• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৯-১০-২০২২, সময়ঃ বিকাল ০৫:২২

ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেই সৈয়দপুরে রেলওয়ের অবৈধ অভিযান, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ 

ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেই সৈয়দপুরে রেলওয়ের অবৈধ অভিযান, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ 

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: ►

উচ্ছেদ ও দখল মুক্ত করার ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেই সৈয়দপুরে রেলওয়ের অভিযান চালানো হয়েছে। আইন আদালতকে অবজ্ঞা করে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতেই অভিযানের নামে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করেছে সংশ্লিষ্টরা। নিয়মের দোহাই দিয়ে অভিযানে নামলেও পুরো প্রক্রিয়াই একপ্রকার ভাঁওতাবাজি। এজন্য এটি একেবারে অবৈধ ও অযোক্তিক বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। 

বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের 'শেখ সাদ কমপ্লেক্স' চত্বরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমন অভিযোগ করা হয়। এতে লিখিতভাবে বিস্তারিত তুলে ধরেন, শেখ সাদ রিয়েল স্টেট লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মো. আলিম মিন্টু। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন তাঁর আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের এ্যাডভোকেট শরিয়তুল্লাহ রায়হান, পৌর কাউন্সিলর বেলাল আহমেদ, রওশন হাবিব চৌধুরী, ভুক্তভোগী হুমায়ুন কবির মন্ডল হারুনুর রহমান সহ শতাধিক ভুক্তভোগী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সৈয়দপুর বিজনেস সিন্ডিকেটে

নিশাত আহমেদসহ (এসবিএস) অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।

শেখ আলিম বলেন, কোন প্রকার নোটিশ না দিয়েই হঠাৎ করে গত ১২ অক্টোবর সৈয়দপুর শহরের বাঙ্গালীপুর, নিয়ামতপুর ও মুন্সিপাড়া এলাকায় অভিযান চালায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ভুসম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্ব 

দেন। সাথে ছিলেন, পার্বতীপুর রেলওয়ে কাচারীর ফিল্ড কানুনগো জিয়াউল হক, সৈয়দপুর কারখানা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) আহসান উদ্দীন, সহকারী প্রকৌশলী (আইওডাব্লু) শরিফুল ইসলাম, সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সহকারী কমান্ডার আতিয়ার রহমান ও রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগের প্রকৌশলী (পিডাব্লু) সুলতান মৃধাসহ থানা পুলিশ ও আরএনবি অর্ধ শতাধিক রিজার্ভ ফোর্স। 

বিশাল বহর নিয়ে রেলওয়ের বেদখলি জমি উদ্ধারের নামে বিভিন্ন জায়গায় বাঁশের খুটি গেড়ে লাল নিশান লাগানোসহ প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, তালা দেয়া ও জরিমানা আদায় করেন। রেলওয়ের জায়গা, কোয়াটার কেউ অবৈধভাবে দখলকৃতদের ক্ষেত্রে গণবিজ্ঞপ্তি মাইকিং প্রচার চালিয়ে উচ্ছেদের অভিযান চালাতে পারেন। কিন্তু যারা বৈধভাবে লিজ নিয়েছেন বা যে সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান সেখানে কোনভাবেই তারা হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। 

অথচ তারা আইন আদালতকে উপেক্ষা করে নিয়মের দোহাই দিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে শেখ সাদ কমপ্লেক্সে আসেন। এই জায়গা রেলওয়ের দাবী করে দখলে নিতে তালা লাগানোর পায়তারা করেন। অথচ এই দাবীতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিজেরাই মামলা করেছেন। যা বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ কোর্ট, সৈয়দপুর, নীলফামারীতে এখনও বিচারাধীন। মামলা নিষ্পত্তি না হতেই তারা কোন আইনে এমন কাজ করলেন? এটা মূলতঃ ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা মাত্র। 

শেখ আলিম আরও বলেন, আমার এই ১৪১ শতক জমির ব্যক্তি মালিকানা ভারতবর্ষ আমল থেকে শুরু করে সর্বশেষ সৈয়দপুর বিজনেস সিন্ডিকেট নামক সংগঠনের নামে বৈধ কাগজপত্র দেখে নিশ্চিত হয়েই কোটি টাকা বিনিয়োগে কিনেছি। এরপর নিয়ম মাফিক খারিজ করে সরকারী সকল ফি পরিশোধ করেছি। প্রশ্ন হলো রেলওয়ের জমি হলে কি সাব রেজিষ্ট্রি ও উপজেলা ভুমি অফিস আমার নামে দলিল রেজিষ্ট্রি ও খারিজ সম্পাদন করে দিতো? তাছাড়া এতদিন ধরে হাতবদল হলেও কেন  পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির পরও রেলওয়ে তখন আপত্তি তোলেনি? 

শেখ সাদ কমপ্লেক্সের প্রজেক্ট ম্যানেজার সেলিম উদ্দিন বলেন, ওই দিন তাদের এমন অহেতুক হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানালে পার্বতীপুর রেলওয়ে কাচারীর ফিল্ড কানুনগো জিয়াউল হক আমাকে এককভাবে ডেকে নিয়ে গোপনে বলেন, এই ঝামেলা থেকে বাঁচতে হলে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তোমার বসকে দেখা করতে বলো। নয়তো সমস্যা হবে বলে ভয় দেখান। তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে কমপ্লেক্সের গেটে তালা লাগানোর হুমকিও দেন। এখনও বিভিন্ন মাধ্যমে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতা করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান শেখ মিন্টু। 

একইভাবে শেখ সাদ কমপ্লেক্সের আশেপাশের জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে রেলওয়ের করা মামলা চলমান। অথচ সেই জমিগুলোও দখলমুক্ত করার নামে লাল নিশানা লাগিয়ে দিয়ে অন্যদের লিজ দেয়া হয়েছে বলে অপপ্রচার চালিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মালিকদের। কিন্তু সকলেরই ওই জমির বৈধ দলিল, রেকর্ড, খাজনা, খারিজের ডকুমেন্ট আছে। তারপরও কানুনগো জিয়াউল হকের সিন্ডিকেটের লোকজন তাদেরকে সমঝোতার কথা বলছে। নয়তো বিশাল সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে যাবে বলেও ভাঁওতাবাজি করা হচ্ছে। 

এভাবেই মাঝে মাঝেই উচ্ছেদ অভিযানের হুজুগ তুলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন রেলওয়ে কর্মকর্তা। এতে আমি ক্ষুদ্ধ ও উদ্বিগ্ন। সেকারণেই আজ বিষয়টি তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন। সৈয়দপুরে রেলওয়ের হটকারী কর্মকাণ্ড বন্ধ করারও দাবী জানিয়ে তিনি প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করার আহ্বান জানান ভুক্তভোগীরা।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়