• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৭-১-২০২৩, সময়ঃ দুপুর ০২:১২

পলাশবাড়ীতে খোলা আকাশের নিচে গাছ তলায় বৃদ্ধা মা-ছেলের বসবাস

পলাশবাড়ীতে খোলা আকাশের নিচে গাছ তলায় বৃদ্ধা মা-ছেলের বসবাস

পলাশবাড়ী সংবাদদাতা ►

বৃদ্ধা কয়েদ ভানু বেওয়া বয়স ৭৪ বছর ছুঁইছুঁই। তার একমাত্র ছেলে বাক প্রতিবন্ধী আশকর আলী বয়স (৫৪) বছর। উত্তরাধীকার সুত্রে তাদের কোনো সহায় সম্বল না থাকায় বৃদ্ধা মা-ছেলে খেয়ে না খেয়ে এখন তারা ঠিকানাহীন খোলা আকাশের নিচে গাছ তলায় বসবাস করছেন।

সম্প্রতি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চত্ত্বরের চলাচলের রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে গাছ তলায় বিছানাপত্র নিয়ে কয়েকদিন যাবৎ থেকে রাত যাপন করছেন। বৃদ্ধা মা-বাক প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে রাস্তার পাশে ঘন কুয়াশা ও কনকনে তীব্র শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে ছোট্ট একটি গাছ তলায় মাটিতে খড় বিছিয়ে একটি কাঁথা, একটি কম্বল ও একটি ল্যাপ দিয়ে দিন-রাত্রি যাপন করে আসছেন তারা।

জানা যায়, ১৯৭০ সালে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামের আলতাব হোসেনের সাথে কয়েদ ভানুর বিয়ে হয়। সেখানে কয়েদ ভানুর দাম্পত্য জীবনে বাক প্রতিবন্ধী ছেলে আশকর আলীর জন্ম হয়। এরপর বছর খানেক যেতে না যেতেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয় কয়েদ ভানুর। পরে কয়েদ ভানু সন্তানকে সাথে নিয়ে কাশিয়াবাড়ী গ্রামের তজের প্রধানের সঙ্গে আবারও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের কিছুদিন পরেই কয়েদ ভানু আবারও কল্পনা ও গোলাপী নামে ২ মেয়ে সন্তানের জন্ম  দেন। এরপর সেখানেও কয়েদ ভানুকে তার স্বামী ডিভোর্স দেন। কয়েদ ভানু সংসার না টিকলেও সন্তানদের কথা ভেবেই রয়ে যান ওই গ্রামেই। ওই কঠিন পরিস্থিতিতে জীবিকার তাগিদে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে কয়েদ ভানু নিজের জীবনের সাথে সংগ্রাম চালিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজকর্ম করে অনেক দু:খে-কষ্টে অন্ন জুগিয়ে জীবিকা নির্ভর করতেন।

সময়ের সাথে সাথে বড় হয় আশকর আলীও। ছেলে আশকর একজন বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় পাওে না সে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে, পারেনা স্বেচ্ছায খেতে, পারেনা কানে কোন কথা শুনতে। মা-ছেলে অভাবের কারণে পারে না ভালো কোন খাবার খেতে, পারেনা ভাল কোন বস্ত্র পড়তে। এমনকি অর্থাভাবে পারে না চিকিৎসা সেবা নিতে। বর্তমানে বৃদ্ধা কয়েদ ভানু ও ছেলে বাকপ্রতিবন্ধী আশকরের শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে তাদের। যেন বয়সের ভাঁড়ে নুয়ে পরেছেন মা-ছেলে দুজনেই।

স্থানীয় তরিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ জানান, তাদের নিজস্ব কোন জায়গা জমি না থাকায় আজ তারা নি:স্ব। এখন তাদের কেউ যদি খাবার দেন তবেই তাদের খাবার জোটে। তাদের দেখভালের কোন আত্মীয় স্বজন না থাকায় অসহায়ত্ব জীবনে বৃদ্ধা ৭৪ বছর বয়সী কয়েদ ভানু তার  ৫৪ বছর বয়সী ছেলে শারীরিক ভারসাম্যহীন আশকর আলীকে এভাবেই দেখভাল করে চলেছেন। মা-ছেলের করুন পরিস্থিতি দেখে ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক ১০ কেজি চাল, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ২টি কম্বল ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষ থেকে কম্বল দেয়া হয়েছে।

পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন জানান, আমরা আশ্রায়ন প্রকল্পের একটি ঘর দিবো কিন্তু তারা যদি থাকে। 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়