Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • ২ ঘন্টা আগে

জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সম্পূর্ণ ভাষণ

জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সম্পূর্ণ ভাষণ

মাধুকর ডেস্ক►

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বিটিভি নিউজ ও বাংলাদেশ বেতার প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করে।

অনুষ্ঠান সূচি অনুযায়ী, নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় ইউএনজিএ অধিবেশন পুনরায় শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধিবেশনে ১০ম বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন।

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং রোহিঙ্গা সংকট তুলে ধরেন।

এর আগে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, অধ্যাপক ইউনূস তাঁর ভাষণে গত ১৪ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম এবং দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানাবেন।

তিনি আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোও বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরবেন।

প্রেস সচিব বলেন, এক্ষেত্রে ‘মূল বার্তা হলো- আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য এবং উৎসবমুখর নির্বাচন।’

নিচে ভাষণের পুর্ণ বিবরণ তুলে ধরা হলো:

‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’

মাননীয় সভাপতি,

আসসালামু আলাইকুম ও শুভ অপরাহ্ণ!

জাতিসংঘের ইতিহাসে পঞ্চম নারী হিসেবে সাধারণ পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রথমেই আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এ দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আপনাকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা প্রদান করবে।

একই সাথে জাতিসংঘ সনদের আট দশক পূর্তি উপলক্ষ্যে এই মহান পরিষদে উপস্থিত সকল সদস্য রাষ্ট্রকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এবারের অধিবেশন অতীত দর্শন ও ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি— উভয়ের জন্যই বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

গত আট দশক ধরে জাতিসংঘ ধারাবাহিকভাবে তার কর্মপরিধি সম্প্রসারিত করেছে এবং নানা ক্ষেত্রে আরো গভীরভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা, মানবাধিকার, বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন, ন্যায়বিচার, ন্যায্যতা ও সমতা প্রসারে জাতিসংঘ অনস্বীকার্য ভূমিকা রেখেছে। জাতিসংঘের কারণেই আজ বিশ্বের ১২০ টি দেশের প্রায় ১৩ কোটি বিপদাপন্ন মানুষকে জরুরি খাদ্য ও মৌলিক মানবিক সহায়তা, এবং ৪৫ শতাংশ শিশু-কে টিকা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।

 

জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বহুপাক্ষিক সহযোগিতায় বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, টিকা এবং অন্যান্য জীবনরক্ষাকারী সেবা ও সরঞ্জামের যোগান দিয়ে দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

পাশাপাশি, গত কয়েক দশকে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংঘাত নিরসন এবং বহু বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতিসংঘের সীমাবদ্ধতাও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। তবু সামগ্রিকভাবে জাতিসংঘের ভূমিকা মানবজাতির জন্য ইতিবাচক  ও কল্যাণকর।

মাননীয় সভাপতি,

গত বছর, আপনাদের এই মহান সভায় আমি দাঁড়িয়েছিলাম সদ্য গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত একটি দেশের রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা আপনাদের শোনানোর জন্য। আজ আমি এই রূপান্তরের অগ্রযাত্রায় আমরা কতটুকু অগ্রসর হতে পেরেছি তা বলবো।

পৃথিবীর প্রতি ১০০ জনের মধ্যে তিনজনের মতো বাংলাদেশে বাস করে। কিন্তু সেকারণে অথবা ভূ-রাজনৈতিকভাবে বিশ্বের একটি গুরুত্ব্বপূর্ণ অবস্থানে বাংলাদেশ রয়েছে বলে আমাদের এ ইতিহাস জানার দরকার, তা কিন্তু নয়।

বরং এ কারণে বাংলাদেশের এই বর্ণনাটি গুরুত্বপূর্ণ যে তা সাধারণ মানুষের অসাধারণ ক্ষমতার উপর আস্থা তৈরি করবে, এ কারণে বর্ণনাটি গুরুত্বপূর্ণ যে তা বিশ্বের সকল দেশের মধ্যে আশার সঞ্চার করবে, যে সংকট যত গভীরই হোক না কেন বা তার নিরসন যত অসম্ভবই মনে হোক না কেন, কখনই তা থেকে উত্তরণের পথ হারিয়ে যায় না।

মাননীয় সভাপতি,

সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ জন্ম লাভ করে। কিন্তু যে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা বিশাল আত্নত্যাগ করেছিলাম তা গত পাঁচ দশকে বার বার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। বারবার আমাদের ছেলেমেয়েদের নেতৃত্বে আমাদের জনগণকে অসংখ্য ত্যাগ স্বীকার করে সে অধিকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হয়েছে।

এই বছর আমরা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর প্রথম বার্ষিকী পালন করেছি—যে অভ্যুত্থানে আমাদের তরুণসমাজ স্বৈরাচারকে পরাভূত করেছিল, যার ফলে আমরা বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের অভিযাত্রা নতুনভাবে শুরু করতে পেরেছি। সেই বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে ও আমার সহকর্মীদের। ভেঙেপড়া রাষ্ট্র কাঠামোকে পুনর্গঠন করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য প্রয়োজন ছিল ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের। যে বিপুল জনসমর্থনের মাধ্যমে আমরা দায়িত্ব পেয়েছিলাম, তার প্রেক্ষাপটে আমাদের জন্যে সহজ পথ ছিল নির্বাহী আদেশে সংস্কার কাজগুলো করা। কিন্তু আমরা বেছে নেই কঠিন পথ—অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পথ।

আমাদের লক্ষ্য ছিল ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা—যেখানে আর কোনো স্বৈরশাসকের আবির্ভাব হবে না, কোনো নির্বাচিত নেতা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক স্বরূপকে ক্ষুণ্ন করতে পারবে না, কিংবা রাষ্ট্র ও জনগণের রক্ষকরা ভক্ষকে পরিণত হতে পারবে না।

শাসনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম, নারী অধিকারসহ সকল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার জন্য আমরা ১১টি স্বাধীন সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠা করি। কমিশনগুলো জনমত যাচাই ও গভীর পর্যালোচনা করে বিস্তারিত সংস্কার কার্যক্রম সুপারিশ করে।

এ সংস্কার সুপারিশগুলো টেকসইভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমরা একটি জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন গঠন করি যারা ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল ও জোটকে নিয়ে আলোচনায় বসে। এ কমিশনের লক্ষ্য ছিল সংস্কার প্রস্তাবগুলোর প্রতি দলমত নির্বিশেষে একটি টেকসই সামাজিক অঙ্গীকার তৈরি করা। আমাদের এই অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ সফল হয়। আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে সকলে মিলে “জুলাই ঘোষণা”-র মাধ্যমে এই সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি আমাদের সময়াবদ্ধ অঙ্গীকার ব্যক্ত করি। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে যেই দলই জনগণের সমর্থন পাক না কেন, সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে আর কোনো অনিশ্চয়তার অবকাশ থাকবে না।

আপনারা জানেন যে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পাশাপাশি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করবার জন্য আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে নাগরিকবান্ধব সংস্কার চালিয়ে যাচ্ছি।

মাননীয় সভাপতি,

গত বছর দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আমি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে আমন্ত্রণ জানাই পতিত স্বৈরশাসক কর্তৃক সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নৃশংসতার চিত্র উদ্ঘাটন করার জন্য। তারা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্যে যে সুপারিশমালা দিয়েছে, তা আমরা আমাদের জাতীয় সংস্কার কার্যক্রমে যুক্ত করেছি।

গত বছর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পূর্বেই আমরা গুম সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগ দিয়েছিলাম। এখন এর বিধানসমূহ জাতীয়ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। এ বছর, আমরা জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রোটোকলে যোগ দিয়েছি  এবং এর বাস্তবায়নে একটি স্বাধীন প্রতিরোধমূলক জাতীয় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি।

নিবর্তনমূলক স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা হতে মানবাধিকার সুরক্ষাকারী একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা আমাদের দেশে তিন বছর মেয়াদে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের একটি মিশন পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছি যা ইতোমধ্যেই কার্যক্রম শুরু করেছে।

আমাদের এ সকল পদক্ষেপ ও অঙ্গীকার জনগণের প্রত্যাশারই প্রতিফলন। আর এ প্রত্যাশা মূলত একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী সমাজ গড়ে তোলারই প্রত্যাশা।

মাননীয় সভাপতি,

আমাদের উন্নয়ন কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে—সুশাসন, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন।

বিগত দেড় দশকের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি যে জবাবদিহিতা ছাড়া যে কোনো উন্নয়ন ক্ষণস্থায়ী ও ভঙ্গুর। রাজনৈতিক হীনস্বার্থ ও দুর্নীতির উদ্দেশ্যে গৃহীত অবকাঠামো প্রকল্প শুধু যে অর্থনীতির উপরই চাপ বাড়ায় তা নয়, তা জনগণের কোনো কল্যাণও করে না। দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা একে একে আবিষ্কার করি দুর্নীতি ও জনগণের সম্পদ চুরি কি ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছিল এবং তার ফলশ্রুতিতে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা কি ভয়ানক নাজুক ও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল।

 

আমরা এর অবসান ঘটাচ্ছি যেন আর কখনোই উন্নয়নকে জনগণের সম্পদ আত্মসাতের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা না যায়। দেশের নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মজবুত করতে আমরা সংস্কারমূলক কিছু কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্কার হলো রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার সংস্কার— যেখানে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংস্থাকে পৃথক করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে, এবং রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পাবে। এই উদ্যোগগুলো সদ্যসমাপ্ত ঋঋউ৪ সম্মেলনে গৃহীত সেভিয়া অঙ্গীকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আমরা আশা করি যে, বাংলাদেশে যেমন সেভিয়া অঙ্গীকারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংস্কার করবার চেষ্টা করছি, তেমনি উন্নত বিশ্বও সেভিয়ার সামষ্টিক অঙ্গীকার অনুসারে তাদের দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হবে।

একই সাথে আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থায় বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনার সংস্কার, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক কর সহযোগিতার বৈশ্বিক কাঠামো, অবৈধ আর্থিক প্রবাহ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অবৈধ ও দুর্নীতিলব্ধ অর্থ ও পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারেও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মাননীয় সভাপতি,

দেশের পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার করা বর্তমানে আমাদের অন্যতম শীর্ষ অগ্রাধিকার। গত ১৫ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি ডলার অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আমরা নিরলসভাবে এই সম্পদ ফেরত আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনি প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের এই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দৃঢ় সদিচ্ছা ছাড়া আমরা পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধারে সফল হব না। বিশ্বের বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশ থেকে সম্পদের এই অবৈধ পাচার কার্যকরীভাবে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিধি বিধানগুলো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেন এ  বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ স্থানান্তরে উৎসাহিত করছে।

তাই, যেসব দেশ ও প্রতিষ্ঠান এ পাচারকৃত সম্পদ গচ্ছিত রাখবার সুযোগ দিচ্ছে, তাদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এই অপরাধের শরিক না হয়— এ সম্পদ তার প্রকৃত মালিককে অর্থাৎ কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ করদাতাদের নিকট ফিরিয়ে দিন। আমি উন্নয়নশীল দেশ হতে সম্পদ পাচার রোধে কঠোর আন্তর্জাতিক বিধি বিধান প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিতের প্রস্তাব করছি।

মাননীয় সভাপতি,

রাজস্বখাতের ঐতিহাসিক সংস্কারের পাশাপাশি আমরা বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি, ব্যাংক খাতে অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ, নতুন ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ ও আসন্ন ডিপোজিট প্রটেকশন অধ্যাদেশের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা আনছি; পুঁজিবাজারে সংস্কার টাস্কফোর্স ও শক্তিশালী তদন্তব্যবস্থার মাধ্যমে তদারকি আধুনিকীকরণ করেছি। সরকারি ক্রয়ব্যবস্থায় ডিজিটাল টেন্ডারিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং স্বার্থের সংঘাত সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন পাবলিক অ্যাকাউন্টস অডিট অধ্যাদেশের মাধ্যমে জবাবদিহিতা আরও জোরদার করা হয়েছে। শুধুমাত্র আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জনের সীমাবদ্ধ না থেকে আমরা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলছি: বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো এখন ১৯টি সংস্থাকে একীভূত করে কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজ করছে; দ্রুত বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিশেষায়িত বাণিজ্য আদালত গঠিত হয়েছে; বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সাবলীলভাবে প্রদানের জন্য সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষগুলোকে একই ছাদের নীচে নিয়ে আসা হয়েছে এবং ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে; এবং এফডিআই হিটম্যাপ ও জাতীয় সেমিকন্ডাক্টর টাস্কফোর্স বিনিয়োগকারীদের কাছে উচ্চ সম্ভাবনাময় খাতগুলোর তথ্য সহজ ও স্বচ্ছভাবে তুলে ধরছে। বাণিজ্য লজিস্টিকসেও উন্নতি ঘটছে—চট্টগ্রাম বন্দরে গত আগস্টে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ২৭.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, যা দক্ষতার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নির্দেশ করে। এসব উদ্যোগ অর্থনৈতিক শাসনব্যবস্থাকে যেমন সুদৃঢ় করছে, তেমনি বিনিয়োগকেও নিরাপদ করছে। এসব সংস্কারের ফলে বাংলাদেশ এখন টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন এক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।

এর পাশাপাশি, এত স্বল্প সময়ে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পিছনে আমাদের প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁরা বিদেশের মাটিতে কঠোর পরিশ্রম করে প্রতি মাসে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।

শুধু বাংলাদেশেই নয়, স্বাগতিক দেশগুলোতেও তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। তাঁরা সেখানে বহুল চাহিদাসম্পন্ন সেবা প্রদান করছেন। এটি তাই আমাদের জন্য যেমন, তেমনি স্বাগতিক দেশগুলোর জন্যও সমানভাবে লাভজনক। উভয় দেশের জন্যই তা উপকারী।

 

এ প্রসঙ্গে জানাতে চাই, আমরা শ্রম অধিকার সংস্কার এগিয়ে নিচ্ছি। ইতোমধ্যেই স্বাধীন শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে; বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে ট্রেড ইউনিয়ন প্রক্রিয়া সহজ করা, মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি, এবং আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয় খাতের শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারণের পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়নের জন্য অনলাইন নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে আরও সহজতর করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় আমাদের অঙ্গীকারের নিদর্শনস্বরূপ সম্প্রতি আমরা ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা-র লেবার সেন্টারের সংবিধিতেও স্বাক্ষর করেছি।

এই কারণেই আমরা নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসনকে সমর্থন করি এবং যেসব দেশে প্রবাসী শ্রমিকরা  যান সেই সব দেশে তাঁদের জন্য সহমর্মিতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহবান জানাই।

উন্নত বিশ্ব যেখানে বয়স্ক জনসংখ্যার চাপে ভুগছে, বাংলাদেশ সেখানে সৌভাগ্যবান—আমাদের ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। তাই অভিবাসন প্রক্রিয়াকে সহজ করলে তা উভয় পক্ষের জন্যই উপকারী হবে। তরুণ জনসংখ্যার এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আমরা উন্নত বিশ্বের শ্রম সমস্যার সমাধান ও প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হবো।

মাননীয় সভাপতি,

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছে যে তারা সমাজ পরিবর্তনের চালিকাশক্তি। আমরা তাদের দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করছি—তথ্যপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, নবায়নযোগ্য শক্তি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হল—প্রত্যেক তরুণকে শুধুমাত্র চাকুরিপ্রার্থীর পরিবর্তে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা।

এ উদ্দেশ্যে আমরা জাতিসংঘের সঙ্গে অংশীদারিত্বে, মাঠ পর্যায়ের তরুণদের সঙ্গে সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের যুক্ত করার একটি স্থায়ী মাধ্যম চালু করছি। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে সারা দেশে একাধিক পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়েছে। আজকের তরুণরা স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে— অনলাইন ও অফলাইন ফোরাম, জরিপ এবং প্রচারণার মাধ্যমে তাদের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকতে চায়। তারা নেতৃত্ব বিকাশ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল সক্ষমতা উন্নয়নের জন্য আরও বেশি সুযোগ চায়। তারা চায় এই প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা অন্তর্ভুক্ত থাকুক—নিয়মিত অগ্রগতি প্রতিবেদন এবং অব্যাহত সংলাপের প্রতিশ্রুতি থাকুক। সর্বোপরি, প্রক্রিয়াটি হোক অন্তর্ভুক্তিমূলক যাতে নারী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সকলের অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বের সমান সুযোগ থাকবে।

তরুণদের নিয়ে পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এ বছরটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ বছর আমরা বিশ্ব যুব কর্মপরিকল্পনার ৩০তম বার্ষিকী পালন করছি।

শুধু বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের চ্যালেঞ্জ নয়, এ বছর তাই ভবিষ্যতেও  তারা যে সংকট ও সমস্যার মুখোমুখি হবে, তা অনুধাবন করে তার সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করবারও সুযোগ এনে দিয়েছে।

দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির এই যুগে উন্নয়নশীল বিশ্বের তরুণদের জন্য আরও গভীর এক ডিজিটাল বিভাজন তৈরি হওয়ার ঝুঁকি আজ আমাদের একটি বড় উদ্বেগ।

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভাষা-ভিত্তিক বৃহৎ মডেল কিংবা আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা—এসব প্রযুক্তি যেন তাই পক্ষপাতদুষ্ট না হয়, এবং এর সুফল যেন ন্যায্যভাবে সবার কাছে পৌঁছায় তা আজ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।

অন্যথায় বিশ্বব্যাপী এমন একটি প্রজন্ম তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে যারা নিজেদের বঞ্চিত, প্রান্তিক, অন্যায় ও অবিচারের শিকার হিসেবে বিবেচনা করবে। তারা সকল ধরনের ক্ষতিকারক প্রলোভনের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।

আমরা মনে করি, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সুফল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে তরুণদের ঝুঁকিমুক্ত রাখার জন্য শুধু প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন সামাজিক উদ্ভাবন।

প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে আমরা ক্ষুদ্রঋণের ধারণা নিয়ে এসেছিলাম। তখন সেটি ছিল প্রথাগত ধারণার বিরুদ্ধে এক বৈপ্লবিক নিরীক্ষা—কিন্তু আজ বিশ্বব্যাপী তা মূলধারার হাতিয়ার হিসেবে স্বীকৃত। ক্ষুদ্রঋণ, লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রামীণ আমেরিকা বছরে এখন চার বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ নিম্ন-আয়ের নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করেছে, এবং এর প্রায় শতভাগ নিয়মিতভাবে পরিশোধ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে আমরা আজ ‘সামাজিক ব্যবসা’-র ধারণা প্রসার করছি। এটি এক ব্যবসা যার সম্পূর্ণ মুনাফা  সামাজিক কল্যাণেই পুনর্বিনিয়োগ করা হয় । ‘সামাজিক ব্যবসা’ প্রমাণ করছে যে প্রতি মানুষের উদ্যোক্তা সত্ত্বা সামাজিক কল্যাণে ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে কাজে লাগানো সম্ভব। এর ফলে পৃথিবীর যাবতীয় সমস্যার সমাধানের একটি সৃজনশীল পদ্ধতি সকলের হাতে এসে যায়— যেটি পরিবেশের সমস্যা হোক, সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার সমস্যা হোক, স্বাস্থ্যের সমস্যা হোক, বেকারত্ব দূরীকরণের সমস্যা হোক, দারিদ্র্য দূরীকরণের সমস্যা হোক— সব কিছুতে এই পদ্ধতি টেকসই বা কাজে লাগানো যায়। 

মাননীয় সভাপতি,

জলবায়ু সংকট চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় বিশ্বজনীন তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যমাত্রা আজ আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু সহায়তার প্রতিশ্রুতিও পূরণ হয়নি। বরং যে ক্ষুদ্র অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ হয়ে থাকে, তাও কাগজে কলমে দেখানো হচ্ছে বহুগুণ হিসেবে। এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। “লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড” পুরোপুরি চালু করতে হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রশমনের উদ্যোগ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি অভিযোজনেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। আর অভিযোজন প্রচেষ্টা হতে হবে দেশজ, স্থানীয়ভাবে নির্ধারিত ও  পরিচালিত। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে সংবেদনশীল অভিযোজনের নীতিকে মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে। আসন্ন কপ-৩০ সম্মেলনে আমরা তৃতীয় বারের মত জলবায়ু পরিবর্তন রোধকল্পে আমাদের জাতীয় প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করবো, যেখানে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রশমন লক্ষ্যের পাশাপাশি অভিযোজন উদ্যোগও থাকবে—বিশেষ গুরুত্ব পাবে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রক্ষা ও জলাভূমি পুনরুদ্ধার। একইসঙ্গে আমরা আশা করি যে বৈশ্বিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে উচ্চ-কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো, তাদের দায়িত্বটুকু আন্তরিকভাবে পালন করবে।

মাননীয় সভাপতি,

বর্তমানের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিশ্ব বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদের উত্থান। আমাদের সময়ে আমরা দেখেছি বাণিজ্য ও বিশ্বায়নের সুফল মাত্র তিন দশকে একশ’ কোটির মত মানুষকে দারিদ্র্য মুক্ত করেছে।

এখন যদি আমরা উল্টো পথে হাঁটি, তবে আমাদের সন্তানদের আর সেই সুযোগ থাকবে না।

এটা অনস্বীকার্য যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, প্রতিটি দেশের সার্বভৌম স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং কোনো দেশকে তার সাধ

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad