সাদুল্লাপুর প্রতিনিধি ►
সাদুল্লাপুর উপজেলায় পাকা বোরো ধানে ব্যাপক আকারে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। ফলে জমিতে ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্রি-ধান-২৮ ও ব্রি-৮১ জাতের বোরো ধানে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে। এর কোন প্রতিকার না পেয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ফলে এ উপজেলায় এবার ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে এই দুঃসময়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের কোন লোকজনের দেখা কিংবা পরামর্শ পান নাই বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ব্রি-ধান-২৮ এবং ৪০ হেক্টর জমিতে ব্রি-৮১ জাতের বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। সুত্রটি আরও জানান, চলতি বোরো মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন।
সরেজমিন জানা যায়, মৌসুমের প্রথম দিকে ব্রি-২৮ ও ব্রি-৮১ জাতের ধানের গাছ ভাল হয়েছিল। ফলে কৃষকরা আশাবাদি ছিল ধানের ভাল ফলন পাবে। কিন্তু ধান যখন শীষ নিয়ে দাড়িয়েছে ঠিক তখনি হঠাৎ শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের শীষ। কোন ওষুধেই এই ভাইরাসের প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষকরা। এ সময়ে তাদের পাশে মাঠে উপজেলা কৃষি বিভাগের কোন কর্মকর্তার দেখা বা পরামর্শ পান নাই বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন।
উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের হবিবুল্লাপুর গ্রামের বর্গাচাষী আমির হোসেন প্রামানিক জানান, চলতি মৌসুমে ৩০ হাজার টাকা ধার দেনা করে সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ করেছেন। সব ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা গেছে। এখন দেনা শোধ করবেন কিভাবে আর সারা বছরের খাবরেই বা যোগাবেনা কিভাবে হবে ; সেই চিন্তায় তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
একই গ্রামের আছির উদ্দিন আকন্দ জানান, দেড় বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ করেছিলেন। প্রথমে ধানের শীষ বের হলে; প্রতিবেশিরা বলেন এবার সবার চাইতে ভালো ধান হবে এই জমির। কিন্তু পরে সব শীষ চিটা হয়ে গেলো।
একই গ্রামের আইজল আকন্দ জানান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর ডিলারদের কাছ থেকে ক্রয় করে ৪০ শতক জমিতে ব্রি-৮১ জাতের ধান আবাদ করেন। কিন্তু সব ধানের শীষ চিটা হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, এমন দুঃসময়ে আমাদের এলাকায় কৃষি বিভাগের কোন লোকজনের দেখা কিংবা পরামর্শ পেলাম না।
উপজেলা দামোদরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাঙ্গামোড় গ্রামের খয়বর হোসেন (৫০) জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ করেন। জমির ধান গাছ ভালই হলো। কিšুÍ এক ছটাক ফসলও ঘরে উঠাতে পারেননি। সব ধানের শীষ নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনয়নের শ্রীরামপুর হাজিপাড়া গ্রামের ছাদেক আলী মোল্লা (৫৪) দুই বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ধানের আবাদ করেছিলেন। উপজেলার রসুলপুর ইউনয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের সফিউল ইসলাম (৪০) ৩৬ শতক জমিতে ও একই ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নান ৩৫ শতক জমিতে ব্রি-২৮ ধানের আবাদ করেছিলেন। তারাও একই কথা জানালেন।
উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়ন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শেখ শাদী বলেন, চলতি মৌসুমে দিনে গরম এবং রাতে শীত, মাঝে মাঝে গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি, রাতে কুয়াশ ও তীব্র তাপমাত্রার কারণে ব্রি-২৮ ও ব্রি-৮১ জাতের ধানে নেক ব্লাস্ট রোগের সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল আলম বসুনিয়া জানান, চলতি বছর কৃষকরা ব্রি-২৮ জাতের ধান জমিতে না করার জন্য পরার্মশ দিয়েছি। কিন্ত কৃষকরা কথা শুনেনি। ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মতিউল আলম জানান, কোন ফসলের বীজ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যায়। তাই কৃষি বিভাগ থেকে ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ না করার জন্য কৃষকদের নিরুৎসায়িত করা হয়েছে। তারপরও কৃষকরা আবাদ করেছে। ফলে এই পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে চাষীরা। তিনি আরও বলেন, এই রোগ প্রতিকারের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নাটিবো, এমিস্টার টপ, টুপার নামক কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।