মাধুকর ডেস্ক ►
শুধু উল্ক্কার মতো ছুটে চলা। পেছনে তাড়া করা প্রতিপক্ষের তিন খেলোয়াড়, সামনে দাঁড়িয়ে গোলরক্ষক। কোনো কিছুই আটকাতে পারেনি আলভারেজকে। তাঁর স্নায়ুতে তখন যেন প্রলয়ের ঝড়, শরীরে যেন ভর করেছে উসাইন বোল্ট! মাঝমাঠে মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে আলভেরেজের গোলেই কেঁপে ওঠে লুসাইল।
আনন্দের স্পন্দনে মরুর নিঝুম আকাশেও আর্জেন্টিনার জয়ধ্বনি। মেসির পেনাল্টি থেকে গোলের পর আলভারেজের ওই স্বপ্নের মতো গোল, যার ঘোর কাটতে না কাটতেই আরেকটি গোল সেই আলভারেজেরই। এমন শৌর্যের ম্যাচে ৩-০ গোলে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়েই ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। ইতিহাস বলে, এ নিয়ে ছয়বার বিশ্বকাপের ফাইনাল মঞ্চে লাতিনের এ দেশ। ইতিহাসের পাতায় কাল এটাও লেখা হয়েছে, এদিনের ম্যাচেই মেসি দেশের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১১ গোলের রেকর্ড গড়েছেন।
আসলে এদিন বেশ গুছিয়ে দল সাজিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন কোচ স্কালোনি। ৪-৪-২ ফরমেশনে আলভারেজ আর মেসিকে সামনে রেখে এগিয়েছিলেন। মাঝমাঠ থেকে এদিন কিছুটা উপরে উঠে খেলতে থাকেন মেসি। কিন্তু ম্যাচ শুরুর পর ক্রোয়াটরাই তাদের স্বভাবগতভাবে মাঝমাঠের বল দখলে বেশি মনোযোগী হয়। দারুণ সব পাসিং আর প্লেসিংয়ে ৩০ মিনিট পর্যন্ত ক্রোয়াটরাই এগিয়ে ছিল। বরং আর্জেন্টিনার সুযোগ ছিল কাউন্টার অ্যাটাকে। আর তেমনই একটি সুযোগ চলে আসে ম্যাচের ৩২ মিনিটে। বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়া আলভারেজকে আটকাতে গিয়ে লিভাকোভিচ ধাক্কা দিয়ে বসেন।
গগনবিদারী চিৎকারে লুসাইলের গ্যালারি রায় দিয়ে দেয়- ওটা পেনাল্টি! রেফারির মতও ছিল তাই। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল গ্রিপ করার সময় আলভারেজকে ধাক্কা দেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক। এদিন নিজে থেকেই বল কুড়িয়ে নিয়ে নিভুল পেনাল্টি কিক নেন। এ নিয়ে মেসির বিশ্বকাপে গোলের সংখ্যা ৯ (এই বিশ্বকাপে ৫), যা কিনা কোনো আর্জেন্টাইনের সবচেয়ে বেশি। আগের ৮টি ছিল বাতিস্তুতার। এদিন তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে সময় লাগেনি বেশি তাঁর।
একটি গোল খেয়েই যেন খেই হারিয়ে বসে ক্রোয়াটরা। ডিফেন্স ঢিলা দিয়ে আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করে। আর সে সুযোগেই মাঝমাঠ থেকে মেসির সেই মাপা পাস। তারপর আলভারেজ যে দৌড়টা দিলেন! ম্যাচের পর মিডিয়া সেন্টারে আর্জেন্টাইন সাংবাদিকরা বলাবলি করছিলেন- ছিয়াশি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনার মাঝমাঠ থেকে দৌড়ে ওই গোলটির সঙ্গেই কেবল আলভারেজের কালকের গোলটি তুলনা করা যায়।
যদিও ম্যারাডোনাকে প্রতিপক্ষের কয়েকজনকে কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছিল। আর এদিন আলভারেজ ভাগ্যবান এ জন্যই যে, ডি-বক্সে দুই ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বল ফের তাঁর কাছে চলে আসে। তার পরও আলভারেজের এই গতি আর রিফ্লেক্সে ভীষণ খুশি সে দেশের মিডিয়া। তারা আরও মুগ্ধ, এত দিনে মেসি অন্তত একজন সহকারী পেয়েছেন; পাস দিলে যিনি কিনা গোল করতে পারেন। আলভারেজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় গোলটিই যার উদাহরণ।
ডি-বক্সের বাইরে থেকে অন্তত ছয় ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান দিক থেকে যে পাসটি বাড়িয়েছিলেন মেসি, তা গোলমুখে ফেলতে বিন্দুমাত্র সংশয়ে ভুগতে হয়নি আলভারেজকে। মেসির এই ছন্দময় আর্জেন্টাইন ব্রিগেডকেই এবারের ফাইনাল ম্যাচেও দেখতে চান সবাই- তা ফাইনালের প্রতিপক্ষ যে-ই হোক না কেন।