Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২৫-৬-২০২৩, সময়ঃ সন্ধ্যা ০৬:৩২

দিনাজপুরে দগদগে লাল আগুনে লোহা পিটিয়ে পশু জবাইয়ের হাতিয়ার প্রস্তুত, বিক্রি নেই  

দিনাজপুরে দগদগে লাল আগুনে লোহা পিটিয়ে পশু জবাইয়ের হাতিয়ার প্রস্তুত, বিক্রি নেই  

সুলতান মাহমুদ চৌধুরী , ►দিনাজপুর

আর ক’দিন পরেই মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বৃহত্তর ঈদুল আযাহা বা কুরবানীর ঈদ। কুরবানির ঈদ উপলক্ষে দিনাজপুরে কামাররা চাপাতি, দা, ছুরি, বটি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কামার পট্টিতে টুং টুং শব্দে মুখরিত, কয়লায় আগুনে লাল টকটকে লোহা গরম করে পাকা লোহার তৈরি হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরী করতে ব্যস্ত কুরবানীর পশু জবাই করার হাতিয়ার।
পশু কুরবানি ও মাংস তৈরিতে অতি প্রয়োজনীয় এসব ধারালো অস্ত্র সরবরাহের জন্য কামাররা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে কুরবানির সময়টাতে কামারদের কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় তাদের আয়-রোজগারও।

শহরের বালুবাড়ী মহারাজা স্কুল মোড়, বড়বন্দর, রামনগরসহ কয়েকটি স্থানে কামাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কামারদের প্রয়োজনীয় জ্বালানি কয়লার দাম বেড়ে গেছে। বেড়েছে লোহার দামও। লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সে তুলনায় কামারদের মজুরি বাড়েনি। ফলে কামার সম্প্রদায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করছে।

কামার পট্টিতে কেউ ভারি হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন দগদগে লাল লোহার খন্ড। কেউ শান দিচ্ছেন, কেউবা আবার কয়লার আগুনে বাতাস দিচ্ছেন। এক রকম কোরবানী ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিযোগীতা মুখর কাজ করছে কামারিরা। কামার সম্প্রদায়ের মধ্যে চলছে অঘোষিত নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কে কার চেয়ে বেশি কাজ করতে পারে । লাল টকটকে লোহার হওয়ার পর দুই জন কামার হাতুড়ী হাতুড়ী চলে  ঠাক ঠুক পিটুনি । এর ইচ্ছে মত লোহা পিটিয়ে ট্যাপ্টা করে , সরু করে । তৈরী হচ্ছে দেশীয় দা, ছড়ি, বটি , হাড্ডি কাটা দা , চাপাতি, কুড়াল । এক কথায় কামার পল্লী এখন টাং টুং শব্দে মুখরিত ।  

কুরবানীর ঈদে গরু, মহিষ ,ছাগল ও ভেড়া কুরবানীর পশু হিসেবে জবাই করা হবে। আর এসব পশুর গোস্ত কাটতে দা, বটি, চুরি, ও চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অপরিহার্য। এজন্য গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় দা, বটি, চুরি, ও চাপাতি শান দিতে। এদিকে ধাতব সরঞ্জামাদী শান দিতে কামার পাড়াগুলোতে ভিড় বাড়ছে সাধারণ মানুষের। ভ্রাম্যমান কামাররা চষে বেড়াচ্ছে ছোট-বড় বিভিন্ন হাট-বাজার।

আগামী ১০ জুলাই রবিবার কুরবানীর ঈদের তারিখ নির্ধারণ হওয়ায় দা-ছুরি সংস্কারের জন্য জেলা-উপজেলা বাসী ইতোমধ্যে ভিড় করছেন কামারের কাছে। কেউ দাম-দর করছেন বাজার বোঝার জন্য কেউবা কিনে নিচ্ছেন পছন্দের দা-ছুরি। 

দিনাজপুর মহারাজা স্কুল মাঠের রাস্তার পাশের্^  কামারশালা ঘুরে দেখা যায় এক ধরনের ফুরফুরে মেজাজেই ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। কেউ তৈরি করছেন দা, কেউ বা তৈরি করছেন চাপাতি আবার কেউ কেউ তৈরি করছেন ছুরি। আর এসব জিনিস সারিবদ্ধভাবে দোকানের সামনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে চাপাতি ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, দা ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা, কুড়াল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, চাকু ৮ টাকা থেকে ১২০ টাকা, বড় দা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় কামারশালায় বিক্রি হচ্ছে।

মহারাজা স্কুল মাঠের পার্শ্বে বসা কামার মোস্তাফিজুর বলেন , কয়লার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এরই সঙ্গে বেড়েছে দা-বটি বানানোর লোহা আর ইস্পাতের দাম। ফলে এখন কাজ করে আগের মতো লাভ হচ্ছে না। আগে হোটেল, বাসা-বাড়ি থেকে কয়লা সংগ্রহ করা হতো। এখন হোটেল বা বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে গ্যাস ব্যবহার হয়। কয়লা পাওয়া তাই দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।’ তিনি আরো বলেন, ইটের ভাটাগুলোতেও গ্যাস এবং কয়লা ব্যবহার হচ্ছে। আগে কাঠ বা খড়ি দিয়ে ভাটায় ইট পোড়ানো হতো। এজন্য কয়লা সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

একই কথা বলেন মমিনুল ইসলাম , বেশি দামে কয়লা কিনতে হচ্ছে। গত বছর এক টিন কয়লা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এবার তা কিনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০  টাকা দরে।

কামার আব্দুস সালাম বলেন , গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানির ঈদে মানুষ তেমন অর্ডার দিচ্ছে না। কাঁচা লোহা দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। তাই কোরবানির সরঞ্জাম স্বাভাবিকভাবেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। 

ছুরি-বটি চাকু ব্যবসায়ী এমদাদ সরকার বলেন , গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানি পশু জবাই, চামড়া ছাড়ানো সরঞ্জামের দাম অনেক বেশি। মাংস কাটা দা আমরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা তরে বিক্রি করছি। আগে এর দাম ছিলো ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। বড় চাকু ছিলো ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা এখন তার দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। বটি ছিলো ২০০ টাকা, এখন সেই বটি বিক্রি হিচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এছাড়া হাসুয়া ছিলো ১৫০ টাকার পরিবর্তে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছি।

আনিছুর রহমান এক ক্রেতা বলেন, এ বছর দা, বটি, চাকুর দাম অনেক বেশি। কোরবানির পশু কিনেছি। তাই দাম বেশি হলেও সরঞ্জাম কিনতে হবে। হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দাম আবার কমে আসবে।

আবেদ আলী বলেন , লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় কামাররা সবকিছুর দাম বেশি চাচ্ছে। তাই গত বছরের বানানো দা, বটি আর চাকু কামারের কাছে ধার করতে নিয়ে এসেছি।

বাঙ্গিবেচা গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, বাজারে প্রায় সব জিনিসের দাম বেশি। কোরবান দেওয়ার গরু ও খাসি কিনেছি। এবারে চাকু, দা, বটির দাম বেশি তারপরও নতুন চাকু ও বটি কিনলাম আর পুরাতন দা, পিটিয়ে ধার করে নিলাম। কি আর করা!

দিনাজপুর পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন ঈদ মানেই আনন্দ , কুরবানীর ঈদ মানে নিজে পশুবৃত্তিকে পরিহার করা । আর ঈদের দিন যেন একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়ে যেতে পারি এমন প্রত্যাশাই রইল। 
 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad