শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর ►
পরিবেশের সুরক্ষায় মাটি দিয়ে ইট তৈরী ও আগুনে পোড়ানো বন্ধের লক্ষে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আলোকে প্রচলিত ইটভাটার পরিবর্তে কনক্রিট ব্লক নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী অনেক উদ্যোক্তা ইতোমধ্যে গড়ে তুলেছেন সিমেন্ট বালু, নুড়ি পাথরের সংমিশ্রণে ইট তৈরীর ফ্যাক্টরী।
কিন্তু নির্দেশনার সাথে সাথে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় উৎপাদিত পন্য বিপণনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ফ্যাক্টরী মালিকরা।এতে সম্ভাবনাময় ও পরিবেশসম্মত এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্ষেত্রটি বিকশিত হওয়ার আগেই মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এতে হতাশা দেখা দিয়েছে উদ্যোক্তাদের মাঝে। অথচ উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এমন প্রকল্প খুবই প্রয়োজন।
উদ্যোক্তাদের একজন নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাসুম আহমেদ।ইয়াহামা কোম্পানির স্থানীয় ডিলার মাসুম মটরস এর স্বত্বাধিকারী এই উদ্যোক্তা জানান,
বিশাল অংকের অর্থের বিনিয়োগকৃত ইটভাটা ফেলে রেখে নতুন করে অর্থলগ্নির মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব কনক্রিট ব্লক প্রকল্প করেছি।উপজেলার অদূরে তারাগঞ্জের খিয়ারজুম্মা শেরমস্ত এলাকায় নিজ ইটভাটার পাশেই এম আর বি নামে ফ্যাক্টরীটি স্থাপিত।
তিনি বলেন, পরিবেশের দূষণ রোধ ও কৃষি জমির মাটির উর্বরতা রক্ষায় সরকারের উদ্যোগে সহযোগীতা করতেই এই পদক্ষেপ। কিন্তু যাদের নির্দেশনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছি বিপণনে তাদের কোন পৃষ্টপোষকতা নাই। একারণে দুই বছর ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কেননা আমার ফ্যাক্টরীতে প্রতিদিন গড়েে ১০ হাজার পিস ইট তৈরী করা যায়। কিন্তু তা করা সম্ভব হচ্ছেনা।
কারণ দৈনিক বিক্রয় হয় মাত্র ৪ শ' থেকে ৫ শ' পিস। তাই সক্ষমতা অনুুুুযায়ী ইট তৈরী করলে উৎপাদিত মাল মাসের পর মাস পড়ে থাকছে। এতে পুঁজি আটকে যাচ্ছে। একারণে উৎপাদন কমিয়ে দিতে হয়েছে। কিন্তু ৫ থেকে ৭ জন শ্রমিককে নিয়মিত পুরো মজুরিই দিতে হচ্ছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। বিনিময়কৃত অর্থ উঠে না আসায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।
তিনি বলেন, বিদেশী কোম্পানিগুলো এদেশে বাস্তবায়নকৃত নির্মাণ প্রকল্পে ব্লক ব্যবহার করলেও সরকারী বিভিন্ন আবাসন, আশ্রয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণসহ কোন প্রকল্পেই নিজেদের নির্দেশনা কার্যকর করা হচ্ছেনা। অথচ সরকার যদি এক্ষেেত্রে একটুু সচেষ্ট হয় তাহলে আমরা যেমন উপকৃত হবো। তেমনি কর্মসংস্থানও হবে। সেইসাথে পরিবেশ রক্ষার জন্য কার্যকর সফলতাও আসবে।
এজন্য আপাতত শুধু সরকারী প্রকল্পগুলোতেই কনক্রিট ব্লক ব্যবহার নিশ্চিত করলেই সৃষ্ট অচলাবস্থা দূর হবে বলে তিনি মনে করেন। এইভাবে সরকারী কার্যক্রমের ফলে সাধারণ মানুষের মাঝেও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী তৈরী হবে। তাছাড়া মাটির ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহারে গ্রাহকও লাভবান হবেন। কেননা ইটের চেয়ে ব্লক মূল্য সাশ্রয়ী, মানসম্পন্ন ও স্থায়িত্বের দিক দিয়ে খুবই চমৎকার।
তাঁর মতে উদ্যোক্তারা দেশ ও মানুষের জন্য উপকারী, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। কিন্তু সরকার নির্দেশনা দিয়েই ক্ষান্ত। পরবর্তী করণীয় বিষয়ে নির্বিকার। যার ফলে একজনের দূর্দশা দেখে অন্যরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে। এতে আগামীর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপযুক্ত প্রযুক্তি নির্ভর প্রকল্প পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশ পিছিয়ে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের ধারাবাহিক সহযোগীতা অব্যাহত থাকলে একসময় এই সেক্টরটি লাভজনক হিসেবে দাঁড়াতে পারবে। নয়তো ফসলী জমির মাটি কেটে উর্বরা শক্তি নষ্টের সাথে ভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ চলতেই থাকবে। যা কোনভাবেই আমাদের দেশের জন্য শুভকর হবেনা। তাই তিনি এব্যাপারে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ দাবী করেছেন।