শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) ►
নীলফামারীর সৈয়দপুরে ধলাগাছ আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের ইট ব্যবহারসহ কাজের ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম করা হয়েছে। দূর্নীতি করে নামকাওয়াস্তে কাজ করায় রাস্তা টেকসই হওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কর্তৃপক্ষকে জানালেও ব্যবস্থা না নেয়ারও অভিযোগ মিলেছে।
আজ দুপুরে সরেজমিন গেলে আবাসনবাসী অভিযোগ করেন, হেরিং বোন রাস্তার সোলিংয়ে পর্যাপ্ত বালু বা মাটি দেয়া হয়নি। তার উপর দেড় দুই ইঞ্চি ফাঁকা করে কোন রকমে ইট বসানো হয়েছে। আর ফাঁকগুলো বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে।
সোলিংয়ের উপরে বিছানো ইটের মধ্যে সামান্য পরিমাণে এক নম্বর দেয়া হলেও সিংহভাগই দুই নম্বর। কিছু কিছু আরও নিম্নমানের।আঁকাবাঁকা ও ভাঙ্গাচুড়া। তারা উপস্থিত সকলের সামনে ইট উঠায়ে ও বালু সরায়ে অভিযোগের প্রমান দেন। এতে প্রত্যক্ষ সত্যতা মেলে।
মেহেদি নামে এক যুবক বলে, কাজ ভালো না হওয়ায় আবাসনের লোকজন মিস্ত্রিকে নিষেধ করলেও কর্ণপাত করেনি বরং তড়িঘড়ি করে শেষ করায় ব্যাস্ত। ফলে রাস্তার স্থায়িত্ব নিয়ে আশংকা প্রকাশ করে সে। এমনকি আবাসনের নতুন ঘরগুলো তৈরীতেও ব্যাপক লুটপাট করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করে।
সে আরও বলে, ঘরের কাজে দূর্নীতি করা তারাগঞ্জের দুলাল মিস্ত্রিকে দিয়েই রাস্তাটা করা হচ্ছে। এতে কাজ নিম্নমানের হওয়াই স্বাভাবিক। এই অনিয়মে সবাই জড়িত। তাই কেউ কাজটা দেখতেও আসেনি। ইঞ্জিয়ারও নাই, অফিসারও নাই। ঝটপট শেষ করেই পালাবে দুলালের লোকজন।
একইভাবে বৃদ্ধ বক্কর বলেন, রাস্তা দূর্বলভাবে করা হচ্ছে। বেশিদিন টিকবেনা। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই ইট বালু ধ্বসে রাস্তা ভেঙে যাবে। ইটগুলো যেমন মিশাল, তেমনি আঁকাবাঁকা ও মাথা, কোনা, সাইড ভাঙ্গা। রাস্তা এখনই উঁচুনিচু হয়ে গেছে। মেম্বার চেয়ারম্যানকে জানালে তারা বলছেন পিআইও কাজ করছে তাকে বলেন। অথচ কাজ প্রায় শেষ। এখনও পরিষদ বা অফিসের কেউ আসে নাই।
আরেক বয়স্ক বাসিন্দা নেয়ামত বলেন, কাকে বলবো, কে সমাধান করবে? খারাপ কাজের জন্য রাস্তাটা নষ্ট হলে দূর্ভোগে তো পড়বো আমরাই। তাতে কার কি, তাইনা? এর আগেও যে রাস্তাটা সিসি ঢালাই করা হয়েছিল। তা এখন ভেঙে চৌচির। প্রধানমন্ত্রী ভুমিহীনদের জন্য মাথাগোঁজার ঠাই করে দিয়েছেন আশ্রয়ন নির্মানের মাধ্যমে। এটা আমাদের জন্য তাঁর ভালবাসা।
অথচ ঠিকাদার দুইনম্বরী করে কাজের মান খারাপ করছে। ফলে নির্মিত ঘর রাস্তা টেকসই হচ্ছেনা। কমজোরি হওয়ায় অল্পদিনেই নষ্ট হচ্ছে। এতে সরকারের বদনাম হচ্ছে। তাই এব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে নজরদারী ও কার্যকর তদারকির দাবী জানান তিনি। অভিযোগ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ করেন তিনি।
দায়িত্বরত মিস্ত্রি লিটন বলেন, পিআইও দুলাল মিস্ত্রিকে কাজটা দিয়েছে। সে আমাকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে। মাত্র ৪ হাজার ইট দেয়া হয়েছে। এটা সাত ফুট প্রশস্ত করে যতদূর সম্ভব সেটুকুু লম্বা করা হবে। প্রায় ৬০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে বলে জানান। তবে কত টাকার কাজ তা জানেননা।
ইটের ক্ষেত্রে এক নম্বরের সাথে দুই নম্বর দেয়ার কথা শিকার করে লিটন বলেন, যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবেই করছি। সোলিংয়ে ইট কম লাগানোর জন্য বেশি ফাঁক করে বসিয়ে বালু দিয়ে ফাঁকাস্থান ভরাটের ব্যাপারে বলেন, ওইটুকু গ্যাপ না দিলে বালুতে ইট বসবেনা। তাই দিয়েছি।
দুলাল মিস্ত্রি জানান, এই কাজের সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নাই। সম্ভবত ইউপি চেয়ারম্যান কাজটা লিটন মিস্ত্রিকে দিয়ে করছেন। কোন প্রকল্পের তা সঠিক বলতে পারবোনা। তবে টিআর প্রকল্পের বরাদ্দে হতে পারে। লিটন মিস্ত্রি আমার কথা বলে থাকলে মিথ্যে বলেছে।
পিআইও অফিসের একটি সূত্র মতে, ৫০ হাজার টাকার টিআর প্রকল্পের বরাদ্দ দিয়ে আপাতত ১০০ মিটার রাস্তা হেরিং বোন করা হবে। পরে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে। ইউপি চেয়ারম্যান ওই প্রকল্পের সভাপতি।
কামারপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, ওই রাস্তার কাজ সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। আমি কাউকে দিয়েই করছিনা। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাই ভালো জানেন। টিআর বা কাবিটা প্রকল্প না অন্য কোন বরাদ্দ তাও বলতে পারছিনা।
এদিকে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) আবু হাসনাত সরকার বলেন, রংপুর বিভাগীয় কর্মকর্তার বিশেষ বরাদ্দে ওই কাজ হচ্ছে। প্রকল্প ও বরাদ্দ নিয়ে এমন তথ্য বিভ্রাট কেন জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দেননি। একইভাবে নিম্নমানের ইট ও কাজের অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেনা প্রশ্নে তিনি নিরবতা পালন করেন।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান বলেন, আমি সদ্য এখানে যোগদান করেছি। বিষয়টি ঠিকভাবে অবগত নই। তবে যেহেতু জানলাম খোঁজ নিচ্ছি। অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।