সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি►
আর মাত্র এক মাস পরেই ভূট্টা কেটে ঘরে তুলত চর হরিপুর গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম। সেটি হল না, স্বপ্নের ভূট্টাক্ষেত একদিনের ব্যবধানে চলে গেলে তিস্তার পেটে।
বুক ভরা আশা নিয়ে ৩ বিঘা জমিতে ভূট্টার আবাদ করেছিলেন তিনি। কিন্তু অসময়ের তিস্তার ভাঙন তার ভূট্টাক্ষেত কেড়ে নিবে এটি তিনি ভাবেননি কখনো। রফিকুল ইসলামের ভাষ্য বিগত ৬ বছর ধরে তিনি ৩ হতে ৫ বিঘা জমিতে ভূট্টার চাষাবাদ করে আসছেন। প্রতিবারেই ফসল ঘরে তুলতে পারলেও তা হল না। অসময়ে নদী ভাঙন চরের কৃষকদের সর্বশান্ত করে তুলছে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। গোটা বছর তিস্তার ভাঙনে বিলিন হচ্ছে হাজারও একর ফসলি জমি। এক চর ভেঙে আরেক চর গড়ে উঠছে প্রতিবছর। স্থায়ী ভাবে ভাঙন ঠেকানোর কোন ব্যবস্থা আজও গ্রহন করা হয়নি। সে কারনে সারা বছর ভাঙনের কবলে বিলিন হচ্ছে হাজারও একর ফসলি জমি। ভাঙনের সাথে যুদ্ধ করে বসবাস করছেন তিস্তার চরের মানুষজন।
সরেজমিন উপজেলার হারপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন চর ঘুরে ফিরে দেখা গেছে ভাঙনের দৃশ্য। নিমিষের মধ্যে ভেঙে যাচ্ছে উঠতি ফসলসহ আবাদি জমি। গোটা চর এখন কৃষির সম্ভাবনার অঞ্চল। প্রতিটি চরে নজর কারার মত ভূট্টা, আলু, মরিচ, পিয়াজ, বাদাম, গম, তিল, তিশি, রসুন, কমড়াসহ নানান প্রজাতের ফসলে ভরে উঠেছে। কিন্তু ভাঙনের কবলে নিমিষে বিলিন হচ্ছে সেইসব ফসল।
কাপাশিয়ার বাদামের চরের মো. আনছার আলীর ভাষ্য গত তিন দিনের ব্যবধানে আর ২ বিঘা জমির গমক্ষেত নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। তার দাবি ২ বিঘা জমির ফলন হলে আগামি ৬ মাসের খাদ্যের চাহিদা পুরুন হত। কিন্তু রাক্ষুসি তিস্তা কেড়ে নিল তার গমক্ষেত। পরিজন নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন পরিবারটি।
হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোজাহারুল ইসলাম জানান, গোটা ইউনিয়নটি তিস্তা নদী দিয়ে বেষ্টিত। নদীর সাথে সংগ্রাম করে চরের মানুষজন বসবাস করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। গত ২০ বছর ধরে তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় অসংখ্য শাখা নদীতে পরিনত হয়েছে। সে কারনে অসময়ে ভাঙছে তিস্তা। এতে করে চরবাসি দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধ করার জন্য দাবি তাঁর।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিফ মন্ডল জানান, নদী ভাঙনের কারনে প্রতিবছর শতাধিক ঘরবাড়িসহ হাজারও একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে। বিষয়টি বহুবার সরকারের নজরে দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্থায়ী বাবে ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা না করার কারনে অসময়েও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রাশিদুল কবিরের ভাষ্য তিস্তার চরাঞ্চল এখন কৃষিতে একটি সম্ভাবনার জায়গা। তিস্তার চরকে রক্ষা করতে পারলে উত্তরাঞ্চল খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক ভুমিকা রাখতে পারবে। সে কারনে স্থায়ীভাবে তিস্তার চরকে রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। চরবাসি বুকভরা আশা নিয়ে নানান ফসলের আবাদ করছে। কিন্তু ভাঙনের কবলে হরিয়ে যাচ্ছে সেইসব ফসলি জমি।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, নদী ড্রেজিং, খনন ও নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা সরকারের উপর মহলের সিদ্ধানের ব্যাপার। তবে নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।