Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৩-৯-২০২৩, সময়ঃ সকাল ০৯:৫৬

ছোলপোল, গরু-বাছুর নিয়্যা পোকা-মাকড়ের সাথে যুদ্ধ করে থাকপার নচি

ছোলপোল, গরু-বাছুর নিয়্যা পোকা-মাকড়ের সাথে যুদ্ধ করে থাকপার নচি

ভবতোষ রায় মনা ►

সাত দিন ধরি পানি বন্দি হয়্যা আচি, কেউও একবার খোঁজো নিবার আইলো না। ছোলপোল, গরু-বাছুর নিয়্যা পোকা-মাকড়ের সাথে যুদ্ধ করে থাকপার নচি। ঘরের চতুর পাকে বানের পানি থৈই থৈই করছে। ভয়ে ছোল দু’টাক ওর দাদির কাছে থুয়া আচ্চি। এভাবে নিজ ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বললেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের জিয়াডাঙ্গা গ্রামের চায়না বেগম (২৪)। 

শুধু এ গ্রামের চায়না বেগম নয়, একই অবস্থা কাজলী আক্তার (২৪) আব্দুস সালাম (৩০), ফাতেমা বেগম (৪৫)সহ আরও অনেকের। কাজলী আক্তার বলেন, কষ্টের মধ্যেই চলছে সংসার। পানির মধ্যেই বসে থাকি, কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো। চলাফেরা কষ্টেতো, বসার জায়গা নাই, মাচা তৈরি করে রান্নাবাড়ি করছি। 

আব্দুস সালাম (৩০) জানান, কয়দিন ধরিয়া খুব কষ্ট করি আচি। রান্নাবান্না নাই, ছোলপোলসহ না খায়া আচি। চেয়ারম্যান, মেম্বাররাতো একবারো খোঁজ নিবার আলো না। হামার দু:খ কষ্ট দেখার কেউ নাই। ফাতেমা বেগম (৪৫) বলেন, এই মুর্হুতে খাওয়া-দাওয়ার কষ্টটাই বেশি। চারোপাশে বানের পানির কারণে কোন কাজকর্ম নাই। কারো বাড়িত যায়া যে এ্যনা খাবার আনবো, তারও উপায়ও নাই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার এরেন্ডবাড়ি, ফজলুপুর, ফুলছড়ি এ তিনটি ইউনিয়ন একবারে চরাঞ্চলে অবস্থিত। অবশিষ্ট গজারিয়া, উদাখালী, উড়িয়া ও কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা চরাঞ্চলে পড়েছে। অব্যাহত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ার কারণে উপজেলার এরেন্ডাবাড়ির পশ্চিম জিগাবাড়ি, পশ্চিম আলগারচর, পশ্চিম ডাকাতিয়ার চর, চর চৌমহন, আনন্দবাড়ি, ভাটিয়াপাড়া, সন্যাসীর চর, তিনথোপা, পাগলার চর, দক্ষিণ হরিচন্ডি, চর হরিচন্ডি, ফজলুপুর ইউনিয়নের গুপ্তমনি, মধ্য খাটিয়ামারী, নিশ্চিন্তপুর, উত্তর খাটিয়ামারী, মধ্য খাটিয়ামারী, ফুলছড়ি ইউনিয়নের গাবগাছি, খঞ্চাপাড়া, জামিরা, পেপুলিয়া, গজারিয়া ইউনিয়নের জিয়াডাংগা, ভাজনডাংগা, কটকগাছা, চর কাতলামারী, গলনা, কঞ্চিপাড়ার ছাতারকান্দি, রসুলপুর, উড়িয়া ইউনিয়নের চর রতনপুর, মধ্য উড়িয়া, কালাসোনা, উত্তর উড়িয়া, রতনপুর এলাকার ৭ হাজার ২০টি পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে জানান ফুলছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: শহিদুজ্জামান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিন্টু মিয়া জানান, বন্যার কারণে আমনের খেতসহ ১২০ হেক্টর জমির শাক-সবজি ও অন্যান্য ফসল তলিয়ে গেছে। 

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল ইসলাম জানান,  ব্রহ্মপুত্র নদের পানি রবিবার সকাল ফুলছড়ির তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

গজারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো: খোরশেদ আলী খান বলেন, ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এসব বানভাসি পরিবারের তালিকা প্রস্তত করে সংশিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে বন্যা কবলিত পরিবার গুলোর মাঝে তা বিতরণ করা হবে। 

এ প্রসঙ্গে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিসুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বন্যা মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের পূর্ব প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। উপজেলায় ২৩টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।’ বন্যা কবলিসংত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার ও জিআর-এর চাল বিতরণের প্রস্ততি চলছে।
 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad