• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৩-১১-২০২২, সময়ঃ দুপুর ০১:৩২

ভোগান্তি ছাড়াই সেবা মিলছে নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে

ভোগান্তি ছাড়াই সেবা মিলছে নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে

আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ  ►

পাসপোর্ট অফিস মানেই ভোগান্তি, দালাল ছাড়া গেলেই হয়রানী, অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়া এমন ধারনা জন্ম নিয়েছে সবার মাঝে কিন্তু বিপরীত চিত্র নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের। বর্তমানে এই অফিসে কোন প্রকারের হয়রানী, বিড়ম্বনা আর ভোগান্তি ছাড়াই মিলছে উন্নত মানের সেবা। উন্নত সেবা প্রদানের মাধ্যমে নওগাঁর পাসপোর্ট অফিসের দৃশ্যপট পাল্টে সেবাগ্রহীতাদের মাঝে পাসপোর্ট অফিস সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনার জন্ম দিয়েছেন বর্তমান কর্মরত সহকারি পরিচালক হেলাল উদ্দিন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক সময়ের দালালদের ঘিরে থাকা পাসপোর্ট অফিসের গেইট সম্পন্ন ফাঁকা। সেবাগ্রহীতারা নিজেদের ইচ্ছে মাফিক যাতায়াত করছেন। ভিতরে লাইনে দাঁড়িয়ে সেবাগ্রহীতারা বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করছেন। কারো কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা, কেউ কি কোন কাজ করার নামে টাকা পয়সার দাবী করছে কিনা এরকম সমস্যার কথা জানতে পাসপোর্ট কর্মকর্তা নিজেই অফিসের বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা সেবাগ্রহিতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। কোন কক্ষের কাজ কেমন চলছে ইত্যাদি বিষয়ে কর্মকর্তা নিজেই ঘুরে ঘুরে তা পরিদর্শন করছেন।

তবে অফিসে জনবল সংকটের কারণে ২০জন মানুষের কাজ করতে হচ্ছে মাত্র ৯জন মানুষকে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং সার্ভারের নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে অনেক সময় সেবাগ্রহিতাদের একটু অপেক্ষা করতে হয়। আবার প্রতিটি বিভাগে সেবাগ্রহিতাদের সংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক সময় একটু অপেক্ষা করতে হয়। অপরদিকে অফিস শুরুর পর থেকেই কর্মকর্তার পরামর্শ ও সহযোগিতা নেওয়ার জন্য কক্ষের মধ্যে একাধিক সেবাগ্রহিতাদের প্রবেশ করে সেবা দিচ্ছেন কর্মকর্তা। একটি বিষয় যদি কেউ বুঝতে না পারেন তা বার বার বুঝিয়ে দেওয়ার চেস্টা করছেন কর্মকর্তা। অথচ আগে কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশের জন্য দালালদের মাধ্যমে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে যে কেউ যে কোন সময় কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ করে সেবা নিতে পারছেন। পাসপোর্ট অফিসের এমন দৃশ্য প্রতিনিয়তই চোখে পড়ার মতো। যার কারণে বর্তমানে নওগাঁ পাসপোর্ট অফিসে সেবার মান অনেকটাই বেড়েছে বলে জানান সেবাগ্রহিতারা। 

জেলার রাণীনগর উপজেলার বড়বড়িয়া গ্রামের কৃষক সুজন সরকার কাজের জন্য মালয়েশিয়ায় যাবেন। তাই তিনি নওগাঁ াফিসে পাসপোর্ট করতে এসেছেন। সকল কিছু ঠিকঠাক করে স্যারের রুমে গেলে স্যার তাকে চেয়ারে বসিয়ে এককাপ চা খাওয়ানোর পর স্যার তার আবেদনের কোথায় কোন সমস্যা ছিলো তা সমাধান করে দিয়েছেন। পাসপোর্ট বিষয়ে কাউকে এক টাকা না দিতেও স্যার তাকে নিষেধ করেছেন। পাসপোর্ট তৈরি হয়ে অফিসে আসার পর মোবাইল ফোনে একটি মেসেজ গেলে অফিসে এসে পাসপোর্ট নিয়ে যেতে বলেছেন স্যার। 

জেলার মান্দা উপজেলার মৈনম গ্রামের আরেক সেবাগ্রহিতা মকবুল হোসেন বলেন, এক সময় পাসপোর্ট অফিসে দালালদের অনুমতি ছাড়া ভিতরে প্রবেশ করা যায়নি। কিন্তু বর্তমানে যে কেউ স্যারের রুমে গিয়ে সেবা নিতে পারছেন। আমার একটি পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে তাই নতুন করে পাসপোর্ট করতে কি করতে হবে আমি তা সরাসরি অফিসের লোকদের কাছ থেকে জেনে নতুন করে আবেদন করে তা স্যারের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে এনে জমা দেওয়ার পর ছবি ও ফিঙ্গার দিয়েছি। বর্তমানে পাসপোর্ট অফিসের সেবা প্রদান অত্যন্ত জনবান্ধব। 

নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক হেলাল উদ্দিন বলেন, জনগুরুত্বপূর্ন এই অফিসটিকে জনবান্ধব করতে আমি সব সময় চেস্টা করে আসছি। এটি এমন এক অফিস সেখানে প্রতিদিন সমাজের নিচু থেকে উচু সকল শ্রেণির মানুষকে আমাদের সেবা দিতে হয়। তাই কেউ একটি বিষয় সহজেই বুঝতে পারেন আবার অনেককেই একটি বিষয় বার বার সহজ করে বুঝিয়ে দিতে হয় এটাই তো এই অফিসের দায়িত্বরত সকলের প্রধান দায়িত্ব। বিরক্ত হয়ে কাউকে কটু কথার মাধ্যমে কষ্ট দিলে পরে তা আমার বুকের মধ্যে প্রচন্ড ব্যথা দেয় তাই আমি সাধ্যমতো চেস্টা করি আমার কাছে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা শত শত সেবাগ্রহিতাদের একটু ভালোবাসার মাধ্যমে সেবা দিতে। এছাড়া আমি আমার কক্ষে থাকা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে প্রতিনিয়তই পুরো অফিসটি পর্যবেক্ষন করার চেস্টা করি। কোথাও কোন ভিড় চোখে পড়লে আমি নিজে সেখানে গিয়ে সমস্যা সমাধান করার চেস্টা করি। এছাড়াও আমি প্রতিদিন কোন এক সময় পুরো অফিসের সকল কিছু সরেজমিনে গিয়ে পর্যবেক্ষন করি।

তিনি আরো বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের ২৬তারিখে এই অফিসে যোগদানের পর থেকেই অফিসটিকে দালাল মুক্ত করে ভোগান্তি আর হয়রানী বিহীন সেবা প্রদানের এক আদর্শ জায়গা হিসেবে তৈরিতে কাজ করে আসছেন। তবে অনেক মানুষই ভয়ে অফিসে না এসে অন্য মানুষদের প্ররোচনায় পড়ে বেশি টাকা খরচ করেন। তাই আমি জেলাবাসীর কাছে একটি বার্তা পৌছে দিতে চাই যে পাসপোর্ট সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে যে কোন মানুষ সরাসরি আমার কক্ষে চলে আসবেন। কাউকে তেল মাখাতে হবে না, কাউকে ধরতে হবে না কাউকে একটি টাকা কিংবা এককাপ চা-ও খাওয়াতে হবে না। সরকারি অফিসে যে কোন মানুষ এসে ভোগান্তি, হয়রানী ও বিড়ম্বনা ছাড়াই সেবা পেতে পারেন সেই ধারা এবং ধারনাটি আমি এই পাসপোর্ট অফিসে প্রতিষ্ঠা করে যেতে চাই। তবে দিন দিন পাসপোর্টের চাহিদা যে ভাবে বেড়ে যাচ্ছে তাই জনবল সংকট কিছুটা পূরণ করা গেলে এই সেবার মান আরো কয়েকগুন বৃদ্ধি পেতো। 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়