মোদাচ্ছেরুজ্জামান মিলু►
বামনডাঙ্গা রেল স্টেশন থেকে নেমে রংপুর রোডের দুই কিলো রাস্তা অতিক্রম করলেই মহিদুলের বাড়ি। পুরো নাম মো. মহিদুল ইসলাম এবং বয়স প্রায় ৩৯ বছর। বাবা মৃত আব্দুল ওয়াহেদ মন্ডল বন বিভাগে চাকরি করতেন। ইতোমধ্যে মহিদুল বাঁশের শিল্প দিয়ে বিভিন্ন গিফট আইটেম তৈরী করে স্থানীয়ভাবে এবং জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বেশ হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন।
শিল্পীর শিল্প যদি যুগোপযোগী ও নান্দনিক হয় তবে শিল্পী তার শিল্পের বড়াই করতেই পারে। কিন্তু মহিদুল এখানে একেবারেই ব্যতিক্রম। ইতোমধ্যে অনেক সাংবাদিক গিয়েছে ভিডিও ও তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। মহিদুলের কোনো বিরক্তি নাই, নেই কোনো শিল্পের বড়াই। তার স্ত্রী ফারজানা ববি রজন ও মহিদুল হাসিমুখে বর্ণনা দিয়ে তাদের কাজের সফলতার কাহিনী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবগত করে যান তাদের প্রতিষ্ঠান স্বপ্নচূড়ার ইতিহাস নিয়ে।
কিভাবে মহিদুল সফলতার মুখ দেখতে শুরু করলেন তা তো এক ভিন্ন মেধা ও অধ্যাবসায় ছাড়া সম্ভব নয়। হ্যাঁ, মহিদুল একজন অসাধারণ মেধার মানুষ এবং তার গবেষণা ও অধ্যাবসায় নিয়ে তিনি তৈরী করেছেন বাঁশের অনেক গিফট আইটেম। বাঁশের কারুকাজে তিনি বানিয়েছেন বাঁশের ভিতরে জীবন্ত গাছ, অফিসিয়াল কলমদানি, ওয়াল ল্যাম্প, চায়ের কাপ, মগ, কানের দুল, টেবিল ফুলদানি, ওয়াল ফুলদানি, অ্যাশট্রে, কাটা চামচ, টেবিল চামচ, ট্রে, উপজাতীয় হুকাসহ ঘর সাজানো ও ব্যবহারযোগ্য নানা রকমের গিফট আইটেম। মহিদুল জানায় যে তিনি কোনো প্রশিক্ষণ পাননি।
তবে কিভাবে এত নিখুত কারুকাজে নকশা করে বানায় সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তার বাবা যেহেতু বন বিভাগে চাকরি করতো এবং বাবার কলিগ মহিদুলের বাঁশ দিয়ে একটি ড্রাম বাজানোর স্টিক তৈরী করা দেখে আশ্চর্য হন এবং বলেছেন তুমি একদিন এ বিষয়ে খ্যাতি অর্জন করবে। মহিদুল সেই থেকে বাবার কলিগের সেই কথা স্মরণ রেখেছেন এবং দিনে দিনে নিজের চেষ্টায় তৈরী করতে শুরু করেন এই সমস্ত আইটেমের।
তিনি যে পেইন্টের কাজও শিখেছেন তা দেখে আরেকবার হতবাক হতে হলো। তিনি বাঁশের কাজের পাত বানিয়ে তার উপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর প্রতিকৃতি পেইন্টের মাধ্যমে এতই সুন্দর করে বানিয়ে তার চেম্বারের ওপরে রেখেছেন যে প্রথমেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষিত হয় এই ছবি দেখে।
মহিদুলের স্বপ্ন শুধু একদিকে নয় স্বপ্নের চূড়ায় যাওয়ার জন্য তিনি তার বাড়ির এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা রাখেন নাই। তিনি তৈরী করেছেন পারিবারিক পুষ্টি বাগান। সেখানে সকল প্রকার ফলের গাছ, সবজি ও ফুলের গাছ দিয়ে তৈরী করেছেন স্বপ্নের বাগান। এ কোনো সিনেমার বা নাটকের কাহিনী নয়। এ এক বাস্তব স্বপ্নের বাড়ি এবং প্রত্যেকের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে যদি প্রত্যেক মানুষ নিজেকে মনোনিবেশ করতে পারে মহিদুলের কার্যক্রম দেখে।
শুধুই কি তাই? শত শত নারিকেল গাছের চারা তৈরী হয়ে আছে বিক্রির অপেক্ষায়। মুরগীও পালন করছে উঠোনের পাশে। আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বলেছেন এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। মহিদুল যেভাবে তার বাড়ির প্রতি ইঞ্চি জায়গার সদ্ব্যবহার করে সফলতার মুখ দেখছেন তাতে করে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী দেখলে হয়তো খুশি হবেন যে একজন শিক্ষিত যুবক তাঁর কথার বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। মহিদুলের পারিবারিক পুষ্টি বাগান অবশ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নজরে এসেছে এবং কৃষি বিজ্ঞানের সহযোগিতা দিয়ে আসছেন।
প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আইনী মুকুট বলেন, মহিদুল নিজের চেষ্টায় এতদুর এসেছে এবং ভবিষ্যতে সে আরো সফলতা পাবে। তিনি মহিদুলের এ সমস্ত কুটির শিল্প ও কৃষি পণ্য রংপুরের বিভিন্ন মেলায় পরিচিতি পেতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।