গোপাল মোহন্ত, গোবিন্দগঞ্জ ►
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কুঠিবাড়ীতে কালের সাী কংকাল দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একসময়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল ’ডিসপেনচারী’ ভবন।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায় ইংরেজ শাসনামলের শেষ সময়ে নীলকরা চলের যাওয়ার পর গোবিন্দগঞ্জের ‘কুঠিবাড়ী’ মহারাজা স্যার প্রদোৎ কুমার ঠাকুরের অধীনস্থ হয় এবং মহারাজা প্রদোৎ কুমার ঠাকুর বাহাদুর এই কুঠিবাড়ীতেই তার জমিদারী প্রশাসনের কেন্দ্রস্থলে পরিনত করেন।
সে সময় মহারাজা তার রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি বেশকিছু উন্নয়নমুলক ও সেবামুলক কর্মকান্ড শুরু করেন। অনেকের ধারনা মহারাজা তার কর্মচারী ও প্রজাদের চিকিৎসা সেবার জন্যই এই ডিসপেনচারীটি প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রাথমিক পর্যায়ের ছোট-খাট অসুখে বিনামূল্যে ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যেত এখানে। যে কারণে অভাবি ও দুস্থসহ সব মানুষের ব্যাপক পরিচিতি ছিল এই ‘ডিসপেনচারী’র। সেবাদানের জন্য ৩টি ক বিশিস্ট এই ডিসপেনচারী ভবনটি ছিল চারিদিকে অর্ধেক ইট ও অর্ধেক টিনের দেয়াল আর উপরে বাংলা টিনসেড ইট সিমেন্টের ঢালাই করা মেঝে। এ ছাড়াও অধিক নিরাপত্তার কথা ভেবে ঝড়ে যাতে তিগ্রস্থ না হয় এজন্যই সম্ভবত মোট ৪টি বড় বড় মোটা শিকল দিয়ে মাটির সাথে বেঁধে দেয়া হয় ভবনটি। এজন্যই এই মূলত ডিসপেনচারির পরিচতি ছিল লোহার শিকল বাঁধা ডিসপেচারী। সুন্দর সেবার জন্য উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের মানুষের কাছে এটি ছিল শেষ আশ্রয়স্থল।
পরবর্তীতে সরকারি ভাবে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা হলে এই ডিসপেনচারীর কদর কমে যায় এবং এক সময় এই ডিসপেনচারীর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। বর্তমান উপজেলা ভূমি অফিস ও অফিসার্স কোয়ার্টারের পিছনে ভগ্নপ্রায় ভবনটি কোন রকমে কয়েকটি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। নেশার অর্থ সংস্থান করতে নেশাখোররা ডিসপেনচারির দরজা, জানালা, টিনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করে চুরি হয়ে গেছে লাধিক টাকা মূল্যের ৪টি লোহার শিকল ।
ডিসপেনচারীর আঙ্গিনায় পরিবার নিয়ে বসবাসরত সুইপার গণেশ বাসফোর ও জনি বাসফোর জানান, রাত হলেই নানান ধরণের মানুষের সমাগম এখানে তাই কারা দরজা জানালা, টিন, লোহার শিকল খুলে নিয়ে গেছে আমরা জানিনা। এলাকাবাসীর জানায় কিছুদিন আগেও ঐতিহাসিক এই ডিসপেনচারীর দরজা, জানালা, টিনের চালা, লোহার শিকল সবই ছিল। কিন্তু এখন দেখছি অনেক কিছুই নেই।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আব্দুল্লা-বিন শফিকের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই-তবে আমি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।