সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশেই বড় বড় অরে লেখা রয়েছে ‘ধন অর্জনের চেয়ে জ্ঞান অর্জন উত্তম, ‘যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত, ‘বেঁচে থাকতে করো কীর্তি মরলে হবে অমর স্মৃতি,‘ জ্ঞানীর নিদ্রা মূর্খের ইবাদতের চেয়ে উত্তম এই কথাগুলি যে আগত ব্যক্তিদেরকে থমকে দাঁড় করিয়ে দেয়।
কাটা মেহেদী গাছ দিয়ে তৈরি বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বড় অরে লেখা রয়েছে ৬৫নং সাবেক গুলিয়াড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রধান ফটক দিয়েই স্কুল ড্রেস পড়ে ছোট ছোট সোনামনিরা বইয়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। বিদ্যালয়ের মাঠ ঘেষা আরেকটি ফটো তৈরি করা হয়েছে কাটা মেহেদী গাছের ঢোগা মোড়ানো ফটক যা দৃষ্টিনন্দন বাগানের ফটক। প্রবেশ করেই চোখে পড়বে কাটা মেহেদী গাছ দিয়ে তৈরী সুসজ্জিত শহীদ মিনার, জাতীয় পতাকা, শাপলা ফুল, নৌকা, কুড়ে ঘর, ফুলের টপ, আয়না, সোফা সেট, টেবিল, হেলিকপ্টার, ফুটন্ত লাল টকটকে জবাফুল. গোলাপি জবা ফল, সাদা জবাফুল, কাটা মেহেদী গাছের বিভিন্ন জিনিসপত্র আর ফুলন্ত ফুলের বাগানটি যে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরকে ইশারায় ডাকছে। আর দর্শনাথীদেরকে মুগ্ধতায় ভরিয়ে দেয়।
সুসজ্জিত আর মনোমুগ্ধ বাগানদানি বিদ্যালয়ের উপস্থিত শিার্থীর সংখ্যা কম হলেও এই সুসজ্জিত কাটা মেহেদী গাছের গাছের বাগানের নেশায় ছুটে আসতে হয় শিক্ষার্থীদেরকে। সবুজের ঘেড়া বিদ্যালয়ের অপরূপ দৃশ্য আর মনোরম পরিবেশ ও লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে বাগানে সময় কাটানো শিক্ষকের সাথে নিজেরাই বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পানি ঢালার কাজটি করে থাকে ছাত্রছাত্ররা। এমন একটি বিদ্যালয় রয়েছে দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার ভাবকি ইউনিয়নের সাবেক গুলিয়াড়া গ্রামের ৬৫ নং সাবেক গুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান ছাত্র-ছাত্রীদের মননশীল উন্নয়নের জন্য নিয়মিত খেলাধুলা ও শিকদের আন্তরিকতায় বিদ্যালয়টি আজ জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে সুনাম অর্জন করতে শুরু করেছে। বিশেষ করে এই বিদ্যালয়ের ব্যতিক্রমী কাটা মেহেদী গাছ দিয়েই বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক মনোমুগ্ধ বাগান যেন আলাদাভাবে দৃষ্টিনন্দন বৃদ্ধি করেছে। অনেক দূর দূরন্ত থেকেও দর্শনার্থীরা এই বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করেছেন। এক সময় এই অজ গ্রামকে অনেকে না চিনলেও এখন সাবেক গুলিয়াড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাগানের সৌন্দর্যতার দেখার জন্যই এখন গ্রামটি পরিচিত হয়ে উঠছে ।
১৯৮৯ সালে এই গ্রামের কিছু শিানুরাগী মানুষ নিজস্ব প্রচেষ্টায় গ্রামের নাম অনুসারে সাবেক গুলিয়াড়া বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। ২০১৩ সালে সারা দেশের এই বিদ্যালয়টিকেও সরকার জাতীয়করণ করেন। তখন থেকেই এই বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছে ৬৫ নং সাবেক গুলিয়াড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। করোনা কালিন সময়ে সারাদেশের ন্যায় এই বিদ্যালয়টিও বন্ধ থাকার সময়ে বিদ্যালয়ের শোভা বর্ধনের কাজটি করেছেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক আব্দুল কুদ্দুস।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মুক্ত খাতুন, সুমন দাস, তানিয়ারা বলেন, আমাদের আব্দুল কুদ্দুস স্যারের প্রচেষ্ঠায় আমাদের বিদ্যালয়ের সুনাম ছড়াচ্ছে। আমরাও স্যারের সাথে আমাদের বাগানের পরিচর্চা করি। আমাদের এই বাগান আমরাই পরিস্কার করি। পানি দেই। গাছ ছাটাই এর কাজটি স্যার নিজেই করে থাকেন।
সহকারী শিক্ষক সুধা রানী রায় বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস স্যার এই বাগানটি বেশি পরির্চচা করেন থাকেন। আমাদের এই স্কুলের বাগানটি আলাদাভাবে আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। স্থানীয় তহিদুল ইসলাম বলেন, এই ভিন্ন রকমের বাগানের অনুভুতি ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও স্থানীয় গ্রাম বাসিদেরকেও কাছে টানে। খাদ্য মানুষের বেঁচে থাকার চাহিদা পূরণ করে আর বাগান মানুষের মনের চাহিদা পূরণ করে।
প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা থেকেই বিদ্যালয়ের মাঠে নিজ উদ্যোগে এই কাটা মেহেদী গাছের লতা দিয়েই বিদ্যালটিকে সাজানো চেষ্টা করছি। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যতটুকু পরিচিতি হয়েছে তার চেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেছি এই বিদ্যালয়ে গাছের বাগান তৈরী করে।