• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২০-১২-২০২২, সময়ঃ সন্ধ্যা ০৬:০৪

রেলওয়ের জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ সৈয়দপুর পৌরসভায় দুদকের তদন্তদল

রেলওয়ের জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ সৈয়দপুর পৌরসভায় দুদকের তদন্তদল

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি ►

রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ নিয়ে মামলার প্রেক্ষিতে নীলফামারীর সৈয়দপুরে তদন্তে নেমেছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দূদক)। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) পৌরসভাসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও বহুতল ভবনসমুহে তদন্ত কার্যক্রম চালানো হয়েছে। সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত চলা এই কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন দূদক রংপুর অফিসের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরিফ। সাথে ছিলেন উপ সহকারী পরিচালক সুশান্ত সাহা।

এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তারা শহরের রেলওয়ের জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণকারী আলোচিত দুইজন ব্যবসায়ীর ভবনসমুহ ও তৎসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও যান। সেইসাথে তাদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও সংগ্রহ করেন।

এসময় সহকারী পরিচালক হোসাইন শরিফ বলেন, মূলতঃ জমির মালিকানা নিয়ে রেলওয়ে ও পৌরসভার মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে মামলা চলমান। আদালতের নির্দেশে ইতোপূর্বে একটা সংক্ষিপ্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে এখন বিস্তারিত তথ্য তলব করা হয়েছে। সেজন্যই আমাদের আজ আসা। প্রধান কার্যালয়ের আদেশে এই তদন্ত কার্যক্রম বলে জানান তিনি। তবে তদন্তের প্রাপ্ত তথ্য এবং এর ভিত্তিতে মামলা হবে কি না সে বিষয়ে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

উপ সহকারী পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, রেলওয়ের সাথে পৌরসভার লিজ চুক্তি ৮ ও ৯ নং শর্তানুযায়ী শুধু জমি ব্যবহার করতে পারবে। কোন অবকাঠামো পরিবর্তন, সংষ্কার বা নতুন নির্মাণ করা যাবেনা। অথচ সব নিয়ম ভঙ্গ করে অসংখ্য বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে। এর সংখ্যা প্রায় চার শতাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির মালিকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে মামলা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেগুলোর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বলেন, আমার আমলে কোন ভবন নির্মানের নকশা অনুমোদন দেয়া হয়নি। আর আমাদের তদন্তে দূদক আসেনি। বরং বহুতল ভবন নির্মানকারীদের মধ্যে আলতাফ হোসেন ও ঠিকাদার জয়নাল আবেদীনের বহুতল ভবন বিষয়ে তদন্তে এসেছেন। ওই ভবনগুলোও ইতোপূর্বের মেয়র নকশা অনুমোদন দিয়েছেন।

শহরের প্রধান দুইটি সড়কের পাশে চলমান বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ কিভাবে হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এসবের কোন তথ্য তাঁর জানা নাই। অথচ প্রকাশ্যেই চলছে ৫ টি ভবন তৈরীর কাজ। একইভাবে তিনি মানববর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট বিষয়ে বলেন, এসকেএস ও ওয়াটার এইড এর সহযোগীতায় পৌরসভা এতবড় প্রকল্প দীর্ঘ দিন ধরে তৈরী করলো তখন রেলওয়ে কোন টু শব্দটি করেনি। আর এখন উৎপাদন শুরু হওয়ার পর দাবী করছেন রেলওয়ের জায়গায় কেন এনজিওকে ওই প্রজেক্ট করতে দেয়া হয়েছে? মামলা চলমান। শেষ হলেই বোঝা যাবে কে সঠিক।

শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, রেল ও পৌরসভার দ্বন্দ্বে মামলা। সেখানে আমাদের বলার কিছুই নাই। আমরা পৌরসভা থেকে বরাদ্দ নিয়ে নকশা অনুমোদন করেই ভবন করেছি। তাই এতে আমাদের কোন ত্রুটি নাই। তবুও দূদকে কে বা কারা অভিযোগ করেছে। সেজন্য তারা এপর্যন্ত ১০ বার তদন্ত করেছে। আবারও এসেছে। রেলওয়ের জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি কিনা তা সরাসরি তদন্ত করতেই দূদক কর্মকর্তারা তাদের সাথে আল আরাফা, ঢাকা ও মধুমতি ব্যাংকে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে এসংক্রান্ত কোন প্রমাণ পায়নি।

উল্লেখ্য, সৈয়দপুরকে বলা হয় রেলওয়ের শহর। এখানে ৯০ ভাগ জায়গাই রেলওয়ের। প্রায় ৮ শ একর জমিসহ কোয়াটার বাংলোও অবৈধ দখলদারদের দখলে। এর মধ্যে ২৫ একর ৭৫ শতক জমি পৌরসভা লিজ নিয়েছে। এই জায়গাতেই গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক বহুতল ভবন। যা রেলওয়ের লিজ আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। দূর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমেই এসব গড়ে উঠেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়