ভবতোষ রায় মনা ►
গাইবান্ধা পৌরসভার অলি গলিতে এখন সবজির ফেরিওয়ালারাদের দেখা মেলে। সবচি লাগবে, সবজি, আলু, বেগুন, শশা, মূলা, লালশাক, নাপাশাক, লাউশাকসহ বিভিন্ন সবজির নাম ধরে এমনই হাঁক ডাক শোনা যায়।
মানুষের নিত্যদিনের চাহিদা পূরনে টাটকা শাক-সবজি ভ্যানে নিয়ে সবজি ফেরিওয়ালা এখন দারুন ভূমিকা পালন করছে। কষ্ট করে অন্যদের প্রয়োজন মেটাতে কাকডাকা ভোরে পাইকারি বাজার এসে লাউ কুমড়ো পটল শশা করল্লাসহ বিভিন্ন রকমের শাক সবজি ভ্যানে সাজিয়ে নিয়ে ছুটছে। আগের চেয়ে এদের সংখ্যা বেড়েছে। বাজারে যাবার ঝামেলা এড়াতে মানুষ দোড়গোড়ায় এসব কেনাকাটা করছে। বাড়ির গৃহিনীরাও হাতের নাগালে পছন্দের সবজি কিনছেন।
পরিবারের সদস্যদের দিচ্ছেন টাটকা শাক সবজির স্বাদ। অনেক গৃহিনীর মন্তব্য অন্তত ফ্রিজে রাখা শাক সবজির চেয়ে এসবের স্বাদই আলাদা। এখন আর সপ্তাহের বাজার করার দরকার নেই। রোজ কিনবো রোজ খাব।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ১নং রেলগেট সংলগ্ন এলাকা, দাশ বেকারির মোড়, খন্দকার মোড়, মাস্টারপাড়াসহ শহরের বিভিন্ন মোড়েে মোড়ে প্রায় ১৫-২০ জন ব্যক্তি ভ্যানগাড়িতে শাক সবজির পসরা সাজিয়ে বেচাকেনা করতে দেখা যায়। গ্রাহকদের ডেকে ডেকে নিজেদের পণ্য বিক্রির চেষ্টা করছেন তারা।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল, বাজারের শাকসবজির দামের সাথে ভ্যানওয়ালাদের দামের ফারাক খুব একটা বেশি না। তাছাড়া এখন মাঠে মাঠে প্রচুর শাক সবজি কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা কম। এখানকার উৎপাদিত শাকসবজি রাজধানীসহ বিভিন্নস্থানে চলে যায়।
স্থানীয় বাজারে যা কিছু আসছে খুব কমদামে এসব পণ্য বিক্রি করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে। শহরের বাজারে পটল, করল্লা, শসাসহ বিভিন্ন শাক সবজির দাম কেজিপ্রতি ত্রিশ চল্লিশ টাকার মধ্যে রয়েছে।
একটা বড় লাউ কুমড়ো বিক্রি হচ্ছে পনের বিশ টাকায়। কোন শাকের কেজি কুড়ি টাকার বেশি নয়। পেয়াজের ঝাঁজ একেবারে কমে কেজিপ্রতি পঁচিশ টাকায় নেমেছে। শহরের বাজারে যখন এমন দাম তখন সহজেই অনুমেয় উৎপাদক পর্যায়ে দামের কি অবস্থা। ক্রেতার অভাবে লাউ কুমড়োগুলোর বয়স বাড়ছে। মাচাতে ঝুলছে।
ফেরিওয়ালাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনে রিক্সা-ভ্যান চালায়। সন্ধ্যার আগে জমি থেকে পাইকারীভাবে বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি কিনে ভ্যানে সাজিয়ে তারা গাইবান্ধা শহরের মোড়ে মোড়ে বিক্রি করেন। শাকসবজি বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে তাদের সংসার ভালো ভাবেই চলে বলে তারা জানান।
সবজি বিক্রেতা মজিবর রহমান জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে শহরে ভ্যানগাড়ি চালানোর পাশাপাশি একটু ভালোভাবে চলার জন্য বাধ্য হয়ে সন্ধ্যার পর সবজি বিক্রির ব্যবসায় নেমেছি। সারাদিন যা কামাই করি তা দিয়ে ক্ষেত থেকে কম দামে সবজি কিনে এনে ভ্যানে বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে ভালোই সংসার চলছে।
আয়নাল হক নামের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, বাজারে সব জিনিসের দামেই বৃদ্ধি পেয়েছে। সারাদিন যে কামাই করি তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই লাজ-লজ্জা শরম ভেঙে বাধ্য হয়ে সবজির ফেরিওয়ালা হয়েছি। স্ত্রী-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে তারা এমন পেশা বেছে নিয়েছেন বলে জানান।