রবিউল আলম বিপ্লব, পীরগাছা►
১০ দিন আগেও রংপুরের পীরগাছায় খুচরা বাজারে এক কেজি নতুন আলুর দাম ছিল ১৫০ টাকা। বর্তমানে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। তবু মিলছে না কাঙ্খিত ক্রেতা। বেশির ভাগ ক্রেতা ৮০ টাকা কেজি দরে পুরাতন আলুই কিনছেন।
আজ (বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর) উপজেলার একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ক্রেতাদের দাবি, আলুর দাম দ্রুত কমতে থাকায় কৃষকরা অপরিপক্ব আলু জমি থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করছে। অপরিপক্ব হওয়ায় নতুন আলুতে তেমন স্বাদ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্য বছরের তুলনায় এবার বাজারে দাম ভাল থাকায় কৃষকরা আগাম আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছে। প্রথম দিকে বাজারে ভাল দাম থাকায় কৃষকরা লাভবান হয়। তাই অনেকে এবারও আগাম আলু চাষ করেছিল। সেই আলু তোলার সময় এখনও হয়নি। তবুও ভাল দামের আসায় জমি থেকে অপরিপক্ব আলু তুলে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার তাম্বুলপুর ও ছাওলা ইউনিয়নে তিস্তার চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, একদিকে পুরোদমে আলু রোপনের জন্য জমি তৈরির কাজ চলছে। অপরদিকে অনেকে আলু রোপন করে পরিচর্যার কাজ করছে। একই সঙ্গে কৃষকরা আগাম রোপণ করা আলু তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু ক্ষেতের আলু উত্তোলনের সময় এখনও হয়নি। যে আলু ১৫ দিন পরে তোলার উপযুক্ত হবে সেই আলু দাম কমার শঙ্কায় আগাম তোলা হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, তারা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম আলু রোপণ করেছিলেন। ভেবেছিলেন মৌসুমের শুরুতে ভাল দাম পাবেন। কিন্তু নতুন আলু বাজারে ওঠার প্রথম সপ্তাহে দাম ভাল ছিল। গত সপ্তাহ থেকে দাম কমতে শুরু করে। তাই লোকসানের শঙ্কায় অপরিপক্ব আলু তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। শুরুতেই যে হারে দাম কমতেছে, শেষের দিকে আরও কমার শঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর উপজেলায় ১০ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে আলুসহ রবিশস্য আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত বছরের তুলনায় এবার বেশী জমিতে আলু চাষ করা হচ্ছে। তবে বাস্তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে চাহিদার অতিরিক্ত আলু উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করা হলেও কৃষকরা শুনছে না। তারা বাজারে দাম ভাল থাকায় আলু চাষে কোমর বেঁধে মাঠে নামেছে। তবে যে আশায় কৃষকরা আলু চাষে ঝুঁকেছে তা পূরণ নাও হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। তবে আলুর দাম স্থিতিশীল রাখতে বিদেশে রপ্তানিসহ সব ধরনের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে কৃষকরা।
শিবদেব চরের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, চরের জমি আলু চাষের জন্য উপযোগী। তাই প্রতিবছর চরে প্রচুর আলু চাষ হয়। তবে এবার বাজারে ভাল দাম থাকায় চরের মতো অন্যান্য এলাকার কৃষকরা আলু চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এ জন্য এখনই বাজারে প্রচুর আগাম আলু উঠতে শুরু করায় দাম কমে যাচ্ছে।
তাম্বুলপুর ইউনিয়নের রহমতের চরের কৃষক আয়নাল হক বলেন, গত বছর আলু দাম ভাল থাকায় যারা কখনও আলু চাষ করেনি তারাও এবার আলু চাষ করছে। তাই লাভের আশায় অপরিপক্ব আলু তুলে বাজারে বিক্রি করছে কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর রোগ বালাইর সম্ভাবনা তেমন নেই। তাই এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী আলু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভাল দামের আশায় অপরিপক্ব আলু তুলে বিক্রি করা ঠিক হবে না।