Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৪-১-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৫:৪৭

নওগাঁয় শীতের তীব্রতায় বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা

নওগাঁয় শীতের তীব্রতায় বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা

আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ ►

 নওগাঁর উপর দিয়ে গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈতপ্রবাহ। শীত মৌসুম জুড়ে নওগাঁর তাপমাত্রা ৬-১৫ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। গত শুক্রবার থেকে তাপমাত্রা একটু বৃদ্ধি পেলেও শীতের তীব্রতা যেন কমছেই না। গতকাল শনিবার নওগাঁর সর্বনিম্ম তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছিলো ১০ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান আগামীতে নওগাঁর এই তাপমাত্রা আরো কমতে পারে। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা তেমন একটা কমবে না। এদিকে হঠাৎ শীত বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা শীতজনিত ডায়রিয়া, হাপানিয়া, অ্যাজমা, বুকের ব্যথাসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে শয্যা না থাকায় মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হচ্ছে।

দেড় বছরের শিশু সাদিয়াকে নিয়ে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী গ্রাম থেকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ আধুনিক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সামনে করিডরের মেঝেতে বিছানো শয্যায় বসেছিলেন মা মৌসুমী খাতুন। একটু পর পর মেয়ের নাক মুছে দিচ্ছিলেন। মৌসুমী খাতুন বলেন, তিন-চারদিন ধরে ছাওয়ালটার সর্দি লাগিছে। সর্দির চোটত গতকালকা থ্যাকে বুকের দুধও খ্যাতে পারোছে না। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার বলল, হামার মেয়ের নিউমোনিয়া হছে। ছাওয়ালক সুস্থ্য করার জন্য হাসপাতালত ভর্তি করাছি।

মৌসুমীর মতো অনেকে অভিভাবকই নওগাঁ সদর হাসপাতালে শিশুকে নিয়ে ভিড় করছেন। আট মাসের শিশু জোবায়েরের পুরো শরীরে গরম কাপড় জড়ানো। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শের পর জোবায়েরকে হাসপাতালে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তার বাবা-মা। জোবায়ের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, চার-পাঁচদিন ধরে ছেলে অসুস্থ। জ¦র-কাশি কিছুতেই কমছে না। সর্দির কারণে বুকের দুধও ঠিক মতো খেতে পারছে না। জরুরি বিভাগে চিকিৎসককে দেখানোর পর চিকিৎসক বলেছেন, আমার ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে ছেলে হাসপাতালে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছি।  

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নওগাঁয় শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে শিশু ও বৃদ্ধদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। জেলার হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস, অ্যাজমা, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুনের বেশি। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।

গতকাল শনিবার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ সদর হাসপাতালে শিশু ওয়াডে গিয়ে দেখা যায়, শয্যা সংখ্যা ১২টি হলেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই ওয়ার্ডে শিশু ভর্তি ছিলো ৯০জন। শয্যাসংকটের কারণে একই বেডে দুইজন-তিনজন করে শিশু রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেকে বেড না পেয়ে ওয়ার্ডের মেঝে এবং হাসপাতালের করিডরে মেঝেতে শিশুকে রেখে চিকিৎসা করাচ্ছেন। 
নওগাঁ সদর হাসপাতালে গত সাত দিনে নিউমোনিয়া ভর্তি হয়েছে ৭০জন শিশু। আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই সাত দিনে ভর্তি হয়েছে ১৮০জন শিশু। অর্থাৎ প্রতি দিন ৪০জনের বেশি শিশু রোগী নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। 

শিশু ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ নার্স রোজিনা আক্তার বলেন, অন্যান্য সময়ে শিশু ওয়ার্ডে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে শিশু ভর্তি থাকে। সেখানে গত ১৫-২০দিন ধরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০শিশু ভর্তি থাকছে। ফলে চিকিৎসকদের পাশাপাশি এত রোগীর চাপ সামলাতে আমাদের নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

শুধু নওগাঁ সদর হাসপাতালেই নয়, জেলার ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। নওগাঁর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলার ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭০নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৪৮জন। আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগই শিশু। 

নওগাঁ সদর হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন এখন পর্যন্ত শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আশঙ্কাজনক হারে রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে না। তবে জটিল রোগীদের ভর্তি করে চিকিৎসা প্রদান করছি আর অন্যদের স্বাভাবিক চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। হাসপাতালে যথেষ্ট পরিমাণ ওষুধ মজুদ আছে এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক-নার্স আছে। তবে শয্যা কম থাকার কারণে মেঝেতে শয্যা করে জরুরী রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের চেস্টা করছি। তবে শীতের প্রকোপ যেহেতু দ্রুতই কমছে না তাই সকলকে স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলার অনুরোধ করছি।  

সিভিল সার্জন আবু হেনা মো. রায়হানুজ্জামান সরকার বলেন, এক সপ্তাহে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫০০ অধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়াকে ঠিক অস্বাভাবিক না বললেও অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই সংখ্যা বেশি। তবে এটা এখনও প্রার্দুভাব পর্যায়ে যায়নি। পরিস্থিতি আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ ও রোগীদের জন্য কম্বল রয়েছে। 
 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad