তিস্তা আকন্দ, সুন্দরগঞ্জ►
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার-কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার সঙ্গে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর ওপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুর নামকরণ ‘শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু’ করার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। আগামী ২০ আগষ্ট সেতুটি উদ্বোধন করা হবে।
আজ (সোমবার, ১৮ আগস্ট) দুপুরে সেতু এলাকায় ‘শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু’ বাস্তবায়ন কমিটি ও এলাকাবাসী আয়োজনে ঘন্টাব্যাপী এ অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই শতাধিক এলাকাবাসী অংশ গ্রহন করেন।
এসময় বক্তব্য দেন হাসান মাসুদ খান বাদল, শরিফুল ইসলাম, রাখিকুল রহমান, বিপুল মিয়া, শামীম মন্ডল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর এবং কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মধ্যবর্তী তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এ সেতুটি বাস্তবায়নের জন্য ১৯৯৫ সাল থেকে শরিতুল্যাহ মাস্টার নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। উপহাস ও নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি তিন দশক ধরে আন্দোলন চালিয়ে যান। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে তাঁর এই প্রচেষ্টা আজ সফল হয়েছে।
তারা আরও বলেন, সেতুটি নির্মিত হওয়ার আগে তিস্তা নদী পারাপারে স্থানীয় মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে শরিতুল্যাহ মাস্টার ‘তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করেন এবং জনসাধারণের কাছে সেতুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তাঁর নেতৃত্ব, প্রচেষ্টা এবং জনগণের সাড়া মিলিয়ে অবশেষে সেতু বাস্তবায়িত হয়। এটি শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নয়, বরং এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বক্তারা বলেন, এই সেতু কেবল একটি অবকাঠামো নয়; এটি শরিতুল্যাহ মাস্টারের তিন দশকের স্বপ্ন, আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতীক। তার স্মৃতিকে সম্মান জানাতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তার অবদান তুলে ধরতে সেতুটির নামকরণ ‘শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু’ করার জোর দাবি জানান তারা।
গত ১০ আগষ্ট পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ শামীম বেপারী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তিস্তা পিসি গার্ডার সেতুর নাম ‘মওলানা ভাসানী সেতু’র নামকরণের বিষয়টি জানা গেছে।
উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন, সেতুটির নামকরণ ‘শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু’ করায় এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী মনের দিক থেকে বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না।
উপজেলার পাঁচপীর বাজারস্থ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এস এ এস এর নিবার্হী পরিচালক এ বি এম নূরুল আকতার মজনু বলেন, সেতুটির নামকরণ যদি ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে সেতুটির নামকরণ ‘শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু’ করার জন্য এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলীর কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীরবাজার- কুড়িগ্রামের চিলমারি উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগকারি সড়কে তিস্তা নদীর উপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করছেন চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেতুটি নির্মাণে অর্থ প্রদান করছেন সৌদি ডেভেলোপম্যান্ট ফান্ড। এতে ব্যয়হবে ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি গাইবান্ধার সার্কিট হাউজে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতুরটি ভিত্তি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৮ সালের পর ২০২১ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে সংযোগ সড়কসহ সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।
তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আ.ব.ম শরিতুল্যাহ মাস্টার বলেন, ২০০০ সাল থেকে তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলন শুরু কর হয়। ২০১২ সালে এসে তিস্তা সেতু নির্মাণ আলোর মুখ দেখতে শুরু করে। এর পর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম প্রামানিকের সার্বিক সহযোগিতায় ২০১৪ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজের সূচনা হয়।
দ্বিতীয়বারের মতো ২০২০ সালের ৬ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর-চিলমারী উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর ওপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধীত) প্রকল্প অনুমোদন দেয়।