ধীমান চন্দ্র সাহা, ফুলবাড়ী ►
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর দাদুল চকিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, আয়া ও নৈশ্য প্রহরী পদের চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে। তবে ভূক্তভোগীদের তোপের মুখে একজন প্রার্থীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া চাল লাখ টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষক।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী উপজেলার কাজিহাল ইউনিয়নের কাজিহাল গ্রামের সাগরিকা রায়, কুলছুম বেগম, মেহেদী হাসান মিম, শাহজাহান আলী ও চকিয়াপাড়া গ্রামের শাহিন আলম দিনাজপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পেয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন অভিযোগকারীদেরকে। অভিযোগকারীরা অভিযোগের অনুলিপি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও দিনাজপুর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দিয়েছেন।
দাখিলকৃত লিখিত অভিযোগে জানা যায়, গত বছর ৩০ জুলাই উপজেলার দাদুল চকিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, আয়া ও নৈশ্য প্রহরীসহ ৪টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বেশ কয়েকজন চাকরি প্রত্যাশী আবেদন করেন। এরপর আয়া পদের আবেদনকারি সাগরিকা রায়ের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং একই পদের জন্য কুলছুম বেগমের কাছে আয়া পদে ৬ লাখ টাকা, নৈশ্যপ্রহরী পদের জন্য মেহেদী হাসান মিমের কাছে ১০ লাখ টাকা এবং একই পদের জন্য শাহজাহান আলীর কাছে ৮ লাখ টাকাসহ কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদের জন্য শাহিন আলমের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নবীউল আলম বিশ্বাস ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কামরুজ্জামান শাহ কামরু।
অভিযোগকারি প্রার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নবীউল আলম বিশ্বাস ও সভাপতি কামরুজ্জামান শাহ কামরু গোপনে গত সোমবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে দিনাজপুর জিলা স্কুলে ওই তিন পদের নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেন। খবর পেয়ে ভুক্তভোগীরা জিলা স্কুলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ভুক্তভোগীদের তোপের মুখে বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি তিন ভুক্তভোগীর হাতিয়ে নেওয়া অর্থ ফেরত দেন।
অভিযোগকারী আয়া পদের চাকরিপ্রার্থী ভুক্তভোগী সাগরিকা রায় বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আয়া পদে আবেদন করেন। আয়া পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে প্রধান শিক্ষক নবীউল আলম বিশ্বাস ৫ লাখ টাকা করে দুই দফায় ১০ লাখ টাকা নেন। বাড়ীর শেষ সম্বল জমিটি বিক্রি করে তাকে টাকা দিয়েছেন। শুধু তিনিই নন, আবেদনকারী প্রত্যেকের কাছেই নিয়োগ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। এরপরও তাদেরকে না জানিয়ে প্রধান শিক্ষক নিজের আত্মীয় স্বজনকে নিয়োগ দেওয়া জন্য গোপনে ৯ জানুয়ারি দিনাজপুর জিলা স্কুলে নিয়োগ বোর্ড বসান। বিষয়টি জানতে পেরে ভুক্তভোগীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিক্ষুদ্ধরা প্রধান শিক্ষককে মারধরও করেন। এ ঘটনার পর মেহেদী হাসান নামের এক প্রার্থীর ৪ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। সাগরিকা রায়েরও ১০ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছেন। এতোকিছুর পরও যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিয়োগ বোর্ড বসে কিভাবে?
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নবীউল আলম বিশ্বাস বলেন, টাকা দেয়া বা নেয়ার ঘটনাটি সত্য নয়। যারা আবেদন করেছেন তারা আমার সাথেই আছেন। দাখিলকৃত অভিযোগটি তারা প্রত্যাহার করে নিবেন। অভিযোগে আমার নাম ভুলঃবশত গেছে। আমি কারো কাছে টাকা নেইনি। এ বিষয়ে সভাপতির সাথে কথা বলুন, তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য কামরুজ্জামান শাহ কামরু বলেন, ঘটনা সঠিক নয়, চাকরি নেয়ার জন্য আবেদনকারীরা টাকা দিচ্ছিলেন। কিন্তু আমি নেইনি। এরপরও তারা জোর করে টাকা দিয়েছিলেন। যারা টাকা দিয়েছিলেন, তাদের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শমশের আলী মন্ডল বলেন, ওই স্কুলের নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় দিনাজপুর জিলা স্কুলে। প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে স্বাক্ষর দিয়ে এসেছি। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না। শুনেছেন সারাদিন গন্ডগোল হয়েছে স্কুলের সামনে। এজন্য জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরীক্ষা নিতে না চাইলেও পরে নিয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মাদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি কোনো নিদের্শনা দেন, তবে সে নিদের্শনা বাস্তবায়ন করা হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামকে তার মুঠোফোন ০১৭১২ ৫০৫২০৯ এ ফোন করা হলে ফোনের সুইচ অফ পাওয়া যায়। ফলে এ বিষয়ে তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।