ফুলছড়ি প্রতিনিধি ►
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের আবার ভোটগ্রহণ আগামীকাল বুধবার। নিরুত্তাপ এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে প্রার্থীরা। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনতে শেষ মুহুর্তে প্রার্থীরা তৎপর হলেও আগ্রহ নেই তাদের। ১২ অক্টোবরের একই সাথে পুরো আসনের নির্বাচন বন্ধ, ইভিএম নিয়ে ভোটারদের অনিহা ও নির্বাচন কমিশনের প্রচার-প্রচারণা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
তবে ভোট মানেই উৎসব ও আমেজ হলেও গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে এটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বিপুল পরিমান অর্থ খরচ করেও গত ১২ অক্টোবরের নির্বাচনের ফলাফল পায়নি প্রার্থীরা। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় অনেকে ভোট দিতেও পারেনি। আর যারা কাজ-কর্ম ফেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন তারাও পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী দেখতে পারেনি। ভোটে অনিয়ম দেখে মাঝপথে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
পরবর্তীতে তদন্ত শেষে ৬ ডিসেম্বর আবারও ভোটের তারিখ ঘোষণা করে ইসি। সে অনুযায়ী আগামী ৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের পুনরায় ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে।
পুনরায় তারিখ নির্ধারণের পর ১৪ ডিসেম্বর থেকে প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। প্রতিদ্বন্দ্বি ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রথম দিন থেকেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন।
এরপর ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবর রহমান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের কুলা প্রতীকের প্রার্থী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম প্রচারণা শুরু করেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন কি, থাকবেন না, এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী এ্যাডভোকেট গোলাম শহীদ রঞ্জু। শেষ পর্যন্ত দলীয় চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তে প্রচারণা শুরুর এক সপ্তাহ পর প্রচারণায় নেমে পড়েন তিনি। নির্বাচনে অপর প্রতিদ্বন্দ্বি আপেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ্জ্জুামান নিশাদ গত ২৫ ডিসেম্বর বগুড়া প্রেসকাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপনির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুনরায় তারিখ নির্ধারণের পর প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা ফের কোমড় বেঁধে মাঠে নেমে পড়েন। সরকারি দলের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপনের তোড়জোড় ছিল বেশি। নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল ও সভা-সমাবেশ করেন। জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী গোলাম শহীদ রঞ্জু শেষ মুহুর্তে প্রচারণায় নিজেকে জোরালো করে কর্মীদের চাঙা করেছেন। অন্য দুজন প্রার্থীও গণসংযোগ করেছেন।
উপনির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মাতামাতি থাকলেও যাদেরকে ঘিরে এতো আয়োজন সেই ভোটারদের ভোট নিয়ে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ফুলছড়ি-সাঘাটায় ভোট নিয়ে এমন অনাগ্রহ আগে কখনো দেখা যায়নি। অথচ ১২ অক্টোবরের নির্বাচনেও ছিল উৎসবের আমেজ, ছিল উত্তাপ উত্তেজনা। এখন চিত্র পাল্টে গেছে। একদিন পরেই ভোট হলেও এ নির্বাচন সাধারণ মানুষকে এখনও নাড়া দিচ্ছে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর ফুলছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘এ অঞ্চলের ভোটাররা অসচেতন। তারা ইভিএম সম্পর্কে তেমন অবগত নন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ইভিএম ও ৪ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রচার-প্রচারণা কম হয়েছে। তাই এবারের ভোটে ভোটারদের উপস্থিতি কম হতে পারে।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভোট নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের সংশয়ের কোন কারণ নেই। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে সবধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, ইভিএম ও নির্বাচন সম্পর্কে সচেতন করতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনী এলাকায় মাইর্কিং করা হয়েছে। আশা করছি ভোটার উপস্থিতি ভালো হবে।’
উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন নৌকা প্রতীক, জাতীয় পার্টির এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু লাঙ্গল প্রতীক, সৈয়দ মো. মাহবুবুর রহমান ট্রাক প্রতীক ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কুলা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে আপেল প্রতীকের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাঘাটা উপজেলার ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ আসন। সাঘাটা উপজেলায় ২ লাখ ২৫ হাজার ৭০ জন এবং ফুলছড়ি উপজেলায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৩ জনসহ এ আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ১৬০ জন।