্কালোনি। ৩৬ বছর পর স্বপ্নের এই বিশ্বকাপটা যিনি আনলেন, সেই মহানায়কের অন্যরকম পদার্পণ হলো জন্মভূমিতে। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে মেসি ধীর পায়ে গিয়ে ওঠেন ছাদখোলা বাসে। পেছনে ছিলেন বিশ্বজয় করে আসা আর্জেন্টিনার বাকি ফুটবলাররা। রোববার রাতে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারানোর যে উৎসব শুরু হয়েছিল, বিজয়ী বীরদের পেয়ে তা যেন পূর্ণতা পেল।

ফাইনাল শেষ হওয়ার পর থেকেই উৎসবে মাতোয়ারা পুরো আর্জেন্টিনা। এর মধ্যেই মেসিদের আগমনের ণ ঘনিয়ে আসায় ভিড় বাড়তে থাকে এজেইজা বিমানবন্দরে। বুয়েন্স আয়ার্সের রাস্তাগুলোতে তো ফাইনাল শেষ হওয়ার পর থেকেই মানুষ গিজগিজ করছিল। বিজয়ী বীরদের বরণ করে নিতে সেই ভিড় জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মেসিদের বহনকারী বাসটি রাস্তায় নামতেই জনতা জয়ধ্বনি দেওয়া শুরু করে। গানে-স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো রাজধানী। পুরো শহর যেন রাস্তায় নেমে আসে। ১৯৮৬ সালে দিয়েগো ম্যারাডোনা নিয়ে এসেছিলেন এই বহু আরাধ্য ট্রফি। ৩৬ বছর পর যাঁরা তাঁদের এই উৎসবের উপল এনে দিয়েছেন, তাঁদের একনজর দেখার জন্য মরিয়া ছিল তারা। শুধু তাই নয়, আতশবাজির আলোয় রঙিন হয়ে উঠছিল আকাশ, লাখো কণ্ঠের গান ও ড্রামের তালে মুখর হয়ে উঠেছিল পুরো পরিবেশ।

এর মাঝে অবশ্য একটা দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছিল। শহর প্রদেিণর এক পর্যায়ে ছাদখোলা বাসে দলবেঁধে পাশাপাশি বসেছিলেন মেসি, ডি মারিয়া, ওতামেন্দি, ডি পল ও পারেদেস। তখন আচমকাই রাস্তার ওপর ঝুলে থাকা বেশ মোটা তার চলে আসে তাঁদের সামনে। মাথা নিচু করে সে তারের আঘাত থেকে নিজেদের রা করেন ফুটবলাররা। এর মাঝেই পারেদেসের মাথার টুপি তারের সঙ্গে লেগে পড়ে যায়, মাথায়ও কিছুটা আঘাত পেয়েছেন তিনি। তবে ভিডিওতে দেখা গেছে, বিষয়টি মজা হিসেবেই নিয়েছেন ফুটবলাররা। মেসিদের বহনকারী আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রীয় বিমানটি দোহা থেকে রওনা হয়ে রোমে যাত্রাবিরতি নেয়।

তাঁদের এজেইজা বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল বিকেলে। যে কারণে সোমবার দুপুর থেকেই অপোয় ছিলেন দেশবাসী। আর্জেন্টিনার স্থানীয় একটি সংবাদপত্র জানিয়েছে, ১ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ অ্যাপের মাধ্যমে মেসিদের বহনকারী বিমানের খোঁজখবর রাখছিলেন। গভীর রাতে তাঁদের সে অপোর অবসান ঘটে। বিমানবন্দরে নেমেই 'চ্যাম্পিয়ন' লেখা বাসে করে ফুটবলাররা বেরিয়ে পড়েন দেশবাসীর সঙ্গে উৎসবে শামিল হতে। সমর্থকদের ভিড় ঠেলে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে ছাদখেলা বাসটি। তাঁদের দেখে রাস্তার দু'পাশের মানুষ আনন্দে চিৎকার করতে থাকে। মেসিরাও তখন ট্রফি উঁচিয়ে ধরে আর্জেন্টিনার ফুটবলপাগল মানুষের আনন্দে সাড়া দেন। মেসিদের নিয়ে ছাদখোলা বাসটি যায় বুয়েন্স আয়ার্সের কেন্দ্রস্থল আইকনিক 'ওবেলিস্ক মনুমেন্ট'-এ। পুরো শহরের গন্তব্যও সেটাই। গতকাল দুপুরে (বাংলাদেশ সময় বুধবার গভীর রাত) এই ওবেলিস্কেই বিশ্বজয়ী ফুটবলারদের আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হবে। তবে রোববার ফাইনাল শেষে সেখানে উৎসব শুরু হয়ে গেছে, যা চলবে আরও ক'দিন। এ কারণে এক দিনের রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করেছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ।

শহর প্রদণি করে বিমানবন্দরের পাশে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের অনুশীলন সেন্টারে বিশ্রাম নেবেন মেসি-মার্টিনেজরা। এর পর দুপুরের দিকে শহরের কেন্দ্র ওবেলিস্ক স্কয়ারে যাবেন আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনায় যোগ দিতে। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আর্জেন্টিনার নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন বুয়েন্স আয়ার্সে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ সেখানে জড়ো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এজেইজা বিমানবন্দরের বাইরে আয়েরতন কেরদুকাস নামে ২৫ বছরের এক ছাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, 'আমরা সারারাত থাকব, আগামীকালও থাকব। আগামীকাল আমরা কোনো কাজ করব না। আমরা কিছু করব না। আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে ওবেলিস্কে যাব।' ৫৫ বছর বয়সী কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক আলেজান্দ্রা দিয়াজের কণ্ঠেও একই সুর, 'আর্জেন্টিনার প্রতি প্যাশন থেকে আমি এখানে এসেছি। আমি মেসিকে ভালোবাসি, পুরো দলকে ভালোবাসি।' এত লাখো মানুষের ভিড়েও ৪১ বছর বয়সী হ্যাভিয়ের মেরিনা মেসির সঙ্গে একটি ছবি তোলার উদ্দেশ্যে এসেছেন। তবে এখানে সফল না হলেও তিনি রোজারিওর ফুনেসে মেসির বাড়িতে যাবেন।


 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়