Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৯-৬-২০২৫, সময়ঃ সকাল ০৮:২৩

আম বিক্রির ওজনের নৈরাজ্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত নওগাঁর আমচাষীরা

আম বিক্রির ওজনের নৈরাজ্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত নওগাঁর আমচাষীরা

আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ  ►  

দেশ ও বিদেশের মাটিতে নওগাঁয় উৎপাদিত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট আম্রপালি, নাক ফজলীসহ বিভিন্ন জাতের আমের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর আম কেনার ক্ষেত্রে ওজনের বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছিলেন আমচাষীরা। অবশেষে আম বিক্রির ওজনের নৈরাজ্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত হলেন রাজশাহী বিভাগের আম উৎপাদনের জেলাসমূহ। পূর্বে আম পচনশীল/কাঁচামাল ইত্যাদি অজুহাতে আড়তদারসহ কতিপয় মধ্যস্তত্বভোগীরা আমচাষীদের ঠকিয়ে ৪২ থেকে ৫৫কেজিতে মণ হিসেবে আম কিনতো। ফলে মধ্যস্তত্বভোগীদের মাধ্যমে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা অধিক লাভবান হলেও চরম ভাবে প্রতারিত হতেন আমচাষীরা। 

এমন অবস্থা থেকে আমচাষীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে মুক্ত করার লক্ষ্যে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে গত বুধবার রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, কানসাটের আমচাষী, আড়তদার ও ব্যবসায়ীগণের সঙ্গে আলোচনা শেষে রাজশাহী বিভাগের সকল জেলায় একই পদ্ধতিতে আম ক্রয়/বিক্রয় করার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আলোচনা পর্যালোচনা শেষে সভায় সর্বসম্মতভাবে ৭টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় সে সিদ্ধান্তগুলো মাঠ পর্যায়ে শুক্রবার (০৬জুন) থেকে কার্যকর করা হচ্ছে। ইতিমধ্যই রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে একটি প্রেসনোটের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের আম উৎপাদনে এগিয়ে থাকা নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, আম ব্যবসায়ী, আড়তদার, আমচাষী সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য এবং ব্যাপক প্রচারের লক্ষ্যে প্রেরণ করা হয়েছে। বিভাগের আমচাষীদের রক্ষার্থে এমন যুগান্তকারী উদ্দ্যোগ করায় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছে নওগাঁর সচেতন মহল ও আমচাষীরা। 

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে চলতি বছর জেলার ৩০হাজার ৩০০হেক্টর জমির বাগানে আম্রপালিসহ বিভিন্ন আম চাষ হয়েছে। এছাড়া ব্যানানা ম্যাংগো, মিয়াজাকি, কাটিমন, গৌড়মতি, বারি-৪ আমসহ দেশি-বিদেশি প্রায় ১৬ জাতের আম চাষ করেছেন চাষিরা। যেখান থেকে ৩লাখ ৮৬হাজার মেট্টিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে কৃষি বিভাগ। এছাড়া চলতি বছর ৪হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই গত ২২ মে থেকে বাজারে আসতে শুরু করেছে নওগাঁর আম। 

জেলার সাপাহার উপজেলার আমচাষী মো: আনোয়ার পারভেজ জানান, এমন পদক্ষেপের কারণে নওগাঁর আমচাষীরা নতুন ভাবে উজ্জীবিত হয়েছে। বিগত সময়ে ওজনের নামে আমচাষীদের গলাকাটা হতো। আমচাষীদের রক্ত চুষে অধিক লাভবান হতেন মধ্যস্তত্বভোগী, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। এমন অভিশাপ থেকে মুক্ত করায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। তবে এই সিদ্ধান্তগুলোর সুফল যেন জেলার সকল আমচাষীরা পায় সেই বিষয়ে প্রশাসনকে মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং করার বিশেষ অনুরোধ জানান এই আমচাষী।   

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানান, বর্তমানে রাজশাহী বিভাগের মধ্যে আম উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে নওগাঁ জেলা। প্রতিবছরই নওগাঁয় আম বাগান সৃজন হচ্ছে। ইতিমধ্যই নওগাঁয় উৎপাদিত নাক ফজলী আম জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। নওগাঁর ব্র্যান্ডিং হচ্ছে আম। কিন্তু আম উৎপাদনের শুরু থেকেই আম বিক্রি করতে এসে আমচাষীরা আড়তদার, ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে ওজনের ক্ষেত্রে জিম্মি ছিলেন। আম যেহেতু পচনশীল পণ্য তাই চাষীরা বাধ্য হয়েই আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের কাছে পূর্বের বছরগুলোয় ৫২ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করতো। প্রতি বছরই ওজন নিয়ে চাষীদের অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে ধীরে ধীরে প্রশাসনের কঠোর তৎপরতার কারণে মণের ওজন ৫২ কেজি থেকে কমিয়ে সর্বশেষ ৪২ কেজিতে আনা হয়। এরপরও আমের ওজন নিয়ে নৈরাজ্য চলতেই থাকে। 

ওজনে স্বচ্ছতা ফেরাতে সম্প্রতি রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার আমচাষী, আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে স্ব স্ব জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আলোচনায় বসেন বিভাগীয় কমিশনার। সেই সভায় আলোচনান্তে সবার সম্মতিতে ১। জাত/গ্রেড/গুণগত মান বিবেচনায় আম প্রতি কেজি দরে খুচরা/পাইকারী যে কোন পর্যায়ে ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে, ২। আড়তদারগণ ক্রয়/বিক্রয় কোন পর্যায়েই কোনরুপ কমিশন পাবেন না, ৩। সারাদেশে একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে পত্র দেয়া হবে, ৪। এই সিদ্ধান্ত ০৬-০৬-২৫খ্রি. তারিখ থেকে রাজশাহী বিভাগের সকল জায়গায় একযোগে বাস্তবায়িত হবে, ৫। সম্মিলিতভাবে সবাই সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন এবং যার যার অবস্থান থেকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন, ৬। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজনে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ করতে হবে এবং ৭। এই সিদ্ধান্তসমূহ ব্যাপকভাবে প্রচার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। 
তিনি বলেন এই সিদ্ধান্তগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে অবশ্যই আমচাষীরা ব্যাপক ভাবে লাভবান হবেন এবং বছরের পর বছর কতিপয় মধ্যস্বত্বভোগীদের জিম্মায় থাকা আমের ওজনের নৈরাজ্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবেন নওগাঁসহ বিভাগের সকল আমচাষীরা। ফলে আগামীতে আম চাষের সম্ভাবনা আরো উজ্জ্বল হবে। মাঠ পর্যায়ে গৃহিত এই সিদ্ধান্তগুলো সঠিক ভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পুরো আম বিক্রির মৌসুমজুড়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে ওঠা আম ক্রয় ও বিক্রয়ের বাজারগুলো এবং সকল আড়তগুলোয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং অব্যাহত রাখা হবে। জেলার আমচাষীদের স্বার্থ রক্ষায় ও জেলায় উৎপাদিত আম সঠিক নিয়মে বাজারজাতকরণে স্বচ্ছতা ফেরাতে এবং দেশসহ বিদেশের মাটিতে নওগাঁর আমের সুনাম বজায় রাখতে জেলা প্রশাসন বদ্ধ পরিকর। যারা নওগাঁয় উৎপাদিত আমের সুনাম নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত থাকবেন এবং এই সিদ্ধান্তগুলো অমান্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান এই কর্মকর্তা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad