মাধুকর ডেস্ক►
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি প্রায় সাড়ে ৪৮ শতাংশ ভোটার। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নতুন একটি জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
গত বছরের অক্টোবরে বিআইজিডির একই ধরনের একটি জরিপে ৩৮ শতাংশ উত্তরদাতা সিদ্ধান্তহীনতার কথা জানিয়েছিলেন।
অর্থাৎ, গত ৮ মাসের ব্যবধানে সিদ্ধান্তহীন ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।
আজ (সোমবার, ১১ আগস্ট) রাজধানীর শেরে-ই-বাংলা নগরে জাতীয় আর্কাইভ মিলনায়তনে বিআইজিডি এবং নাগরিক সংস্কার প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম আয়োজিত যৌথ অনুষ্ঠানে নতুন জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
‘পালস সার্ভে ৩’ শীর্ষক জরিপে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়ন, সংস্কার, নির্বাচন ও রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা’র মূল্যায়ন করা হয়েছে।
গত ১-২০ জুলাই দেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রামের ৫ হাজার ৪৮৯ জনের টেলিফোন সাক্ষাৎকার নিয়ে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। বিআইজিডির ফেলো অব প্র্যাকটিস সৈয়দা সেলিনা আজিজ জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন।
ফলাফল অনুযায়ী, প্রায় ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা তাদের পছন্দের দলের নাম প্রকাশ করতে চান না।
আর ১২ শতাংশ উত্তরদাতা বিএনপিকে, ১০ দশমিক ৪ শতাংশ জামায়াতে ইসলামী এবং ২ দশমিক ৮ শতাংশ জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ভোট দিতে চান বলে জানিয়েছেন।
আর ১ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা ভোটই দিতে চান না বলে জানিয়েছেন।
আট মাস আগের জরিপে বিএনপিকে ভোট দিতে চেয়েছিলেন ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ, জামায়াতকে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং এনসিপিকে ২ শতাংশ উত্তরদাতা ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন অক্টোবরে ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং নতুন জরিপে তা কমে ৭ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
নতুন জরিপে অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রতি সমর্থন ২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ০ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কমেছে জাতীয় পার্টির প্রতি সমর্থন।
তবে, উত্তরদাতাদের নির্বাচনী এলাকায় কোন দল জিতবে প্রশ্নে ৩৮ শতাংশ বিএনপির, ১৩ শতাংশ জামায়াত, ১ শতাংশ এনসিপি এবং ৭ শতাংশ আওয়ামী লীগের কথা উল্লেখ করেন।
উত্তরদাতাদের ৫৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৭ শতাংশ নারী এবং ৭৩ শতাংশ গ্রামাঞ্চলের এবং ২৭ শতাংশ শহরাঞ্চলের।
বাংলাদেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে কিনা জানতে চাইলে, ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে, দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে এগিয়ে চলেছে যা অক্টোবরের ৫৬ শতাংশ থেকে কম।
আবার, ৪৫ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন যে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে চলছে, যা আগের ৪৩ শতাংশ থেকে সামান্য বেশি।
উত্তরদাতারা অন্তর্বর্তী সরকারকে ১০০-এর মধ্যে ৬৩ নম্বর দিয়েছেন, অক্টোবরে যা ছিল ৬৮।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ৫১ শতাংশ উত্তরদাতা নির্বাচনের আগে ব্যাপক সংস্কার চান, ১৭ শতাংশ শুধু জরুরি সংস্কারের পরে নির্বাচন সমর্থন করছেন এবং ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা সংস্কার ছাড়াই নির্বাচনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। ১৩ শতাংশ এই বিষয়ে কোনো মতামত দেননি।
সংস্কার অগ্রাধিকারের বিষয়ে ৩০ শতাংশ আইন-শৃঙ্খলার উন্নতির কথা উল্লেখ করেন, ১৯ শতাংশ রাজনৈতিক অস্থিরতা কমানো এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের আহ্বান জানান, ১৭ শতাংশ দুর্নীতি মোকাবিলার কথা বলেছেন।
অন্যদিকে ৩২ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, তারা এ বছরের ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন চান। ১২ শতাংশ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে, ১১ শতাংশ ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এবং ২৫ শতাংশ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর বা তার পরে নির্বাচন চান।
৭০ শতাংশ উত্তরদাতার বিশ্বাস পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। ১৫ শতাংশ এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন এবং ১৪ শতাংশ অনিশ্চিত।