মনজুর হাবীব মনজু, মহিমাগঞ্জ ►
কচি-কচি সবুজ বর্ণের সরিষা গাছের গালিচায় যেন ছেয়ে গেছে এবার ‘নল্লির বিল’ নামের বিস্তীর্ণ একটি জলাভূমির শত শত বিঘা জমি। ক’দিন পরেই রং বদলে হলুদ ফুলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৪ হাজার বিঘা জমি আয়তনের এ ভূমিকে বদলে দেবার প্রস্তুতিতে প্রতিদিনই বাড়ছে সরিষার জমির পরিধি। ইরি ধান নামের একটিমাত্র ফসল চাষের উপযোগী জমি হিসেবে চিহ্নিত এ বিলে নির্ধারিত ফসল রোপণের আগেই বাড়তি ফসল হিসেবে ঘরে উঠবে এবার সরিষা নামের এই তেলবীজটি। ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণের পাশাপশি চাষীদের চোখে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন আর নিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতছানি দেয়া এই ফসলের আবাদে ঝুঁকে পড়ছেন চাষীরা। সরিষার চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিনই বীজ থেকে চারা হয়ে উঁকি দিচ্ছে বিঘার পর বিঘা সরিষার ক্ষেত। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সরিষার চারা যেন সবুজ গালিচা হয়ে ঢেকে দিচ্ছে নল্লির বিল নামের জলাভূমিটির আদিগন্ত প্রান্তরকে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের কোল ঘেষে অবস্থান নেয়া সেই জলাভূমিটি এবার সাজতে শুরু করেছে নতুন সাজে। বিলের জমিতে কাজ করতে আসা চাষীরা জানান, প্রায় প্রতি বছরই বর্ষার শুরু থেকেই পানি জমতো দিগন্তবিস্তারি নিচু এই জলাভূমিটিতে। তারপর বন্যা এলে তো আর কথাই নাই। তখন একুল-ওকুল ছাপিযে ভাসিয়ে দিত শতশত একর জমিসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম। বর্ষা কাটিয়ে বন্যার পানি নেমে গেলেও কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কাদায় ডুবে থাকা জমিতে বোরো মৌসুমের ইরি ধান ছাড়া আর কোন আবাদ হতো না এখানে। বিলের উপরের দিকে কিছু জমিতে সরিষা চাষ করা হতো।
কিন্তু এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় একমাত্র ফসল ইরি ধান আবাদের মধ্যবর্তী সময়ের রবি মৌসুমে তেলবীজ সরিষা চাষের বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরিষা চাষের সম্ভাবনাকে ঘিরে এ বছর নতুন রূপে প্রস্তুত হচ্ছে জলাভূমি ‘নল্লির বিল’। উপজেলার মহিমাগঞ্জ, কোচাশহর ও শিবপুর ইউনিয়নের অংশজুড়ে অবস্থিত এ বিলে কেবলমাত্র বোরো মৌসুমে একটিমাত্র ধানের আবাদই হয়ে থাকে। তবে একটি মৌসুমেই ব্যপক উৎপাদনের কারণে বিলটি ধানের খনি হিসেবেও বিবেচিত এ এলাকায়।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই-মাহমুদ জানালেন, উত্তরাঞ্চলে সরিষা চাষে এবার বিপ্লব বয়ে আনবে এই নল্লির বিল। চলতি মৌসুমে এখানে প্রায় সাড়ে ৪শ’ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। চাষীরা বিপুল উৎসাহে সরিষা চাষে এগিয়ে আসায় একফসলী জমির এই নল্লির বিলে এবার ৭শ’ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অধিকাংশ জমিতেই এবার উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪ ও বারি-১৭ জাতের সরিষার বীজ বপণ করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এখানকার উৎপাদিত সরিষা দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণে এবার উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে।