নিজস্ব প্রতিবেদক ►
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার শিশু অধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে দায়িত্ববাহক কর্মকর্তাদের সাথে শিশুদের সমস্যা বিষয়ক মতবিনিময় সভা বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ে শিশু অধিকার বাস্তবায়নকারী শিশু সংগঠন ন্যাশনাল চিলড্রেন'স টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) গাইবান্ধা জেলা কমিটির আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসন গাইবান্ধা ও সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় উক্ত মতবিনিময় সভা সম্পন্ন হয়।
এনসিটিএফ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও গাইবান্ধা জেলা কমিটির সভাপতি কে.এইচ. খান রোহানের সভাপতিত্বে সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জেলা প্রশাসকের পক্ষে শিশুদের সমস্যার কথা শোনেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার মাহাতো।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি মেডিকেল অফিসার ডা. কে.এম আফরোজ জাহান, জেলা শিক্ষা অফিসার মো. এনায়েত হোসেন, গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. খলিলুর রহমান, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান, জেলা মাদকদ্রব নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আবু নায়েম মোঃ কাজী নুরুন্নবী, সদর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার নাসির উদ্দিন শাহ, সাদুল্লাপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদ জহুরুল কাইয়ুম, প্রেসক্লাব গাইবান্ধা সভাপতি কে. এম রেজাউল হক, দৈনিক গণমানুষের আওয়াজ পত্রিকার শাজাহান সিরাজ, এনসিটিএফ এর সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান মুছা, মেহেদী হাসান অন্তর, সৃজনশীল গাইবান্ধার সভাপতি মেহেদী হাসান।
সভায় এনসিটিএফ এর সাধারণ সম্পাদক নুসরাত জামান লামিয়ার সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এনসিটিএফ এর সাধারণ সম্পাদক তাওফিক ওমর হিমন।
মতবিনিময় সভায় শিশুরা ইস্যু ভিত্তিক সমস্যা ও তা সমাধানের জন্য সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন। বাল্যবিবাহ, শিশুদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, জন্মনিবন্ধন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও বিনোদন সম্পর্কিত ১৮টি সমস্যার বিপরীতে ২৯টি সুপারিশ করে শিশুরা।
এসময় শিশুরা বলেন, গত নয়মাসে গাইবান্ধা জেলার শিশু জেলার প্রায় ২০০ জন শিশুর মতামতের উপর একটি অনলাইন জরিপ, এলাকা ভিত্তিক ফিল্ড মনিটরিং ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদনের উপর মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। যেখানে শিশুরা তাদের মতামত প্রদান করে। তাদের মতামতের আলোকে আজকের সংলাপে সুপারিশমালা উপস্থাপন করা হলো।
শিশুদের সুপারিশমালায় উল্লেখযোগ্য ছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে শিশু, তরুণ ও অভিভাবকদেরকে সচেতন করা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় শিশু সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। দূর্যোগপ্রবণ এলাকায় শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা। জলবায়ু বিষয়ক নীতিনির্ধারণী ফোরামে শিশুদের অংশগ্রহণ ও তাদের মতামত গ্রহণ করা। জেলায় বাল্য বিবাহ রোধে কিশোর-কিশোরী ও অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করা। সরকারি টোল ফ্রি নাম্বার ৩৩৩, ৯৯৯ এবং ১০৯ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত কারণে ব্যবস্থা গ্রহণ। বাল্যবিবাহ হ্রাসকরণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের সাথে স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনকে অন্তর্ভুক্ত করা। শিশুর জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম সহজ করা। স্কুল কলেজ শুরু ও শেষ হবার সময়ে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য রেম্প সিড়ি স্থাপন করা। শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা। শিশু আইন-২০১৩ এর বিধানগুলো প্রতিপালন করা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অবৈধ ট্রাক্টর ও কাকড়ার দিনের বেলায় চলাচল বন্ধ করা। স্কুল কলেজের সামনে স্পীড ব্রেকার নির্মাণ ও তা রং দিয়ে চিহ্নিত করা। অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা শিশুদের নিকট বিড়ি সিগারেট মাদক বিক্রি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। চরাঞ্চলে শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি।
সভার শেষে শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উপলক্ষে চরাঞ্চলের শিশুদের অংশগ্রহণে রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ৩ জন শিশুর মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিরা।
মতবিনিময় সভায় চরাঞ্চলের শিশু, এতিমখানা নিবাসী শিশুসহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ জন শিশু ও ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অংশগ্রহণ করেন।