Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৮-৪-২০২৩, সময়ঃ সকাল ০৮:৪৭

ঈদেও নেই বিশেষ ট্রেন, সিট বরাদ্দ কম, যাত্রী দুর্ভোগ 

ঈদেও নেই বিশেষ ট্রেন, সিট বরাদ্দ কম, যাত্রী দুর্ভোগ 

ভবতোষ রায় মনা ►

দেশজুড়ে এবারের ঈদ যাত্রা সহজ করতে ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেনের বরাদ্দ থাকলেও ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের সান্তাহার, বগুড়া, গাইবান্ধা, কাউনিয়া ও লালমনিরহাট রেলরুটে ঈদ উপলক্ষে নেই কোন বিশেষ ট্রেন। এ কারণে ক্ষুদ্ধ গাইবান্ধাবাসী। শুধু তাই নয়, বছরের পর বছর ধরে গাইবান্ধার তিনটি রেলস্টেশন থেকে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানের টিকিট সংকটের কারণেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ অঞ্চলের যাত্রীদের। 

গাইবান্ধা-ঢাকা ৪৮০ কিলোমিটার পথে সাধারণ টিকিটের পাশাপাশি বার্থ ও এসির সুযোগ না থাকায় অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী যাত্রীরা আরও দুর্ভোগে পড়েছেন। এর ফলে রেল বিভাগ বিপুলসংখ্যক যাত্রীর পরিবহন সেবা দিতে না পারায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। টিকিট স্বল্পতা অন্যদিকে অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট পেতেও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগের টিকিট দু-এক দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। সড়ক পথে ঢাকা যেতে সময়, নিরাপত্তাসহ নানা বিড়ম্বনার কারণে রেলপথে যাওয়ার আগ্রহ যাত্রীদের অনেক বেশি। কিন্তু আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় যাত্রীরা সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গাইবান্ধা থেকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য রয়েছে মাত্র দুটি আন্তঃনগর ট্রেন। একটি হচ্ছে লালমনি এক্সপ্রেস অন্যটি রংপুর এক্সপ্রেস। ট্রেন দুটি এ জেলার ওপর দিয়ে সপ্তাহে ছয় দিন চলাচল করে। কিন্তু যাত্রীর চাপ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ দেড় যুগেও ট্রেনের সংখ্যা বাড়েনি। বাড়েনি আসন সংখ্যাও।

আন্তঃনগর ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ৫৯৩টি আসনের মধ্যে গাইবান্ধা জেলার বোনারপাড়া জংশন, গাইবান্ধা স্টেশন ও বামনডাঙ্গা স্টেশনের জন্য ১৬৬টি আসন বরাদ্দ। যার মধ্যে গাইবান্ধা রেলস্টেশনে ১৫০টি আসনের চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ ৮৭টি, বোনারপাড়ায় ১০০টি আসনের চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ ৪০টি এবং বামনডাঙ্গায় ৯০টি আসনের চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ মাত্র ৩৯টি। এছাড়া ‘আন্তঃনগর রংপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনের ৯৪০টি আসনের মধ্যে গাইবান্ধা রেলস্টেশনসহ তিন স্টেশনের জন্য আড়াইশ’ আসনের চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ মাত্র ১৪১টি আসন। যার মধ্যে গাইবান্ধা রেলস্টেশনে ৬৭টি, বোনারপাড়ায় ৪০ এবং বামনডাঙ্গায় ৩৪টি আসন।

প্রবীন গণমাধ্যম কর্মী সৈয়দ নুরুল আলম জাহাঙ্গীর বলেন, দীর্ঘ দেড় যুগ আগে ২০০৪ সালে এ জেলার ওপর দিয়ে একটি ট্রেন ও ২০১১ সালে আরেকটি ট্রেন দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ এক যুগ পার হলেও এ রুটে আর কোনো নতুন ট্রেন দেওয়া হয়নি কিংবা গাইবান্ধার জন্য আসন সংখ্যাও বাড়ানো হয়নি। সেবার মান বাড়াতে এ পথে আরও ট্রেন বাড়ানো ও আসন্ন ঈদ যাত্রায় গাইবান্ধাবাসীর জন্য বিশেষ ট্রেন চালুর দাবি করেন তিনি। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌতম কুমার মোদক বলেন, আমি খুবিই মর্মাহত হয়েছি যে, বৃহত্তর রংপুরের মধ্যে গাইবান্ধার লোক বেশি ঢাকায় কর্মরত রয়েছে। সেখানে গাইবান্ধার জন্য কোন বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ নেই। তবে আমি জোর দাবি জানাচ্ছি ঈদ উপলক্ষে গাইবান্ধার মানুষের জন্য বিশেষ ট্রেনের বরাদ্দ দিবেন রেল কর্তৃপক্ষ।

নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু আপে করে বলেন, এ জেলার মানুষ হিসেবে আমরা চরম অবহেলার শিকার। প্রতি বছর ঈদে ঢাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ বাড়িতে আসে। অনেক সময় তারা বাস-ট্রেনে সুযোগ না পেয়ে কাভার্ডভ্যান কিংবা মালবাহী গাড়িতে করে আসতে গিয়ে প্রাণও হারায়। উত্তরাঞ্চলের অবহেলিত জনপদ গাইবান্ধার যাত্রী সংখ্যার কথা চিন্তা করে গাইবান্ধার জন্য ট্রেনের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিশেষ ট্রেন চালু করা অত্যন্ত জরুরি। 

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম বলেন, দু’টি আন্তঃনগর ট্রেনে গাইবান্ধার জন্য আসন বরাদ্দ ১৫৪টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ স্টেশন থেকে ঢাকার যাওয়ার যে যাত্রীর চাপ রয়েছে তাতে কমপে আরও চারটি ট্রেন প্রয়োজন। কারণ প্রতিদিন গাইবান্ধা থেকে প্রায় ৩০০ বাস ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করে। নতুন করে চার থেকে পাঁচটি ট্রেন যোগ করা হলে এই অঞ্চলের ট্রেন যাত্রীদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. নুরুন্নবী ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আসন্ন ঈদে এই রুটের ‘আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস’ ও ‘আন্তঃনগর রংপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনে দুইটি করে অতিরিক্ত বগি (কোচ) বাড়ানোর কথা রয়েছে। লালমনিরহাটের যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী এই রুটে রাত্রিকালীন আরও একটি ট্রেন চালু করা প্রয়োজন। সেেেত্র ‘তিন বিঘা করিডোর’ নামক একটি ট্রেন চালু হওয়ার কথা রয়েছে। সেটি চালু হলে এই অঞ্চলের মানুষের রেলসেবার উন্নয়ন ঘটবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad