নিজস্ব প্রতিবেদক ►
নিভৃত গ্রামাঞ্চলে প্রায় দুই একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে আম, লিচু ও লটকনের বাগান। ইতোমধ্যে এ বাগান থেকে সফল হয়েছেন রুহুল আমিন সরকার নামের এক উদ্যোক্তা। এরই মধ্যে বাগানটির ভেতরে শুরু করা হয় বস্তা পদ্ধতি আদা চাষ। প্রায় ১০ হাজার বস্তায় মাটি-সার প্রস্তুত করে রোপন করা হয় উন্নত জাতের আদাবীজ।
এখান থেকে লক্ষাধিক টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন এই উদ্যোক্তা। ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি বিস্তার ও ফল বাগানের পতিত জমি সর্বত্তোম ব্যবহারের লক্ষ্যে বস্তা পদ্ধতিতে এই আদা চাষ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। সম্প্রতি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের তরফ ফাজিল গ্রামে এটি উদ্বোধন করেন গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ খোরশেদ আলম।
এই আদা চাষের উদ্যোক্তা ও কৃষিবিদ ড. রুহুল আমিন সরকারের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক রাজেন্দ্র নাথ রায়, সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম বসনিয়া, উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামসহ স্থানীয় কৃষক। এই চাষের কারিগরি সহায়তা করেন মসলা গবেষণা কেন্দ্রের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. আশিকুল ইসলাম।
জানা যায়, তরফ ফাজিল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের নুরুল হোসেন সরকার খোকার ছেলে রুহুল আমিন সরকার কৃষিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। এরপর থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করাসহ স্বপ্ন দেখেন গ্রামীণ মানুষদের জীবন মানোন্নয়নের। এ স্বপ্নের বাস্তরূপ দিতে নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন আম-লিচু ও লটকনের বাগান।
দীর্ঘদিনে এই বাগানে কর্মসংস্থান মিলেছে অনেকের। লাভবান হচ্ছেন নিজেও। এরই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে মিশ্র এই ফল বাগানের ফাঁকা জায়গায় ড. রহুল আমিন সরকার শুরু করলেন বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ। পরিকল্পিতভাবে মসলা গবেষণা কেন্দ্রর প্রত্যায়িত বান্দরবন জেলার স্থানীয় উন্নত বারী-১ জাতের আদাবীজ সংগ্রহ করা হয়। এ থেকে ১০ হাজার বস্তায় রোপন করা হয়েছে আদাবীজ।
এই আদা চাষি ড. রহুল আমিন সরকার জানান, ১০ হাজার বস্তায় ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ হবে তার। আবওহায়া অনুকুল থাকলে এবং স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে প্রায় ৩১৫ মণ আদা পাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা হতে পারে। আর স্থানীয় পর্যায়ে আদাবীজের সংকট অনেকটাই। তার উৎপাদিত আদা থেকে বীজ সংগ্রহ করে সেটি প্রান্তীক কৃষকদের মাঝে সাশ্রয়ী দামে বিক্রি করবেন।
এতে করে বীজের সংকট দূরীকরণ করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তিতে বস্তা পদ্ধতি আদা চাষ করে নিজে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করাই আমার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। এই এলাকার প্রত্যেকটি কৃষক যেন বস্তায় আদা চাষ করেন, সে ব্যাপারে সর্বাত্নক সহযোগিতা করা হবে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ খোরশেদ আলম বলেন, বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষে জমির চেয়ে রোগবালাইয়ের আক্রমণ হয় কম। এছাড়া কীটনাশক এবং পানি লাগে অনেক কম। ফলে যে কোনো স্থানে এভাবে আদা চাষ করা সম্ভব।