Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২৫-১০-২০২৩, সময়ঃ দুপুর ০২:১৫

আগাম আলু চাষে ব্যস্ত নীলফামারীর কৃষকরা

আগাম আলু চাষে ব্যস্ত নীলফামারীর কৃষকরা

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী

উত্তরের কৃষি অর্থনীতি নির্ভর জেলা নীলফামারী। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে কৃষিকাজ করে। জেলার উর্বর দোআঁশ, বেলে দোআঁশ মাটিতে বিভিন্ন রকম ফসল ফলানো যায়। দীর্ঘ দিন ধরে এ জেলার কৃষকেরা অল্পপুঁজিতে আগাম আলু চাষ করে আসছে। যার আলু যত আগে উঠবে, সে তত বেশি লাভবান হবেন। মৌসুমের শুরুতে নতুন আলু ভোক্তাকে দিতে পারলে চড়া বাজারমূল্য পেয়ে দ্বিগুণ লাভবান হবেন। এজন্য এবারও প্রস্তুতি চলছে। 

ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে স্বল্পমেয়াদি আগাম আউশ, আমন ধান কাটা ও মাড়াই শেষ করে সেই জমিতে আগাম আলু রোপণের পালা। যদিও এখনও অধিকাংশ জমিতে আমন ধান পাকার অপেক্ষায়। তবুও যে জমির ধান কাটা হয়েছে সময় নষ্ট না করে সেখানে আগাম জাতের আলু রোপণের জন্য হিমাগার থেকে বীজ সংগ্রহ, জমি প্রস্তত, সার প্রয়োগসহ বিভিন্ন কাজে দিনভর ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। 

জেলার সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা সহ সদর ও জলঢাকা উপজেলার প্রান্তিক ও মাঝারি চাষিরা ইতোমধ্যে মাঠে সক্রিয়। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে পৌঁছে দিতে ও ভালো দাম পাওয়ার স্বপ্নে আগেভাগে উচুঁ সমতল জমিতে এই আলু রোপণ করে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, আলু রোপণকে ঘিরে মাঠজুড়ে কৃষকের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দ্বিগুণ লাভের আশায় মাঠে কেউবা জমি তৈরি, আগাছা পরিষ্কার ও বীজ সংগ্রহ নিয়ে নিজেদের মতো ব্যস্ত। বিশেষ করে সৈয়দপুর উপজেলার শ্বাসকান্দর, বোতলাগাড়ী, পোড়ারহাট, খাতামধুপুর, কামারপুকুর, বাঙালীপুর এলাকায় চলছে এই কর্মযজ্ঞ। 

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ২১ হাজার ৭১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে আগাম আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় আলু চাষ বৃদ্ধি পাবে। দোআঁশ মাটিতে ৫০-৫৫ দিনে উত্তোলনযোগ্য সেভেন জাতের আগাম আলুর বীজ রোপণে ওই সময়ের  মধ্যেই তোলার মত হয়ে ওঠে। 

জানা গেছে, বিগত বছরে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে আলু চাষ করা হলেও এবছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেরিতে চাষ করতে হচ্ছে কৃষককে। তাছাড়া জমিগুলো ত্রি-ফসলী হিসেবে ব্যবহার করেছে কৃষক। প্রতি বছর আগাম আলু চাষ করে স্বাবলম্বীও হয়েছেন অনেক প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষক। বাড়তি দামের আশায় চাষিরা আগেভাগেই আলু রোপণ করছেন।

সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ব্রক্ষ্মোত্তর এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর ৪ বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করেছি। এবার আলুর বীজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি কিনতে হয়েছে। তাতে আগেভাগে আলু উত্তোলন করতে পারলে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বাজার ধরা যাবে। এর থেকে কম দাম পেলে আমাদের আলু চাষ করে লোকসানে পড়তে হবে।

জলঢাকা উপজেলার কচুকাটা এলাকার  মহসিন আলী আগাম আলু চাষ করেছেন ৫ বিঘা জমিতে। তিনি বলেন, আমাদের এদিকের ডাঙা জমিগুলো একদম উঁচু এবং বালুমিশ্রিত। ভারী বৃষ্টিপাত হলেও তেমন ভয় থাকে না। তাই আগেভাগে দ্বিগুণ লাভের আশায় আগাম আলু চাষ করছি।

নীলফামারী সদরের সংগলশী ইউনিয়নের তোফাজ্জল হোসেনও বলেন, যেভাবে সার কিটনাশকের দাম তাতে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আগাম আলু আবাদ করে আমরা চিন্তিত থাকি। যদি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দাম না পাই তাহলে আলু আবাদ করে লস হবে।

একই এলাকার আনিছুর রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আলুর বীজের দাম তিন গুণ বেড়েছে। বেড়েছে কৃষি উপকরণের দাম। এবার আগাম বৃষ্টি হওয়ায় অনেক লাগানো আলু পচেঁ গেছে। আলুর দাম না পেলে আমরা কৃষক মারা যাবো। আমরা কৃষক আগাম আলু চাষ করে চিন্তিত থাকি দাম পাবো কী না। সরকারের কাছে আবেদন যাতে আগাম আলুর দাম পাই।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের দক্ষিণ বাহাগিলী গ্রামের মমতাজ আলী বলেন, প্রত্যেক বছরের মতো এবারও ১১ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণের প্রস্ততি নিয়েছি। এর মধ্যে সেভেন জাতের চার বিঘা জমিতে বাকি সাত বিঘা দুই-একদিনের মধ্যে রোপণ শেষ করবো। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৫৮ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আলু ঘরে তুলতে পারবো। বাজারদর ভালো পেলে সার, বীজ, পরিবহন ও শ্রমিক বাবদ খরচ বাদে ১১ বিঘায় লাভ হবে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত।

একই এলাকার আব্দুল জব্বার ১৩ বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করছেন। তিনি বলেন, এ এলাকার মাটি উঁচু এবং বালুমিশ্রিত হওয়ায় বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে আগাম আলু চাষে তেমন কোনও ভয় থাকে না। ফলন কম হলেও রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে চড়া দামে আলু বিক্রি করে দ্বিগুণ লাভবান হওয়া যায়।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া আগাম আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রতি বছর এ এলাকার কৃষক আগাম আলু চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করে থাকেন। গত বছরের চেয়ে এবার ৪০০ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

একই অভিমত জানান সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষণ। তিনি বলেন, সৈয়দপুরের কৃষকরা বরাবরই সব ধরনের সবজির আগাম আবাদ করেন। আলু চাষেও তারা সব সময় এগিয়ে। এবারও শুরু হয়েছে আগাম আলু চাষ। ইতোমধ্যে উচু জমি ও আমন কাটা জমিতে আলু লাগিয়েছে কৃষকরা। আশাব্যঞ্জক ফলন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস. এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর ২১ হাজার ৭১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে আগাম আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় আলু চাষ বৃদ্ধি পাবে।  বর্তমান আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উঁচু জমিতে আলুচাষে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিচু জমিতে আবহাওয়া দেখে রোপণের কথা বলা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad