• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৮-৯-২০২২, সময়ঃ সকাল ০৯:২৩
  • ২০৭ বার দেখা হয়েছে

তিস্তা গিলে খাচ্ছে আমন ক্ষেত

তিস্তা গিলে খাচ্ছে আমন ক্ষেত

এ মান্নান আকন্দ, সুন্দরগঞ্জ ►


বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার হরিপুর,  শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে তীব্র আকারে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত দেড় মাসের ব্যবধানে কমপক্ষে ১৫০টি পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পাশাপাশি উঠতি আমন ক্ষেতসহ নানা প্রজাতের ফসলি জমি গিলে খাচ্ছে তিস্তা। হতিমধ্যে ৭০০ হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। হুমকির মুখে ৫০০ পরিবার এবং ১ হাজার হেক্টার ফসলি জমি। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভাবে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহন করেও ঠেকাতে পারছে না তিস্তার ভাঙন।
উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, শান্তিরাম ও কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তানদী। প্রতিবছর বন্যার সময় গড়ে তিস্তার ভাঙনে কমপক্ষে ৮০০ হতে ১ হাজার পরিবার নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। বাস্তুহারা অনেক পরিবার জেলার বাহিরে গিয়ে আবার অনেকে অন্য গ্রামে গিয়ে বসতবাড়ি গড়ে তুলছে।
তিস্তা পারের মানুষের দাবি, স্বাধীনতার পর আজ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে তিস্তা নদী খনন, ড্রেজিং, সংস্কার, সংরক্ষণ করা হয়নি। শুধুমাত্র বন্যা আসলে অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পলি জমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে অসংখ্য শাখা ও নালায় পরিনত হয়েছে। সে কারনে ভাঙনের তীব্রতা দিন দিন বেডেই চলছে। 
উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের আব্দুল মতিন জানান, চর এলাকায় তার বাপ দাদার ২৫ বিঘা জমি রয়েছে। প্রতিবছর বন্যা আসলে ওইসব চরের জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যা । তার দাবি স্থায়ীভাবে নদী খনন এবং ড্রেজিং করলে শাখা ও নালা নদী সমুহ বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি জেগে উঠা জমি আর কখনো ভাঙবে না। তিনি বলেন গত সাত দিনের ব্যবধানে তার ২ বিঘা জমি আমনক্ষেতসহ নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।
লালচামার চরের রফিকুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙনের কষ্ট সেই জানে, নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে যার বসতবাড়ি। রফিকুল ইসলাম বলেন, তার বয়স এখন ৫০ বছর। এ পর্যন্ত তার বসতবাড়ি ১২ বার ভাঙনের শিকার হয়েছে। আমনক্ষেতসহ তালতরকারি জমি জমা প্রতিদিন বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে।        
উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, তিস্তার চরাঞ্চল এখন কৃষিতে সম্ভাবনাময় অঞ্চল। চরাঞ্চলের আবাদি জমি এবং চরবাসি রক্ষা করতে হলে স্থায়ীভাবে নদী খনন, ড্রেজিং, সংরক্ষণ, শাসন করতে হবে। তা না হলে ভাঙনের হাত থেকে চরবাসিকে রক্ষা করা যাবে না। 
উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোহাম্মদ আল মারুফ জানান, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে তিস্তানদী প্রবাহিত। প্রতিবছর বন্যার সময় নদীভাঙনে অনেক পরিবার নদীগবেভ বিলিন হচ্ছে। পাশাপাশি আবাদি জমি, রাস্তাঘাট ভাঙনের শিকার হয়। নদী ভরে গিয়ে অসংখ্যক শাখানদী এবং নালায় পরিনত হয়েছে। সে কারনে গোটা বছর নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদী খনন করে গতিপথ পরিবর্তন করে দিলে ভাঙনের প্রকোপ অনেকটা কমে আসবে। উপজেলা পরিষদ ভবনটিও তিস্তার শাখা নদীর ধারে অবস্থিত। তিনি বলেন উপজেলা পরিষদটি রক্ষায় ৫০০ মিটার লম্বা একটি বাঁধ নির্মাণের মেঘা প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। 
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, তিস্তায় প্রতিবছর কমবেশি বেশ কিছু সংখ্যক পরিবার বাস্তুহারা হচ্ছে। নদী খনন, ড্রেজিং,শাসন ও সংরক্ষণ করা বড় প্রকল্পের  প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন।
গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানান, তিস্তার ভাঙন নিয়ে জাতীয় সংসদে বেশ কয়েকবার জনগুরুত্বপুর্ণ নোটিশ দিয়ে কথা বরেছি। পানি সস্পদ মন্ত্রীকে মহোদয়কে কয়েকবার ভাঙন কবলিত এলাকায় নিয়ে গিয়াছিলাম। গত বছর প্রায় ৫ কোটি টাকার জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ভাঙন কবলিত এলাকায় ফেলা হয়েছে। তিস্তা রক্ষায় সরকারের  ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শুরু হলে হয়তো কিছুটা ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।  

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়