সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর ►
দিনাজপুর চিরিরবন্দরের রানিরবন্দর ক্লিনিক এন্ড হাসপাতালে এক প্রসূতি মায়ের সিজার করে বাচ্চা প্রসবের পর পেটের ভেতরে তোয়ালে (মাফ) রেখে সেলাই করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। পুনরায় অস্ত্রাচার করে সেই তোয়ালা বের করেছে অন্য চিকিৎসকেরা।
অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম রবিউল আলম। তিনি দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট।
ওই প্রসূতির নাম মুক্তা বেগম। তিনি খানসামা উপজেলার কাচিনিয়া ইউনিয়নের মারগাও গ্রামের সেলিম মিয়ার স্ত্রী। গত ৩০ নভেম্বর রানীরবন্দর ক্লিনিকে ভর্তি হন তিনি। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন। সাতদিন পরে ক্লিনিক থেকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কয়েকদিন পর থেকে পেটে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। ২৪ ডিসেম্বর ভর্তি হন দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে উদ্ঘাটিত হয় রহস্য । পেটের ভেতর রয়ে গেছে তোয়ালে (মাফ)। অস্ত্রোপচার করে সেটি অপসারণ করা হয়। ২৮ডিসেম্বর তাকে ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ওই প্রসূতি সুস্থ আছেন।
ভুক্তভোগী মুক্তা বেগম জানান, `৩০ নভেম্বর রানীরবন্দর পলিটেক ক্লিনিকে সিজার হয়। কয়েকদিন পরে পেটের যন্ত্রনায় ছটফট করি। পরে আমার স্বামী দিনাজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখানে আবার অপারেশন হয়। ডাক্তার পেটের ভেতর থেকে কাপড়ের তোয়ালা বের করেছেন। কি যে যন্ত্রনা। আর যেন এরকম কারো না হয়।`
দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মুক্তা বেগমের অস্ত্রোপচার করেছেন হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, অস্ত্রোপচারের সময় আমরা হাত মোছার কাজে ছোট আকৃতির তোয়ালে ব্যবহার করি। ডাক্তারী ভাষায় বলা হয় `মাব।`অসাবধানবশত হয়তো সেলাই করার সময় পেটের ভেতর একটি মাব থেকে গেছে। আমারা আলট্রামনোগ্রাম করে পেটে ময়লামত কিছু একটার আভাস পাই। পরে অস্ত্রোপচার করে সেটি অপসারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক রবিউল আলম বলেন মুক্তা বেগমের পেটের ভেতর ভুল বসত তোয়ালা মাফ ছাড়া পড়েছিল। অপারেশন করলে এই ধরনের ভূল হতেই পাড়ে।পরবর্তীতে দিনাজপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে দ্বিতীয়বার অপারেশন করে তোয়ালা মাফ বের করা হয়ছে। আমরা রোগীদের বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাই। অসাবধানতা বসত এই ঘটনাটি ঘটেছে। তবে বতর্মানে রোগী সুস্থ রয়েছে।
দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিসসূত্র জানায়, জেলায় বর্তমানে ৯৭টি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল এবং ১০৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। এরমধ্যে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর নিবন্ধন থাকলেও মাত্র ৬৪টি ক্লিনিক ও হাসপাতালের নিবন্ধন আছে।
সিভিল সার্জন এএইচ এম বোরহানুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, রানীরবন্দরের ওই ক্লিনিকের ঘটনাটি জেনেছি। তাদেরকে অভিযোগও করতে বলা হয়েছিল। তবে অজ্ঞাত কোন কারনে ওই পরিবারটি লিখিত অভিযোগ করেনি। তিনি বলেন, রানীরবন্দর পলিটেক ক্লিনিক এন্ড হাসপাতালটির নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে রানীরবন্দর ক্লিনিক নামে নতুন করে নিবন্ধন নিয়ে আবার কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা। ওই প্রসূতি মায়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।