ভবতোষ রায় মনা ►
প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন তরকারির সঙ্গে বড়ার ব্যবহার হচ্ছে। যেকোনো তরকারি বড়ার গুণে রান্নার স্বাদ বদলে দেয়। ম‚লত খেসারির ডাল দিয়ে তৈরি হয় এই বড়া, আর তা তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাইবান্ধার খামার বোয়ালী গ্রামের কারিগররা। বছরের অন্যান্য সময়ে বড়া তৈরি হলেও শীতকালে দাহিদা বেশি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে এখানকার তৈরি ডালের বড়া। বড়া তৈরির কারিগরদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা বিসিক কর্মকর্তা।
ভোরের আলো ফোঁটার পরপরই ব্যস্ত হয়ে পড়েন গাইবান্ধা সদরের খামার বোয়ালী গ্রামের সাহাপাড়ার মানুষ। মাসকলাই ডাল-চাল রাতে একপি পাত্রে ভিজিয়ে রাখা হয়। তা সকালে যন্ত্রচালিত মেশিনে ভাঙ্গনো (গুঁড়া) করার পর তা হাত দিয়ে পাত্রের মধ্যে ফেটিয়ে ছোট ছোট বড়া বানিয়ে কাপড়ের ফ্রেমে রাখা হচ্ছে। তার পর দু’একদিন রোদে শুকিয়ে নেওয়ার পর শুকনো বড়া বাড়ি থেকেই খুচরা ও পাইকারী বিক্রি করা হয়। বড়া তৈরি ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত এ গ্রামের নারী-পুরুষরা। অন্যান্য মৌসুমে বড়া তৈরি হলেও শীতে দম ফেলার সময় নেই কারিগরদের। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছেন এ ডালের বড়া।
১২০ টাকায় ১ কেজি মাসকলাই ডালে বড়া উৎপাদন হয় তিনপোয়া। শুকনো বড়া পাইকারী ভাবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। সাহাপাড়া গ্রামের প্রায় ১৫টি পরিবার এ পেশার সাথে জড়িত। একেকটি পরিবার প্রতিদিন ১ মণ ডালের বড়া তৈরি করে থাকে। ডালসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়ায় লাভ কম হয়। আগে যাতা ও শিলপাটায় ডাল পিসিয়ে বড়া তৈরি করা হতো। এতে পরিশ্রম আর অনেক সময় ব্যয় হয়। এখন আধুনিক যন্ত্রে গুড়া করা হচ্ছে। এতে সময় কম লাগছে।
কারিগররা জানান, দাম ভালো থাকলেও ডালসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়ায় লাভ কম হয়। এরপরও বংশপরম্পরায় পেশাকে টিকিয়ে রাখা, বাপ-দাদারা বড়া তৈরি করত এখন তারা করেন, তাদের কাজ দেখে নাতি-পুতিরা বড়া তৈরির কাজ করে। শীতের এ সময় বড়ার চাহিদা বেশি, তাই অনেক ভালোভাবেই সংসার চলে, আর বাকি সময় অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের। আর্থিকভাবে সহযোগিতা করলে এ পেশাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো দাবি তাদের।
সাহাপাড়া গ্রামের বড়া তৈরির কারিগর লক্ষী রানী সাহা বলেন, এ গ্রামে বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই শ^শুর বাড়ির লোকজনের সাথে ডালের বড়া তৈরির কাজ শিখে গেছি। এখন তাদের সাথে বড়া তৈরি করছি। স্বামী এ ব্যবসা করেই সংসার চালান।
একই গ্রামের নারায়ন সাহা বলেন, বাপ-দাদার এটা জাতিগত ব্যবসা। এ পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমরাও ডালের বড়া তৈরিকে পেশা হিসেবে নিয়েছি। শীতের ৬ মাস ডালের বড়ার ব্যবসা খুব ভালো চলে। এ ৬ মাসের বড়ার বিক্রির অর্থ দিয়ে বাকী সময়গুলোও ভালোভাবে সংসার চলে আমাদের। বোয়ালী গ্রামের স্বপন সাহা বলেন, বড়া তৈরির বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়ায় লাভ কম হয়। তারপরেও বংশ পরম্পরায় বাপ-দাদার পেশাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তারা। স্বল্প সুদে সরকারি ঋণ পেলে আমরা আরও বেশি বড়া তৈরি করতে পারতাম।
ক্রেতা মিলন মিয়া বলেন, বোয়ালী গ্রামে তৈরিকৃত ডালের বড়াগুলো খুব ভালো ও রান্নার পর খাতে খুব সুস্বাদু। এখানকার বড়া জেলার পাশাপাশি অন্য জেলাতেও বিক্রি হচ্ছে। বিদেশে যারা যাচ্ছে তারাও বোয়ালীর ডালের বড়া নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার আত্বীয়-স্বজনরাও এ বড়া নিয়ে যাচ্ছে।
বিসিক গাইবান্ধার মহাব্যবস্থাপক রবীন চন্দ্র রায় বলেন, যদি কেউ আগ্রহী হয়, গাইবান্ধা বিসিক তাদের পাশে থাকবে এবং এই শিল্পকে ছড়িয়ে দিতে সার্বিক সহযোগিতাও করা হবে। বড়া তৈরির কারিগরদের স্বল্পসুদে ঋণ দেয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।