তাজুল ইসলাম রেজা, সাদুল্লাপুর►
আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় তৈরি করা প্রতিমায় আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ প্রতিমাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের হামিন্দপুর গ্রামের কামারপাড়া সর্বজনীন দুর্গা মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও এর আগেই প্রতিমাগুলো সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই মন্দির নিয়ে বর্তমান কমিটির সদস্যদের সাথে সাবেক কমিটির সদস্যদের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে দুই কমিটির পক্ষ থেকে এই মন্দিরে পৃথক পৃথকভাবে দুর্গোৎসব করার জন্য আয়োজন করে। এর জেরে গত শনিবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে বর্তমান কমিটির ক্যাশিয়ার কার্তিক চন্দ্র সরকার মন্দিরের প্রধান দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন।
বাধ্য হয়ে মন্দির কমিটির সাবেক সদস্যদের কারিগররা মন্দিরের দক্ষিণ পাশে খোলা আকাশের নিচে দুর্গাপূজার প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন। গত ৫–৬ দিনে তারা বাঁশ ও খড় দিয়ে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশসহ প্রতিমার নানা সরঞ্জাম তৈরি করেন। কিন্তু রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা হঠাৎ প্রতিমাগুলোতে আগুন দিলে মুহূর্তেই সব পুড়ে যায়।
মন্দির কমিটির সাবেক সভাপতি অনুকুল চন্দ্র রনু বলেন, “মন্দির নিয়ে সামাজিক বিরোধের কারণে আমরা ৮–১০টি পরিবার মন্দিরের পাশে ছাপড়া ঘর তুলে পূজার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিই। সে অনুযায়ী প্রতিমা তৈরির কাজ চলছিল। কিন্তু শত্রুতার আগুনে সব পুড়ে গেছে। পরিকল্পিতভাবে প্রতিমায় আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কার্তিক চন্দ্রের সম্পৃক্ততা আছে।”
মন্দির কমিটির বর্তমান সভাপতি কুন্তূল চন্দ্র দাস জানান, এই এই দ্বন্দ্বের কারণে তাদের দুর্গা প্রতিমা মন্দির কমিটির ক্যাশিয়ার কার্তিক চন্দ্র সরকারের ঘরে তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু বিপক্ষ খোলা জায়গায় অরক্ষিতভাবে দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন। রাতের আঁধারে কে বা কারা এই আগুন দিয়েছে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করে মন্দির কমিটির ক্যাশিয়ার কার্তিক চন্দ্র সরকার জানান, তদন্ত করলেই বের হবে কে আগুন লাগিয়েছে।
মন্দিরের পাশের বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপ্তি রানী জানান বলেন, “প্রতিমা পুড়ে যাওয়ায় এবার দুর্গাপূজা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।”
এদিকে, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজউদ্দীন খন্দকার এবং সাদুল্লাপুর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত চন্দ্র অধিকারী।
এ বিষয়ে ওসি তাজউদ্দীন খন্দকার বলেন, “রাতের আধারে দুর্বৃত্তরা প্রতিমায় আগুন দিয়েছে। গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। দুর্বৃত্তদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এছাড়া বিরোধ সমাধানে উভয় পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে।”
সাদুল্লাপুর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত চন্দ্র অধিকারী বলেন, “এই মন্দির নিয়ে কার্তিক চন্দ্রের সঙ্গে বিরোধের বিষয়টি আমরা এর আগেও থানায় বসে সমাধান করেছি। কিন্তু আবারও দ্বন্দ্ব চলছিল। বিষয়টি সমাধানের জন্য বসার কথা ছিল। তার আগেই প্রতিমায় আগুন দেওয়া হয়েছে। আমরা দ্রুতই উভয়কে নিয়ে বসে সমাধানের চেষ্টা করব।”