শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর ►
নীলফামারীর সৈয়দপুরে ব্যক্তি মালিকানায় বৈধভাবে দখলে থাকা রেকর্ডভুক্ত জমি রেলওয়ের দেখিয়ে লিজ দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নিতে তৎপর একটি চক্র। ভূয়া কাগজ তৈরী করে মিথ্যে প্রচারণা চালিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে চক্রটি।
এক্ষেত্রে একজন কাউন্সিলরের নামও ব্যবহার করছে তারা। অথচ ওই কাউন্সিলরসহ যাদের লিজগ্রহিতা হিসেবে দেখানো হয়েছে তারা অনেকে এবিষয়ে কিছুই জানেনা। ফলে চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, শহরের বাঙ্গালীপুর মৌজায় জে.এল নং ৩৮ এর আওতাভুক্ত বিপুল পরিমাণ জমি রেলওয়ের দাবী করে চলতি বছরের গত ১২ অক্টোবর রেলওয়ে কর্তৃৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে দখলে নেয়। এটাকে এলাকাবাসী অবৈধ দখল মনে করে। কারণ ওই জমির প্রকৃৃত মূল মালিক আছে। তাদের নামে দলিল, সিএস, এসএ, বিএস রেকর্ড হওয়ায় খারিজ করে নিয়মিত খাজনা পরিশোধের মাধ্যমে দীর্ঘদিন থেকে ভোগদখল করে আসছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ রেলওয়ে কর্তৃৃপক্ষ মালিকানা দাবী করে ইতোপূর্বে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে। সেই মামলা চলমান থাকাবস্থায় অভিযান চালিয়ে বেআইনী কাজ করেছে। জোরপূর্বক দখল করে এখন সিন্ডিকেট করে ওই জমি নিয়ে অবৈধ বাণিজ্য করেছে রেলওয়ের ৮ নং কাচারী পার্বতীপুর ফিল্ড কানুনগো। ওই কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশে সৈয়দপুরের কতিপয় সুযোগ সন্ধানী স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি।
সম্প্রতি নতুন কৌশলে মাঠে নেমেছে তারা। এই কৌশলের অংশ হিসেবে শহরের বাঙ্গালীপুর মৌজার উল্লেখিত বিপুল পরিমাণ জমি বিভিন্ন জনের নামে লিজ দেওয়া হয়েছে এমম মিথ্যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কানুনগো অফিস থেকে সরবরাহকৃত ব্রিটিশ আমলের একটি ম্যাপে উল্লেখিত জমির অংশ চিহ্নিত করে তাতে লিজ গ্রহিতা হিসেবে অনেকের নাম লিখে তা ফটোকপি আকারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো উল্লেখিত ব্যক্তিদের অধিকাংশই জানেনা যে তাদের নামে লিজ দেওয়া হয়েছে। কবে কখন কে এই বরাদ্দ দিলেন বা কিভাবেইবা তারা লিজ পেলেন সে ব্যাপারেও কেউ কিছুই অবগত নন। কারণ এসংক্রান্ত কোন কাগজ তারা পাননি বা উপযুক্ত কোন দলিল, রশিদ বা সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্তৃক কোন চিঠিও দেওয়া হয়নি।
এমনকি লিজ নেওয়ার জন্য যারা আবেদনই করেনি তাদের নামেও লিজ দেওয়ার মত ভূয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। আর যে কাগজ বা ম্যাপ দেখানো হচ্ছে তাতে রেলওয়ে কোন কর্তৃৃপক্ষেরই নাম স্বাক্ষর সিল নেই। একেবারে চরম ভূয়ামীপূর্ণ একটা কাজ।
এমনি প্রতারণাপূর্ণ কাজে তারা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বেলাল আহমেদের নামও ব্যবহার করেছে। এব্যাপারে তিনি বলেন ভূয়া নকশা করে তাতে আমার নামেও লিজ দেখিয়ে প্রচার চালিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আমি কোন লিজ নেইনি। আমার নামে রেলওয়ের ওই এলাকার জমি বরাদ্দ নেই।
তাই এমন মিথ্যেচারের মাধ্যমে আমাকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার এই ধরণের নির্লজ্জপনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং ঘৃণা প্রকাশ করছি। এনিয়ে ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে রেলওয়ের উর্ধতন কর্তৃৃপক্ষ ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
এভাবে অপপ্রচার চালানোর ফলে ওই জমিগুলো ইতোপূর্বে দীর্ঘ দিন থেকে যারা বৈধভাবে ভোগদখল করছেন বা যাদের নামে দলিল, রেকর্ড, খারিজ আছে। তাদের সাথে নতুন করে লিজপ্রাপ্ত হিসেবে যাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে তাদের বিরোধ দেখা দিয়েছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চক্রটি পুরাতনদের লিজ বহাল রাখা বা লিজ করে দেওয়ার ব্যবস্থার নামে তদবির বাণিজ্যে মেতেছে। একইভাবে নতুন করে লিজ নিতে আগ্রহীদের সাথেও ডিল করছে।
মো. আব্দুল লতিফ নামে ওই এলাকার জমির একজন মালিক বলেন, ওই চক্রের হোতারা এই প্রতারনামুলক প্রক্রিয়ায় নিজেদের নামেও লিজ পাওয়ার কথা বলে জমিগুলো বিক্রির মাধ্যমে বিশাল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতেও অপতৎপরতায় জড়িত। ইতোমধ্যে কিছু জমি বিক্রির বায়নাও হয়েছে। যা খুবই উদ্বেগজনক। ব্যক্তি মালিকানা জমিকে রেলওয়ের জমি দেখিয়ে এমন অভিনব বাণিজ্য কারসাজি কোনভাবে সফল হতে দেয়া যায়না। কারণ এটা সম্পূর্ণরুপে অবৈধ কর্মকাণ্ড।
আরেক মালিক আজিজুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের কর্মকর্তারা জড়িত থাকায় কতিপয় ভূমিদস্যু একত্রিত হয়ে এমন জঘন্য কাজে নেমেছে। এটা একটা প্রতারণামূলক অপরাধ। এই বেআইনী কাজ বন্ধে প্রশাসনসহ রেলওয়ের উর্ধতন কর্তৃৃপক্ষ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগ প্রয়োজন। নয়তো অসংখ্য মানুষ এই চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তাই তারা এব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে এবং রেলওয়ে কর্তৃৃপক্ষ ও সরকারের উপর মহলের হস্তক্ষেপ কামনায় তাঁদের দৃষ্টিগোচর করতে সংবাদ মাধ্যমে এসংক্রান্ত সঠিক তথ্য তুলে ধরার আহবান জানান।
রেলওয়ের ৮ নং কাচারী পার্বতীপুর ফিল্ড কানুনগো জিয়াউল হক বলেন, উল্লেখিত জমিগুলো রেলওয়ের। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করেছে। লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে এখনও এসংক্রান্ত কোন প্রজ্ঞাপন বা কাগজপত্র প্রদানের কাজ শুরু হয়নি। আর যে ম্যাপের কথা বলা হচ্ছে তা আমাদের নয়। কোন সিন্ডিকেট বিষয়েও আমার জানা নেই।
এদিকে চক্রটি কর্তৃক তৈরী ও প্রচারিত ম্যাপে উল্লেখ লিজধারী কয়েকজন জানান, যথাযথ কর্তৃৃপক্ষের কাছ থেকেই আমরা লিজ নিয়েছি। গত ২০২০ সালেই এই লিজের লাইসেন্স প্রদান করেছে রেলওয়ে ভূসম্পত্তি বিভাগ।