• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৩-১২-২০২২, সময়ঃ সন্ধ্যা ০৬:১৫

স্মৃতিপটে ঘড়িয়ালডাঙ্গা রাজমন্দির

স্মৃতিপটে ঘড়িয়ালডাঙ্গা রাজমন্দির

রমেশ চন্দ্র সরকার ►

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ গ্রামে অবস্থিত ঘড়িয়ালডাঙ্গা রাজমন্দির।  কালের সাক্ষী হয়ে ঐতিহ্য ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এ রাজমন্দিরটি আজ বিলুপ্তির পথে। এমন অবস্থায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে রাজমন্দিরটি দ্রুত সংস্কার ও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের দাবি স্থানীয়দের।

ইতিহাস থেকে জানা যায়,প্রায় ২০০ বছর আগে তৎকালীন জমিদার শরৎচন্দ্র চৌধুরী তার প্রাসাদের সন্নিকটে ইট ও সুরকি দ্বারা এটি নির্মাণ করেন। এক সময় বছর জুড়ে দুর্গোৎসব, লক্ষ্মী,বাসন্তী,গণেশ,কার্তিক,সরস্বতী,কালী,শিতলী,শীব পূজা,রথযাত্রা,উল্টোরথসহ নানা পূজা-অর্চনা এবং ধর্মীয় উৎসবে মুখরিত থাকত মন্দিরটি। সকাল-সন্ধ্যা বাজত শঙ্খধ্বনি। মন্দিরে জমিদারবাড়ির নারীরা দলবেঁধে পূজা করত। দূর-দূরান্তের পূজারিরাও আসতেন এখানে। জমিদার প্রথা বিলুপ্তির পরও অনেক দিন চলছিল পূজা-অর্চনা।

কিন্তু স্বাধীনতার আগে জমিদারের উত্তরসূরিরা স-পরিবারে ভারতে পাড়ি জমান। এতে করে বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরের সব ধর্মীয় কর্মযজ্ঞ। ফলে মন্দিরের সেই সোনালি দিনগুলো এখন শুধুই অতীত।

১০০ ফুট গোলাকার ও ৫০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট নিখুঁত গাঁথুনি দ্বারা তৈরি মন্দিরটির নির্মাণশৈলীতে রয়েছে রাজ ঐতিহ্যের স্মৃতিচিহ্ন,যা দর্শনার্থীদের ব্যাপক মন কাড়ে। আট দরজা বিশিষ্ট মন্দিরের ভেতর ও বাইরে অপরূপ কারুকার্যে গড়া পুরো অবকাঠামোটিই এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এক সময় এ মন্দিরের উচ্চ শিখর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের শহর-গ্রামও দেখা যেত বলে জানায় এলাকাবাসী।

কথিত রয়েছে,মন্দিরের মাথায় একটি মূল্যবান কষ্টিপাথর ও ভেতরে মূল্যবান সামগ্রী ছিল,যা কয়েক বছর আগে রাতের আঁধারে চুরি হয়ে যায়। রাজ প্রাসাদের শেষ চিহ্নটুকুও এখন আর অবশিষ্ট নেই। এমন অবস্থায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে রাজমন্দিরটি দ্রুত সংস্কার ও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের দাবি সনাতন ধর্মাবলম্বী ও স্থানীয়দের।

স্থানীয় বাসিন্দা কল্পনা রানী (৫৮) জানান,স্বামীর বাড়ি এখানে থাকায় বিয়ের পর থেকে এ মন্দিরটি দেখে আসছি। সময় আর প্রকৃতির দৈন্যতায় রাজমন্দিরটির আজ বেহাল দশা। সরকার যদি মন্দিরটি সংস্কার করত তাহলে এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যারা আছি সবাই পূজা-অর্চনা করতে পারতাম।

ঘড়িয়ালডাঙ্গা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক নবীনচন্দ্র সরকার বলেন,জমিদার শরৎচন্দ্র চৌধুরীর ৬২টি তালুক ছিল। অনেকেই ৬২ জমিদার বলে চিনত। সরকারের কাছে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি রাজমন্দিরটি সংস্করণ করে শরৎচন্দ্র জমিদারের ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে যেন তুলে ধরা হয়। কেননা এটা বাংলাদেশ সরকারের একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ।

ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ কর্মকার জানান, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে রাজমন্দিরটি, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ উদ্যোগ গ্রহণ করলে ঐতিহ্যের কিছু স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করা যেত।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়