Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৫-১১-২০২৩, সময়ঃ সকাল ১১:২৪

ব্রহ্মপুত্রে নাব্যতা সংকটে হুমকির মুখে নৌ-চলাচল

ব্রহ্মপুত্রে নাব্যতা সংকটে হুমকির মুখে নৌ-চলাচল

ভবতোষ রায় মনা

ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা সংকটের কারণে গাইবান্ধার বালাসী থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ নৌ-রুটে বন্ধ হয়ে গেছে লঞ্চ চলাচল। ফলে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে যাত্রীদের। অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের পাশাপাশি যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এ রুটে উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলার কয়েক হাজার মানুষ নিয়মিত চলাচল করে। এ অবস্থায় যাত্রী ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর তাই এ নৌ-রুটকে সচল রাখতে দ্রুত ড্রেজিংয়ের দাবি সংশ্লিষ্টদের।

বোনারপাড়া রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে নদের এপারে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের তিস্তামুখঘাট ওপারে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট। এ দুঘাটে ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চল-রাজধানীর রেল যোগাযোগ চালু ছিল। উত্তরাঞ্চলের আটটি জেলার মানুষ ট্রেনে যোগে বোনারপাড়া রেল জংশন হয়ে তিস্তামুখ ঘাটে এরপর তিস্তামুখ ঘাট থেকে ফেরিতে পার হয়ে ওপারে বাহাদুরাবাদে গিয়ে ট্রেনে উঠে ঢাকায় যেতেন। নাব্যতা সংকটের কারনে তিস্তামুখ ঘাটটি স্থানান্তর করা হয় একই উপজেলার বালাসীঘাটে। সেখানে থাকা অবস্থায় ১৯৯৮ সালের জুন মাসে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হয়। ফলে ২০০০ সাল থেকে এরুটে ফেরি চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। অকার্যকর হয়ে পড়ে বালাসীঘাট। 

রেল ফেরি বন্ধ হওয়ার দীর্ঘ ২২ বছর পর গত বছরের এপ্রিলে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে চালু হয় লঞ্চ সার্ভিস। বর্ষা মৌসুমে ৩-৪ মাস লঞ্চ চললেও শুকনো মৌসুমের শুরুতেই নাব্যতা সংকটের কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর জেগে ওঠায় বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চ চলাচল। ফলে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে চলতে হচ্ছে যাত্রীদের। একইসঙ্গে বাড়তি ভাড়ার পাশাপাশি সময়মতো নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাঁতে পারছে না যাত্রীরা। 

নৌযাত্রী আসমত হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে বাহারাদুরাবাদ ঘাট থেকে নৌকায় বালাসীঘাটে আসতে সময় লাগতো আড়াই ঘন্টার মত। শুকনো মৌসুমে সময় লাগছে সাড়ে ৩ ঘন্টা থেকে ৪ ঘন্টা। কারণ নদের বিভিন্নস্থানে পলি জমে ডুবোচর জেগে উঠেছে। এছাড়াও মূলঘাট থেকে প্রায় ২ থেকে আড়াই মাইল দূরে নৌকা থেকে যাত্রীরা নেমে পায়ে হেঁটে আসতে হচ্ছে। এতে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে গেছে।

বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌরুটের নৌকা চালক আবু হাসান বলেন, নদীতে পানি না থাকার কারণে আমরা সময় মতো পৌঁছাতে পারি না। আমাদের ১ ঘণ্টার জায়গায় ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। কখনো কখনো বিভিন্ন চরে গিয়ে নৌকা আটকে যায়। এতে বিপদে পড়তে হয়। কখনো যাত্রীদের সহযোগিতা নিয়ে আবার কখনো নিজেরা নৌকা ঠেলে আবারও নৌকা চালাতে হয়। বালাসীঘাটের বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার সত্বে একাধিক ব্যক্তি বলেন, এ নদে ড্রেজিং অনেকটাই লোক দেখানো, কাজের কাজ কিছু হয় না। নদের পলিমাটি কাটলেও নাব্যতা না থাকায় লঞ্চ চলাচলে সমস্যা রয়ে গেছে। 

বালাসী ঘাট লঞ্চ মালিক আরিফ মিয়া রিজু জানান, বছরে ৩-৪ মাস লঞ্চ স্বাভাবিকভাবে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে চলাচল করতে পারে। কিন্তু বাকী সময়গুলো লঞ্চের স্টাফদের নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়। লঞ্চ চলাচলের জন্য নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং করতেই হবে। সার্বক্ষণিক একটা ড্রেজার প্রয়োজন। তাহলেই সারাবছর এ রুটে আমরা লঞ্চ চালাতে পারব। ফলে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা স্বল্প সময়ে ও অল্প খরচে সহজেই ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে।

লঞ্চ মালিক সমিতি সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, নাব্যতা সংকটের কারণে নদীপথে ডুবোচরের কারনে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। লঞ্চ বন্ধ থাকায় যাত্রীরা দুর্ভোগ পড়েছে। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় যাতায়াত করছে। তিনি বলেন, ছোট লঞ্চের জন্য প্রয়োজন ৬-৭ ফুট পানি। প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরত্বের বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌরুটের অন্তত ২০-২৫টি পয়েন্টে পানির নাব্যতা কমে গিয়ে নৌযান চলাচল বিঘ্ন হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বালাসী লঞ্চ ঘাট ইজারাদার মোস্তাক আহম্মেদ রঞ্জু বলেন, বালাসী ঘাটের ইজারা নিয়ে আমরা বিপদে আছি। নাব্যতা সংকটের কারণে ইতিমধ্যে বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌ-রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন অল্প কিছু ইঞ্জিনচালিত শ্যালো নৌকা চলাচল করছে। তাও কিছু কিছু জায়গায় বালুচরে আটকে যাচ্ছে। ফলে একদিকে সময় যেমন বেশি লাগছে অন্যদিকে নৌকার তেল খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া যাত্রীরা সময়তো বাহাদুরাবাদ না পৌঁছার কারণে ট্রেন ধরতেও পারছে না।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুল হক বলেন, নদের তলদেশে পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র নদেন প্রস্থ ঠেকেছে ১৬ থেকে ১৮ কিলোমিটারে। এর কারণ হচ্ছে নদে শত শত চর-ডুবোচর জেগে ওঠায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্যা চ্যানেল। নদীর নাব্যতার কারনে বন্ধ প্রায় নৌরুটগুলো। আমরা নদী প্রতিরক্ষামূলক কাজটি করে থাকি। ড্রেজিংয়ের কাজটি করে বিআইডব্লিউটিএ।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বালাসীঘাটে ড্রেজিং কাজের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোঃ মোতাব্বের হোসাইন জানান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া আমরা কিছুই বলতে পারবো না। নদী খননে বর্তমানে ১টি ড্রেজার কাজ করছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad