দিনাজপুর প্রতিনিধি ►
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা মনোহরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষনে অন্তসত্তা করার ঘটনায় অভিযুক্ত লাইব্রেরিয়ান শিক্ষক জোয়ানুল ইসলাম ফিরোজের শাস্তির দাবিতে স্কুল ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। এ সময় ছাত্রছাত্রী তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষা বর্জন ও পরীক্ষা খাতা ছিড়ে ফেলে দিয়ে বিক্ষোভে অংশ গ্রহণ করে।
এসময় ওই শিক্ষকের কোচিং সেন্টার ও ঘরবাড়িতে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও প্রধান শিক্ষকের মোটর সাইকেল আগুন দেওয়াসহ গাছের গুড়ি ফেলে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে তারা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা থেকে প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে কর্মসূচি পালন করেছে উত্তেজিত গ্রামবাসী।
অভিযুক্ত শিক্ষক রেজওয়ানূল ইসলাম ফিরোজ (৩৭) মনোহারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন লাইব্রেরিয়ান পদে কর্মরত আছেন এবং নবাবগঞ্জ উপজেলার চামুন্ডা ফকির পাড়ার মেরাজ উদ্দীনের ছেলে। শ্রেণিকক্ষে ক্লাশ নেওয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের পাশাপাশি নিজ বাড়ী ফকির পাড়া চামুন্ডা গ্রামের বাড়ীতে কোচিং সেন্টার খুলে প্রাইভেট পড়াতেন তিনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, স্কুল বাবা হারানো এতিম একজন ছাত্রীকে দৈহিক সম্পর্ক জড়িয়ে ফেলেন ওই লাইব্রেরিয়ান শিক্ষক। এতে প্রায় তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে ওই ছাত্রী। এঘটনায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগ তুলে শাস্তির দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে স্কুল ঘেরাও করে শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য অভিভাবকেরা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯ ঘটিকায় মনোহরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ধর্ষিত ছাত্রীর অবিভাবক আত্মীয় স্বজন ও স্থানীয় এলাকার সাধারণ জনগন এবং বিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীর অবিভাবক সহ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা ধর্ষক শিক্ষকের বিচারের দাবিতে প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার রায়ের নিকট উপস্থিত হন।
প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার রায় এই বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবেনা সাফ জানিয়ে দিয়ে তিনি বিদ্যালয় ভবনের মুল কলাপসিবল দরজা বন্ধ করে বিদ্যালয় ভবনের ভিতরে অবস্থান নেয়। এতে বাহিরে উত্তেজিত জনগনের সঙ্গে কোনো কথা বলতে অনিহা প্রকাশ করেন। এমন পরিস্থিতিতে বাহিরে অবস্থানরত উত্তেজিত জনগন বিদ্যালয়ের কলাপসিবল দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশকরার চেষ্টা করেন। ক্ষিপ্ত হয়ে জনতা প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার রায়ের মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এর মাঝে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে এসে উত্তেজিত জনগন কে বিদ্যালয়ের দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করলে উত্তেজিত জনগন অভিযুক্ত শিক্ষকের বাড়িতে যায় এবং বাড়ির জানালা সহ অনেক জিনিসপত্র ভাংচুর করেন।
এসময় সংবাদ পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোমিনুল করিম ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত জনগনের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং ধীরেধীরে জনগন ঘটনা স্থল ত্যাগ করেন।
জানা যায় উক্ত মনোহরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী রুকুমনির বাবা ৭/৮ মাস আগে মারা যাওয়ায় সে স্কুলে আসা বন্দ করে দেয় কারন তার বাবার মৃত্যুর পরে তার লেখা পড়ার খরচ বহন করার সামর্থ্য নেই। বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন ও ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্য সহ রুকু মনির বাড়িতে গিয়ে তার মা ও তার সঙ্গে কথা বলে তার লেখা পড়ার সকল দ্বায়িত্ব বিদ্যালয় কতৃপক্ষ নেন এবং সেই থেকে রুকুমনি পুনরায় বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন শুরু করেন। এর মাঝে উক্ত বিদ্যালয়ের লাইব্রেরীয়ান শিক্ষক ফিরোজ ছাত্রীটি অসহায়ত্বের সুযোগে ছাত্রীকে বিভিন্ন প্রকার প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে ফেলেন। এর কিছুদিন পর উক্ত ছাত্রী তার মায়ের নিকট সব ঘটনা প্রকাশ করেন এনং আরো যানান সে দুই তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
দিনাজপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোমিনুল করিম , ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আজকের ঘটনাটি দু:খজনক। প্রকৃত ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।