সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর ►
অদম্য ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস আর মনোবল কাজে লাগিয়ে গৃহিণীর পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন দিনাজপুরের খানসামার মোছাঃ আরিফা খাতুন (৪০)। সফল নারী উদ্যোক্তা হিসাবে জয়ীতা পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। সফল এই নারী উদ্যোক্তা উপজেলার গোবিন্দপুর পানুয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা। তাঁর স্বামী মোহাম্মদ আলী সিদ্দিক পেশায় একজন নেট ব্যবসায়ী।
জানা যায়, এসএসসি পরীক্ষার আগেই ২০০০ সালে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর ২০০১ সালে এসএসসি ও ২০০৩ সালে এইচএসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। পরে গৃহিণী হিসেবে কেটে গেছে অনেক সময়। ছোটবেলা থেকেই কিছু করার ইচ্ছাশক্তি থেকেই ২০০৯ সালে ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাঁর দেবরের দেওয়া একটি সেলাই মেশিন দিয়ে তিনি নিজের বাড়িতে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বিভিন্ন ধরনের সেলাই কাজ শুরু করেন।
সময় যতই ঘনিয়ে যায় ততই তার কাজের চাপ বাড়তে থাকে। সেজন্য ২০১৫ সালে তাঁর বাড়ির পার্শ্বেই একটা দোকান ভাড়া নিয়ে আরো কিছু সেলাই মেশিন ক্রয় করে কাজের পরিসর বৃদ্ধি করেন। জয়িতা সেন্টার নামে সেই দোকানে এখন ৩জন কর্মচারী। যা থেকে খরচ বাদে প্রতি মাসে তাঁর আয় হয় ১৫-২০ হাজার টাকা। এতে সংসারে যেমন ফিরেছে স্বচ্ছলতা তেমনি এলাকার সবার কাছে তিনি প্রশংসিত।
কয়েক বছর পূর্বে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ব্লক-বাটিক, নকশিকাঁথা ও সেলাই বিভিন্ন নকশার প্রশিক্ষণ করেন আরিফা আক্তার। পরে নানা সময়ে প্রায় ৯০০-১০০০ জন নারীকে এসব প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী গড়ে তুলতে সহযোগিতা করেন তিনি। এই নারীরা আজ নিজ সংসারে বোঝা না হয়ে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলতা নিয়ে এসেছেন। ফলে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
এসব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে গত কয়েক বছর বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে পুরষ্কৃত হন তিনি। এছাড়াও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কাজে আরিফা'র রয়েছে সরব উপস্থিতি। ব্রাকের পল্লী সমাজ নামে একটি সংগঠন এর সভাপতি হিসেবে তিনি এলাকার মানুষের বিভিন্ন বিপদেআপদে ও সামাজিক সমস্যায় এগিয়ে আসেন।
সফল নারী উদ্যোক্তা আরিফা খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সংসারের বোঝা হয়ে না থেকে ইচ্ছাশক্তি থেকেই সেলাই কাজ শুরু করেছি। যা থেকে নিজেও স্বাবলম্বী হয়েছি অন্যদেরও উৎসাহিত করতেছি। তবে সহায়তা পেলে এই প্রশিক্ষণ কাজ ব্যাপক পরিসরে করা যাবে বলে জানান।
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা পারভীন বলেন, আরিফা উপজেলার নারীদের মডেল। তাঁর এসব কাজ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেক নারীই সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।