Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২৮-৩-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৩:৩১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেসমিনের বিরুদ্ধে করা মামলা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে স্বজনরা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেসমিনের বিরুদ্ধে করা মামলা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে স্বজনরা

নওগাঁ প্রতিনিধি ►

র‌্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া নওগাঁর একটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের (৪০) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা প্রতারণার মামলায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে তার স্বজন ও সহকর্মীরা। স্বজনদের কথায় এখন আতঙ্কের ছাপ। গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে চাইছেন না কেউ।  

গত ২২মার্চ (বুধবার) জেসমিনকে র‌্যাব আটকের পরদিন রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাটি করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ন সচিব) এনামুল হক।

মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর জেলার হাইমচর থানার গাজীবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আল আমিন ও সুলতানা জেসমিনসহ অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজন ব্যক্তি যুগ্ন সচিব এনামুল হকের নাম ও পদবী ব্যবহার করে ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন লোকজনকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
কিন্তু জেসমিনের বিরুদ্ধে ওঠা এমন অভিযোগ বিশ্বাস করতে পারছে না তার স্বজন, প্রতিবেশি ও সহকর্মীরা। সুলতানা জেসমিনের মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু বলেন, ‘আমার ভাগ্নি অত্যন্ত সাদামাটা একজন গৃহিনী। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ছোট্ট একটা চাকরি করে ছেলেটাকে মানুষ করছে সে। তার ছেলের লেখাপড়ার খরচের টাকা অনেক সময় আমাকে দিতে হয়। আর্থিক অনিয়ম করলে তো অভাব-অনটন থাকতো না। তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমার ভাগ্নি একটা চক্রান্তের শিকার হয়েছে। আমার বিশ^াস, সঠিকভাবে তদন্ত করলে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে।’

গত সোমবার (২৭মার্চ) বিকালে শহরের জনকল্যাণ পাড়ায় জেসমিনের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তার একমাত্র সন্তান শাহেদ হোসেন সৈকত ঘরে আছেন; কিন্তু কারো সঙ্গে কথা বলছেন না। সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

জেসমিনের ছোট ভাই সোহাগ হোসেন এবং ভগ্নিপতি রফিকুল ইসলাম গত রোববার গণমাধ্যমকে র‌্যাব হেফজাতে জেসমিনের মৃত্যুর অভিযোগ তুলে বক্তব্য দিলেও এখন তারা আর কোনো কথা বলছেন না। তাদের কথায় আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। জেসমিনের ভাই সোহাগ মিয়া বলেন, ‘আমার বোনের সাথে যা ঘটেছে এটা সবাই জানে। আর কোনো কথা বলতে চাই না। মামলা করতে চাই না। আমাদের কোনো দাবি নাই।’

সুলতানা জেসমিন (৪০) নওগাঁ সদরের চন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহায়ক পদে চাকরিরত ছিলেন। গত আট বছর ধরে শহরের জনকল্যাণপাড়ার দেলোয়ার হোসেন দুলালের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। প্রায় ১৭বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ছিল তার সংসার। ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

তার ভাড়া বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেন দুলাল বলেন, সুলতানা জেসমিন দীর্ঘদিন ধরে তার বাসায় ভাড়া থাকলেও তার কোনো অস্বাভাবিক চলাফেরা কখনও চোখে পড়েনি। একদম ‘নিভৃতভাবে’ চলাফেরা করতেন। তার মতো মহিলা অন্যের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে চাকরি দেওয়ার নাম করে মানুষকে প্রতারণা করবে এতে বিস্মিত তিনি।  

চন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোমেনা খাতুন বলেন, ‘এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই জেসমিনকে একজন ভালো সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি। অতীতেও তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো অভিযোগ আমার জানামতে হয়নি। জেসমিন শান্তশিষ্ট মানুষ ছিল। তার প্রতারণার অভিযোগ উঠায় অবাকই হয়েছি।’

উল্লেখ্য, গত বুধবার (২২মার্চ) বেলা ১০টার দিকে শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে রাজশাহী র‌্যাব-৫ এর একটি দল অভিযোগের ভিত্তিতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) কে আটক করে। পরে গত শুক্রবার (২৪মার্চ) সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর মৃত্যু হয়। সুলতানা জেসমিন সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad