পলাশবাড়ী প্রতিনিধি ►
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার শিক্ষার্থীরা এখন বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়। ক্লাশ শুরুর আগে ও ছুটির পরে এমন মনোরম দৃশ্য প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে। উপজেলার স্কুল ছাত্রীসহ নারীরা ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতনকে পরোয়া না করে এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। এখন আর ওদের ভ্যান-রিক্সার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করতে হয় না। এমনকি বাবা-মার কাছ থেকে টাকাও নিতে হয় না। স্কুলে যাওয়া আসার পথে ইভটিজিংয়ের স্বীকারও হতে হয় না। বরং একসাথে বাইসাইকেল চালিয়ে দলবেঁধে স্কুলে আসা-যাওয়ায় তারা তাদের নিরাপদ মনে করছেন।
পলাশবাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর চন্দ্র কিশোর স্কুল এন্ড কলেজ ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ স্কুল এন্ড কলেজের প্রায় অর্ধশত ছাত্রী বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করে। এখন আর তাদের ভ্যান-অটোর জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। বাসুদেবপুর স্কুল এন্ড কলেজের লেখাপড়ার মান ভালো হওয়ায় দুর-দূরান্ত থেকে মেয়েরা এখানে এসে ভর্তি হচ্ছে। গ্রামের এসব জায়গা থেকে স্কুলে আসতে তাদের অনেক বেগ পেতে হয়। বর্ষাকালে কাঁদা-জল মাড়িয়ে আসতেও তাদের কষ্ট হতো।
সময় মত রাস্তায় রিক্সা-ভ্যান পাওয়া যেতে না। রিক্সা-ভ্যান পাওয়া গেলেও ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ ছিল অহরহ। তাছাড়া দলবেঁধে বাইসাইকেল নিয়ে স্কুলে আসলে নিরাপত্তা বেশি থাকে। এসব দূর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকেরা মিলে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসবে এমন সিদ্ধান্তের পর বতর্মানে শতাধিক ছাত্রী নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে। উপজেলা থেকে স্কুলের দুরত্ব ১০ কিলোমিটার দুরে। বাসুদেবপুর চন্দ্র কিশোর স্কুল এন্ড কলেজের বতর্মান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭শ ১২ জন। স্কুলটিতে ২০টি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করতে আসে। শুধু এ স্কুলটিই নয়, আমলাগাছী, ফকিরহাট, মনোহরপুর ও তালুকজামিরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরাও সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে।
বাসুদেবপুর স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতি বলেন, বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচে। আমরা বান্ধবীরা একখানে হয়ে দলবেঁধে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাই। ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী হিয়া মনি বলেন, আমি এখন নিয়মিত ক্লাশে এ্যাটেন করতে পারি। আমাকে আর ভ্যান-রিক্সার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। আমি এক কিলোমিটার দূর থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাই। ৬ষ্ঠ শ্রেণির আর এক ছাত্রী সাগরিকা বলেন, আমিও এক কিমি দূর থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসি। এতে করে আমার সময় খুব কম লাগে।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ইভা বলেন, আমার বাড়ী দুই কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করি। প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হতো। কিন্তু এখন কোনো সমস্যা হয় না। আগে হেঁটে স্কুলে আসতে অনেক সময় লাগত। তাই নিয়মিত স্কুলে আসা যাওয়া হতো না। এখন বাইসাইকেল নিয়ে আসার কারণে অনেক সময় বেঁচে যায়।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ একেএম আব্দুর নূর বলেন, শিক্ষায় মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করতে ছাত্রীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বাইসাইকেলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এখন আমার স্কুলের মেয়েরা দলবেঁধে সময় মতো বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে। আমরাও সাইকেলে আসতে ওদের উৎসাহিত করেছি। এক সঙ্গে দলবেঁধে এলে নিরাপত্তা নিয়ে ভয় থাকে না।
এ ব্যাপরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহতাব হোসেন জানান, আগের চাইতে পলাশবাড়ী উপজেলায় ব্যাপক নারী শিক্ষার হার বেড়েছে। তাদের স্কুলে আসতে উৎসাহিত করতে উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রকার সরকারি সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রয়েছে।