ভবতোষ রায় মনা ►
গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার অসহায় মানুষদের জন্য এবারও ৭৮টি গরু কোরবানি করা হয়েছে। দু‘উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের ২ হাজার ৭৩০ জন দু:স্থ, অসহায় ও দরিদ্র প্রত্যক পরিবারের মাঝে ২ কেজি করে গরুর মাংস বিতরণ করা হয়।
ঈদের নামাজ আদায় শেষে ৭৮টি পশু কোরবানি দেওয়া হয়। পরে তা টুকরো টুকরো করে ২ কেজি করে রাতভর প্যাকেট করা হয়।
আজ ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সাঘাটা উপজেলার হাটভরতখালী এসকেএস নূতনকুঁড়ি বিদ্যাপীঠ স্কুল মাঠে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়ন ৪১০, ভরতখালী ২৯৪, সাঘাটা ইউনিয়নের ৫৯১টি, জুমারবাড়ীতে ২১০টি এবং কামালেরপাড়ায় ১৭৫টি ও ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নে ৪৫৪টি, ফুলছড়ি ইউনিয়নে ৩১৫টি, উড়িয়া ইউনিয়নে ১৪১টি এবং উদাখালীতে ১৪০টি মোট ২৭৩০টি পরিবারের মাঝে এই মাংস বিতরণ করা হয়।
প্রতিবছরের মতো এ বছরও ৭৮টি গরু কোরবানি দেওয়া হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে হতদরিদ্র, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবাদের তালিকা করা হয়। সেইসব তালিকাভুক্ত প্রতিটি পরিবারকে ২ কেজি করে মাংস দেয় সংগঠনটি। আর এসব পরিবারের নারী-পুরুষগুলো সুশৃঙ্খলভাবে এসব মাংস সংগ্রহ করেন।
ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের অর্থায়নে বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থা এসকেএস ফাউণ্ডেশন এই মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রায় ২০ বছরের অধিক সময় ধরে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ এবং এসকেএস ফাউণ্ডেশন প্রতিবছর ঈদের দ্বিতীয় দিন এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন। কোরবানির মাংস বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এসকেএস ফাউণ্ডেশনের নির্বাহী প্রধান রাসেল আহম্মেদ লিটন, ইসলামিক রিলিফ জার্মান প্রতিনিধি সাইমা মিরভিক রোগে, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের সমন্বয়কারী মো. জাকির হোসেন, এসকেএস ফাউণ্ডেশনের সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের সমন্বয়কারী আবু সাঈদ সুমন, সাঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইট, ভরতখালী ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন মন্ডল প্রমুখ।
এদিকে দুই কেজি করে মাংস পেয়ে খুশি অসহায়রা। মাংস নিতে আসা চর গোবিন্দীপুর গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা জাহেদা বেওয়া বলেন, ‘হামরা (আমরা) বাবা গরিব মানুষ, গোসতো (মাংস) কিনি খাবার পাই না, এসকেএস হামাক দুই কেজি গরুর গোসতো দিছে, হামি (আমি) খুব খুশি। এই গোসতো ছোল পোল গুলাক নিয়া মজা করি আন্দি খামো।’
একই এলাকার দিনমজুর ভিক্ষু ব্যাপারি বলেন, গরুর মাংসের অনেক দাম। আমাদের মত দিনমজুরের কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। গতবারও এসকেএস দুই কেজি মাংস দিয়েছিল আজও পেলাম। মনের মধ্যে অনেক আনন্দ লাগছে। অন্তত দু-তিন বেলা নাতি-পুতি নিয়ে তৃপ্তি করে খেতে পারব।
সাঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইট বলেন, প্রতি বছর ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ এবং এসকেএসের এমন উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। এলাকার দরিদ্র-অসহায় মানুষের মাঝে ঈদের সময় মাংস বিতরণ একটি মানবিক উদ্যোগ। আমি অনুরোধ করবো আগামী দিনে আয়োজক দাতা সংস্থা যেন আরও বেশি সংখ্যক পরিবারকে এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে।
ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের সমন্বয়কারী মো. জাকির হোসেন, প্রায় ২০ বছর ধরে এসকেএস ফাউণ্ডেশন ও ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের সহযোগিতায় কোরবানির মাংস বিতরণ কর্মসূচি চলছে। এবারও এলাকার অসহায়দের মাঝে দুই কেজি করে মাংস বিতরণ করা হয়েছে। এই মানবিক কর্মসূচি ভবিষ্যতেও চলবে।
এসকেএস ফাউণ্ডেশনের নির্বাহী প্রধান রাসেল আহম্মেদ লিটন বলেন, দু’উপজেলায় নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এই মানুষগুলোকে এটুকু সহায়তা করতে পেরে আমরা আনন্দিত এবং গর্বিত, এ জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদেও প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আমরা চাই সকলে একসাথে মিলে এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে ক্ষতির হাত থেকে ফিরিয়ে সহনশীল করতে।