ফুলবাড়ী প্রতিনিধি
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সব ধরনের সবজির দাম বাড়লেও বাড়েনি আলুর দাম। বুধবার প্রতিকেজি আলুর পাইকারি দাম ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা। কিন্তু উৎপাদন থেকে হিমাগারে রাখা পর্যন্ত এককেজি আলুর পেছনে কৃষক ও ব্যবসায়ীর খরচ হয়েছে ২১ টাকা। হিমাগারে আলু রেখে তারা প্রতিকেজি আলুতে ৩ টাকা করে লোকসান গুণছেন।
খুচরা বাজারে করলা, পটোল, পেঁপে, শজিনা, কুমড়া, সিমসহ অন্যান্য শাকসবজি প্রতিকেজি ৪০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অথচ আলু বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে ২২ থেকে ২৪ টাকা কেজিদরে। আলুর উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। পূঁজি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম তাদের। এ অবস্থায় হিমাগর থেকে আলু বের করতে সাহস পাচ্ছেন না তারা। এদিকে সময় মতো আলু বের না হওয়ায় হিমাগার মালিকদের চলতি মূলধনের ঘাটতি হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদেও। এ অবস্থায় চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে আলু রাখতে উৎসাহিত হবেন না বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজ ঘুরে দেখা গেছে, সারাদিনে মাত্র দুই-তিন’শ বস্তা হিমাগার থেকে বের হচ্ছে। যারাই বিক্রির উদ্দেশ্যে আলু বের করছেন, তাদের প্রত্যেককেই ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
খুচরা বাজারে আলু কিনতে আসা ওষুধ প্রতিনিধি আব্দুছ ছালাম বলেন, দম কম থাকায় পাঁচকেজি আলু কেনা হয়েছে। তবে দাম বেশি হলে এক থেকে দেড় কেজির মধ্যেই থাকতে হতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরশহরের আলু সংরক্ষণকারি বলেন, কোল্ড স্টোরেজে অন্তত সাড়ে তিন হাজার বস্তা আলু রেখেছেন। গত দেড় মাসে ১৮ কেজি দরে ১১০০ বস্তা আলু বিক্রি করেছেন। এতে তিনি আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছেন। এই দরে সব আলু বিক্রি করলে পুঁজি হারিয়ে যাবে। এ অবস্থায় কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বের করার সহাস পাচ্ছে না।
উপজেলার উত্তর রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক মহিদুল ইসলাম বলেন, লাভের আশায় দেড়’শ বস্তা আলু কোল্ড স্টোরেজে রেখেছিলেন। ২০ হাজার টাকার ওপরে লোকসান দিয়ে ওই আলু বিক্রি করেছেন।
পৌরশহরের পাইকারি আলু ব্যবসায়ি তুহিন রানা বলেন, হিমাগাগুলোতে পর্যাপ্ত আলু মজুত রয়েছে। লোকসানের ভয়ে আলু বের হচ্ছে না। এক সাথে ওইসব আলু বের করলে আলুর দাম আরও কমে যাবে।
ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজের পরিচালক প্যানেল মেয়র মামুনুর রশীদ চৌধুরী বলেণন, তার কোল্ড স্টোরেজের ১০ হাজার বস্তা আলু ধার ক্ষমতা রয়েছে। লোকসানের ভয়ে অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ি আলু বের করছেন না, ফলে এখনও কোল্ড স্টোরেজে বিপুল পরিমাণ আলু রয়ে গেছে। ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষক ও ব্যবসায়িরা সংরক্ষিত আলু বের না করলেও বর্তমানে চলছে ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং। কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলুগুলো বের না করলে সেগুলোতে পচন ধরবে। এতে আরও লোকসানে পড়তে হবে।