ফুলবাড়ী প্রতিনিধি ►
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে পরিকল্পনা করে কাঁচি দিয়ে খুঁচিয়ে জনি আহম্মেদকে হত্যা করে তার রোজগারের ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাটি ছিনতাই করা হয়। হত্যার পর তার মরদেহটি ফেলে দেয়া হয় একটি ইউক্যালিপ্টাস বাগানে। কিন্তু এ ঘটনায় পুলিশের জালে ঢাকা থেকে ধরা পড়ে এজাহারভুক্ত ২ নং আসামী আসমাউল হোসেন আকাশ (২২) এবং ৩ নং আসামী মামুন (১৮)। তাদের দেয়া জবানবন্দি থেকে বেড়িয়ে আসে হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী তাজেল ইসলামের (২৭) নাম। তিনি ঘটনার পর থেকেই ঢাকার গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় ছিলেন পোশাক কর্মী বেশে গা ঢাকা দিয়ে। তবুও মিলেনি রেহাই। আত্মগোপান করেও ধরা পড়লেন পুলিশের জালে।
গত শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে গাজীপুরের জয়দেবপুর বানিয়াচালা এলাকার এএসসি পোশাক কারখানা থেকে তাজেল ইসলামকে (২৭) গ্রেফতার করে পুলিশ। তাজেল ইসলাম ফুলবাড়ী উপজেলার ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের রাজারামপুর ঘাটপাড়া গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ৩০ অক্টোবর হত্যা হয় রিকশা চালক জনি আহম্মেদ। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন তারা। গত ১৮ নভেম্বর ঢাকার ফকিরাপুল কাঁচা বাজার থেকে এজাহারভূক্ত ২নং আসামী আসমাউল হোসেন আকাশ এবং ৩নং আসামী মামুনকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ১৯ নভেম্বর বিকেলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করলে, তারা দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন এবং হত্যার সাথে জড়িত মূল আসামী তাজেল ইসলামের বিষয়ে পুলিশকে নিশ্চিত করে। এরই সূত্র ধরে গত শুক্রবার (৯ডিসেম্বর) ঢাকা গাজীপুরের জয়দেবপুর বানিয়ারচালা এলাকার এএমসি পোশাক কারখানা থেকে জয়দেবপুর থানা পুলিশের সহোযোগিতায় হত্যার পরিকল্পনাকারী মূল আসামী তাজেল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তাজেল ইসলাম ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন। তিনি সেখানে গা ঢাকা দিয়ে পোশাক শ্রমিকের কাজ করছিলেন। তাজেল ইসলাম আদালতে হত্যাকা-ের ঘটনার বিবরণী জানিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে দোষ স্বীকার করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকারীরা জানিয়েছেন ঘটনার দিন (২৯ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১০টায় পৌর শহরের ঢাকামোড় নামকস্থান থেকে জনি আহম্মেদের অটোরিকশাটি ভাড়া নিয়ে যাওয়ার পথে শিবনগর ইউনিয়নের হকের ইট ভাটার কাছে এলে অটোরিকশা চালক জনি আহম্মেদ আর সামনে যেতে নারাজ করেন। পরে জুসের সাথে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে জনি আহম্মেদকে জোরপূর্বক খাওয়ান হত্যাকারীরা। পরে তাকে পাশের একটি ইউক্যালিপ্টাস বাগানে নিয়ে গিয়ে হত্যাকারীরা তিনজন মিলে জনি আহম্মেদের গলায় খুঁচাতে থাকেন। এতে অতিরিক্ত রক্তখরন হয় এবং ঘটনাস্থলেই জনির মৃত্যু হয়।
এসময় জনির অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যান তাজেল ইসলাম, আসমাউল হোসেন আকাশ ও মামুন। ওই রাতেই পার্বতীপুরের হলদিবাড়ী নামকস্থানে গেলে, রেলওয়ে থানা পুলিশ হত্যাকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ভিডিও স্টেটম্যাণ্ট নিয়ে ছেড়ে দেন। সেই সাথে অটোরিকশাটি জব্দ করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহতের বাবা আতাউর রহমান ফুলবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর বিভিন্ন আলামতের সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে প্রযুক্তির সহযোগিতায় প্রথমে গত ১৮ নভেম্বর ঢাকার ফকিরাপুল কাঁচা বাজার থেকে আসমাউল হোসেন আকাশ ও মামুনকে গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্যমতে মূল আসামী তাজেল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, অটোরিকশা চালক জনি হত্যা ঘটনায় জড়িত ৩ জন অপরাধীদের মধ্যে ২ জনকে গত ১৮ নভেম্বর ঢাকা থেকে আটক করা হয়। এবং তাদের দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী তাজেল ইসলামকে গত শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার গাজীপুরের জয়দেবপুর বানিয়াচালা এলাকার এএসসি পোশাক কারখানা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিন বিকেলে তাজেল ইসলামকে দিনাজপুর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া-মাছুয়াপাড়ার মাঝামাঝি হক সাহেবের ইট ভাটার পূর্ব পার্শ্বের ইউক্যালিপ্টাস বাগানে অটোরিকশা চালক ও শিবনগর ইউনিয়নের রাজারামপুর দক্ষিণ বাসুদেবপুর (ডাঙ্গা) গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে জনি আহম্মেদের (২১) রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুর্বৃত্তরা কাঁচি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে জনি আহম্মেদের অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।