সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর ►
কদিন পর ঈদুল আযাহা (কুরবানীর ঈদ) আসছে। তাই দিনাজপুরের গরু খামারীরা শেষ মূহুর্তে এসে পশু পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পর করছে। কুরবানীর পশুগুলিকে খাদ্য খাওয়ানো ও গোসল করানোর কাজে নিয়ে বেশি ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারীরা।
অপর দিকে দিনাজপুরের জমে উঠেছে পশুর হাট। কুরবানির পশুর ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ও অস্থায়ী ভিত্তিতে ২২০টি পশুর হাট বেচা বিক্রি হচ্ছে। দিনাজপুরের কাহারোল পশু হাট জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় পশু হাট হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
সপ্তাহের শনিবার এই পশুর হাট বসে। তাই রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে পশু ক্রেতা বিক্রেতারা এখানে পশু বেচা বিক্রি করে থাকেন।
কাহারোলের পশুর হাটে দেখা গেছে, প্রায় দুই একর জায়গার ওপর বসেছে পশুর হাট। পশু নিয়ে সকালেই পৌছে যান বিক্রেতারা। এই পশুর হাটের দিন চারদিক যানজট লেগে যায়।
শনিবার সকাল ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত পুরোদমে শুরু হয় পশু বেচাকেনা। কুরবানি উপলক্ষে পশুর উপস্থিতি একটু বেশি থাকে। পশুর হাটে বিক্রেতা ক্রেতাদের মাঝে চলে দর-কষাকষি। এই সময় পা রাখার জায়গা থাকে না পশু হাটে।
এদিকে, কাহারোল পশুর হাটে দেখা গেছে ভারতীয় গরু। স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী জানান, প্রতি বছর কোরবানি উপলক্ষে এ হাটে দেশি গরুর পাশাপাশি ভারতীয় গরুও বিক্রি হয়। তবে এ ব্যাপারে নীরব হাট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন।
গরু বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ১০টি গরু বিক্রি করতে এসেছি। ৬টি গরু এরমধ্যে বিক্রি করেছি। একটা গরু হাতে আছে, এটাইও বিক্রি হবে আশা করছি। এ বছর দাম ভাল পাওয়া যাচ্ছে।
চিরিরবন্দর রানীবন্দরের আলম হোসেন বলেন, আমার খামারের ২০টি গরু নিয়ে এসেছি। আমার প্রতিটি গরু ষাড় ৭০ হাজার ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার মধ্যে। তাই আমার প্রতিটি গরু বিক্রি করেছি। আমার খামারে আরোও ১ শতটি কুরবানীর উপযুক্ত গরু আছে। আশা করছি কুরবানীর আগেই সব গরু বিক্রি হয়ে যাবে।
পশু বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, এ বছর গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। তাই গরুর দামও একটু বেশি। দুটি গরু বিক্রি করার জন্য এসেছি। এখন পর্যন্ত একটিও বিক্রি করতে পারিনি। ফলে গরু দুটি ফেরত নিয়ে যেতে হতে পারে।
পশু ব্যবসায়ী আজম জানান, ৪টি গরু ক্রয় করে হাটে নিয়ে এসেছিলাম। ৩টি গরুর বিক্রি করেছি ও ১টি ফেরত নিয়ে যাচ্ছি। তবে ৩টি গরুতে ৬ হাজার টাকা লোকসান করে বিক্রি করতে হয়েছে।
আরেক গরু ব্যবসায়ী নুরুল আমিন বলেন, আমি নোয়াখালী থেকে এসেছি। ৬টি গরু ক্রয় করেছি। আর ৪টি গরু ক্রয় করব। তবে গতবারের তুলনায় এবার গরুর দাম অনেক বেশি। শনিবার কাহারোল হাটে প্রাণিসম্পদ অফিসের লোকজনকে দেখা গেছে। তারা কোরবানির জন্য গাভি গরুর প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করছেন। কোনো গরু অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন।
গরু ক্রেতা মফিজ উদ্দীন বলেন, আমি কুরবানীর জন্য একটি ষাড় ক্রয় করতে এসেছি। ৯০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ষাড় গরু ক্রয় করেছি। তাই এখন বাড়ী চলে যাচ্ছি।
হাট ইজারাদারের প্রতিনিধি দোলোয়ার হোসেন জানান, কাহারোল ঐতিহ্যবাহী পশুর হাট। অনেক সুনাম রয়েছে এ হাটের। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে গরু, মহিষ ও খাসি ক্রয় করতে আসেন। এই হাটে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, রংপুর ও জয়পুরহাটসহ আশপাশের জেলা থেকে বিক্রেতারা গরু বিক্রি করতে আসেন। স্থানীয় প্রশাসন ও আমাদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন। কোরবানির সময় ২০ হাজার গরু ও ছাগল বিক্রি হয়। এ হাটে প্রায় ৫০ কোটি টাকার অধিক লেনদেন হয়
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, জেলার ১৩টি উপজেলায় ২ লাখ ৫৯ হাজার ১৩৮ টি কুরবানির উপযোগী গরু, মহিষ ও ছাগল, ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে। গরু মহিষ কুরবানীর জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৭টি আর ছাগল ও ভেড়া কুরবানীর জন্য প্রস্তুত আছে ১ লাখ ৭ হাজার ৭০১টি। দিনাজপুর জেলার কুরবানীর পশুর চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ২৮ হাজার ৬৩৬ টি গরু ছাগল থাকবে। যা দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠাতে পাঠাতে পারব।