• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৬-১১-২০২২, সময়ঃ দুপুর ০১:৩৮

গাইবান্ধায় মুগ্ধতা ছড়ালো নাটক ‘জগাই দাদা’

গাইবান্ধায় মুগ্ধতা ছড়ালো নাটক ‘জগাই দাদা’

কায়সার রহমান রোমেল ►

প্রখ্যাত ফরাসি নাট্যকার, অভিনেতা ও কবি মলিয়েরের ‘জর্জ ড্যান্ডিন’র রূপান্তর ‘জগাই দাদা’। নাটকটির রূপান্তর করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত নাট্যকার সঞ্চয় চট্টোপাধ্যায়। শনিবার (০৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ রূপান্তরিত নাটকটি মঞ্চস্থ হলো গাইবান্ধা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী গাইবান্ধা জেলা সংসদের আয়োজনে ভারতের রাজস্থানের রঙ্গ সংস্কার থিয়েটার গ্রুপের নবতম প্রযোজনা হিসেবে ইতোমধ্যে রংপুরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নাটকটির মঞ্চায়ন হয়েছে। তরুণ নাট্যকর্মী আর নির্দেশকের প্রয়াসটি সার্থক করতে অকান্ত পরিশ্রম করেছেন সব কলাকুশলী। নাটকের দৃশ্যগুলো দর্শকদের কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপনই তার বড় প্রমাণ।

মোনালিসা দাসের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় এবং ড. দেশরাজ মীনা’র উপদেশ ও প্রযোজনায় ‘জগাই দাদা’ নাটকে মঞ্চে অভিনয় করেছেন- শুভজিৎ সন্নিগ্রহী, প্রণয় বিশ্বাস, সৌভিক ঘোষ, কাকলি কোলে, শম্পা দাস, সুব্রত চট্টোপাধ্যায় ও মোনালিসা দাস। মঞ্চ সহায়তায় ছিলেন, আলো-দেশরাজ মীনা, আবহ- সমুদ্র সিংহ এবং আবহ নিয়ন্ত্রণ করেছেন সুরজিৎ সরকার।

দর্শকরা পিনপতন নিস্তব্ধতায় প্রায় দেড় ঘণ্টার নাটকটি উপভোগ করেন। নাটক শেষে তারা যেমন তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছেন, তেমনি বলেছেন দু’একটি গঠনমূলক কথাও। দর্শকদের মতে, নাটকটির পরিবেশনায় মঞ্চসজ্জা, আলোকসজ্জা, পোশাক, সংগীত, রূপসজ্জা ছিলো অত্যন্ত চমৎকার। অভিনয়ের দিক থেকে প্রধান চরিত্রগুলোর কুশলীরা যেমন বোদ্ধা শিল্পীর পরিচয় দিয়েছেন, ঠিক তেমনি অসাধারণ দতা দেখিয়েছেন নাটকটির সহযোগী চরিত্রের কুশলীরাও। সব মিলিয়ে একটি সুন্দর গল্পের মধ্য দিয়ে মঞ্চায়ন হয়েছে জগাই দাদা নাটকটির।

জগাই দাদা নাটকে জগাই এক অতি কর্মঠ, নিষ্ঠাবান, সৎ, পরিশ্রমী এবং সরল মনের মানুষ। নিজের পরিশ্রমে তার ইটভাটার ব্যবসাকে সে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে এক অতি উচ্চ জায়গায় নিয়ে গেছে। সফল ব্যবসাসূত্রে প্রচুর ধনসম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও তথাকথিত বংশগত আভিজাত্য বা বনেদীয়ানার ছাপ না থাকায় সাধারণ মানুষের কাছে জগাইয়ের যথোচিত গ্রহণযোগ্যতা ও সম্মান ছিলো না। বিপুল ধনসম্পদের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও এটাই ছিলো তার একমাত্র মনবেদনার কারণ। এর সহজ সমাধানের জন্য জগাই উচ্চ বংশমর্যাদাসম্পন্ন প্রতিপত্তিশালী এক অতি উচ্চবিত্ত পরিবারের কন্যার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। 

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের অতি উচ্চবিত্ত প্রতিপত্তিশালী ধনকুবের ব্যবসায়ী বরুণ সেনের আর্থিক অবস্থা তখন টলোমেলো। ক্রমশ লোকসানে ডুবতে থাকা ব্যবসাকে ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচতে স্ত্রী বিদিশা সেন ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুর পরামর্শে ধনকুবের বরুণ সেন অত্যন্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেও একমাত্র আদরের দুলালী অঞ্জলির সঙ্গে জগাইয়ের বিবাহ স্থির করে। পারিবারিক চাপে জগাইকে বিয়ে করে অঞ্জলিও খুশি হতে পারে না। উচ্চবংশের আদব-কায়দা সম্পর্কে অজ্ঞাত বংশমর্যাদাহীন, প্রেমের ব্যাপারে অনভিজ্ঞ, নীরস জগাই এর উপস্থিতি তার কাছে দড়ির ফাঁসের মতো একেবারে চেপে বসে। 

এই পরিস্থিতিতে এলাকায় রোমিও বলে পরিচিত সুযোগসন্ধানী নায়কদর্শন ক্যাসিক পরিস্থিতি উপযুক্ত সদ্বব্যবহারের জন্য তৈরী হয় স্যাঙাৎ স্বল্পবুদ্ধি গ্যারেজ মেকানিক লম্বুকে নিয়ে। প্রেমের সস্তা খেলা খেলে অঞ্জলিকে প্রেমের জালে ফাঁসাতে পারলে তার ধনকুবের বাবা ও স্বামী দুজনের থেকেই দাঁও মারা যাবে বলে সে ষড়যন্ত্রের জাল বোনে। 

শেষ পর্যন্ত এই কূট ষড়যন্ত্র কিভাবে ফাঁস হয় এবং অঞ্জলি ও তার উচ্চবংশমর্যাদার গর্বে ডগমগ, উদ্ধত বাবা ও মা বরুণ সেন ও বিদিশা সেনের দর্প কিভাবে চূর্ণ হয় এবং অঞ্জলি কিভাবে স্বামী জগাইয়ের আসল রূপটি চিনতে পারে তারই যবনিকা পতন হয় এই নাটকের শেষ দৃশ্যে।

শুরু থেকেই সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে নাটকটিতে একটি প্রাণবন্ত নাট্য-আবহ তৈরির। রূপান্তরের েেত্রও ভাষা ও কথ্যরীতির ব্যবহার বেশ চমৎকার বলেই মন্তব্য করেছেন দর্শকরা। সবমিলিয়ে ভারতের রাজস্থান থেকে গাইবান্ধা এসে দর্শকদের মুগ্ধ করেছে রাজস্থানের নাট্যদল রঙ্গ সংস্কার থিয়েটার গ্রুপ।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়