• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২৮-১১-২০২২, সময়ঃ বিকাল ০৪:২০

কাঁচা মাছ-মাংস, জীবন্ত পোকামাকড় খায় সৈয়দপুরের প্রতিবন্ধী সেরাজুল 

কাঁচা মাছ-মাংস, জীবন্ত পোকামাকড় খায় সৈয়দপুরের প্রতিবন্ধী সেরাজুল 

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর ►

কাঁচা শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ জীবন্ত পোকামাকড় এমনকি সাপও অনায়াসে চিবিয়ে খেতে পারে প্রতিবন্ধী যুবক সেরাজুল। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এসব নিয়মিত না হলেও প্রায়শই খায় সে। উদরপূর্তি বা ক্ষুধা মেটাতে নয় বরং লোকজনকে বিনোদন দিতে সে এই অপ্রচলিত খাদ্যাভ্যাসে বেশ পটু। বিশেষ করে কেউ বাজি ধরলে সেই টাকাটা পেতে প্রাত্যহিক খাবারের মতই অবলীলায় খেয়ে ফেলে মূহূর্তে।

তার খাবার তালিকায় যেমন নিত্য সবজি আলু, পটল, বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়স, বাঁধাকপিসহ সব ধরণের শাক রয়েছে। তেমনি রয়েছে সুয়ো পোকা, ঝিঁ ঝিঁ পোকা, তেলাপোকা, মাটিয়া পোকা, ঘাসফড়িঙ, কেঁচো, জোঁক, ব্যাঙ, বিভিন্ন  মাছ-মাংস। সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে সাপ। বিষধর নয় এমন য়েকোন সাপ সে এখন পাইলেই ধরে কাঁচাই চিবিয়ে খায়। যা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এলাকায়। 

এই আজব খাদকের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কিসামত কাদিখোল ডাক্তারপাড়ায়। সেরাজুল ওই গ্রামের মৃত মনসুর আলীর ছেলে। রবিবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধায় পোড়ারহাটে দেখা হয় সে সাথে। এসময় সে তার কার্যক্রম দেখাচ্ছিল। সামনে সব বয়সী মানুষের উপচেপড়া ভিড়। জানায় ছোট বেলা থেকেই খেলারছলেই কাঁচা তরিতরকারি খাওয়া শুরু। পরে কিশোর বয়সে এসে নিজ আগ্রহেই বিভিন্ন পোকামাকড় ও কাঁচা মাছ ও মুরগী, গরু, ছাগলের মাংস খাওয়ার চেষ্টা। 

পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় অনেকেই এটা সেটা খাওয়া নিয়ে বাজি ধরে। এতে বাজির টাকা পেতে নতুন নতুন পোকা খাই। সর্বশেষ সাপও খেয়েছি। এখন লোকজন শুধু সাপ খাওয়ার জন্যই বলে। কিন্তু সাপ পাওয়াটাই দূরহ। তারপরও পাওয়ামাত্রই মানুষ খবর দেয় এবং খাওয়ার আয়োজন করে। অনেকদিন থেকেই এসব খাচ্ছি। 

সেরাজুল আক্ষেপ করে বলে, আমি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। তবুও দিনমজুরী করে কোন রকমে সংসার চালাই। তাই পাশাপাশি এই কাজ করে কিছু আয়ের চেষ্টা করি। কিন্তু লোকজন মজা পাইলেও টাকা দিতে চায়না। অথচ কোন জাদর আয়োজনে বা স্টেট শো করে এসব দেখালে অনেক টাকা দেয়। একই কাজ আমি গ্রামে করলেও মূল্যায়ন নাই। সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা অনুদান দেয়না চেয়ারম্যান মেম্বাররা। ফলে অনেক কষ্টে দিন কাটে।

সে আরও জানায়, এসব খাওয়ায় প্রথম দিকে একটু খারাপ লাগলেও এখন আর কোন ধরণের সমস্যা হয়না। অভাস হয়ে গেছে। হজমও হয় স্বাভাবিকভাবে। কাঁচা সবজি খাওয়ায় একটু বেশিই পুষ্টি মেলে। তাই অন্যদের তুলনায় আমার শরীরে শক্তি বেশি এবং সুস্থতাও তুলনামূলক ভালো। আগামীতে সাপ খাওয়ার বিষয়টাই বেশি গুরুত্ব দিতে চায়। যাতে বড় কোথাও কাজের সুযোগ পাওয়ার আশা তার। 

এলাকার বৃদ্ধ রজব উদ্দিন (৬৫) বলেন, ছেলেটা ব্যতিক্রমী কাজ করে মানুষদের আনন্দ দেয়। আমরা তার এমন খেলায় খুব মজা পাই। তবে সে অনেক গরীব। তার এই কাজ এগিয়ে নিতে সরকারী বেসরকারি সহযোগীতা করা হলে আরও ভালো জায়গায় যেতে পারবে। এতে এই প্রতিভাটা আরও বিকশিত হবে। 

একইভাবে মন্তব্য করেন মানিক সরকার (৩২)। তিনি বলেন, ছেলেটার চেষ্টা আছে। নতুন নতুন কিছু করার জন্য সবসময় আগ্রহী। কিন্তু দরিদ্র হওয়ায় এবং কোন সহযোগীতা না পাওয়ায় বেশ কষ্ট করে। তারপর মানুষের চাহিদা মেটাতে দিনমজুরী করে ঘরে ফেরার পর বিকালে বা রাতে তার কৃতিত্ব প্রদর্শন করে। এতে ছোট বড় সবাই বেশ আনন্দ পায়।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়