• মাধুকর প্রতিনিধি
  • ১২ ঘন্টা আগে

বছরপূর্তিতে জুলাই স্মৃতি উদযাপনে ২৬ দিনের অনুষ্ঠানমালা ঘোষণা



মাধুকর ডেস্ক►

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের বর্ষপূর্তি উদযাপনে আগামী ১ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

‘জুলাই স্মৃতি উদ্যাপন অনুষ্ঠানমালা’ নামে ৩৬ দিন ধরে এসব অনুষ্ঠান আয়োজন করবে সরকার।

মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের ফেইসবুক পেইজের এক পোস্টে দিন অনুযায়ী অনুষ্ঠানের সূচি ঘোষণা করা হয়।

এসব অনুষ্ঠানসূচি তালিকাভুক্ত করে একটি বিশেষ ক্যালেন্ডারও প্রকাশ করা হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২০২৪ সালের জুনে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। পরে ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের দেড় দশকের শাসনের পতন হয়।

তুমুল সেই গণ আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে শিশুসহ অনেকে প্রাণ হারান। সংঘাতে বহু মানুষ আহত হন। ৫ অগাস্ট হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

বাংলাদেশের রাজনীতির বাঁক বদলে দেওয়া এই গণ অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে বিরতি দিয়ে ৩৬ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা জানাল ইউনূস সরকার।

১ জুলাই

দেশের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় ‘জুলাইয়ের শহীদদের’ স্মরণে দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

একই দিন অনলাইন ও অফলাইনে ‘জুলাই ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি শুরু হবে জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি, যা চলবে ১ অগাস্ট পর্যন্ত। ওই দিন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’ চালু করা হবে।

৫ জুলাই

দেশজুড়ে চালু হবে পোস্টারিং কর্মসূচি, যার মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ের ’অবৈধ’ আওয়ামী সরকারের জুলুম-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হবে।

৭ জুলাই

চালু করা হবে Julyforever.org নামে একটি ওয়েবসাইট।

১৪ জুলাই ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’

‘জুলাই উইমেন্স ডে’ উদ্যাপন করা হবে। এদিন ১৪ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ার, ’শহীদ’ পরিবারের সাক্ষাৎকারসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ আয়োজন চলবে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত।

দেশের প্রতিটি জেলায় ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ স্থাপন করা হবে। শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে দেশের ৬৪টি জেলা ও প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই বিষয়ক ভিডিও প্রদর্শন করা হবে। টিএসসিতে ডকুমেন্টারি, গান, প্রজেকশন ম্যাপিং এবং ড্রোন শো হবে।

১৫ জুলাই ‘আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া’

জুলাইয়ের স্মৃতিচারণ, ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও জুলাইয়ের গান আয়োজন করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ’এলইডি ওয়াল ইনস্টলেশন’ হবে। প্রজেকশন ম্যাপিং ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হবে।

১৬ জুলাই ‘কথা ক’

শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে তিনটি বিভাগীয় শহরে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) শো প্রদর্শন করা হবে। রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সেখানে জুলাইয়ের গান এবং ড্রোন শো প্রদর্শন হবে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে জুলাইয়ের গান ও ড্রোন শো প্রদর্শন করা হবে।

১৭ জুলাই ‘শিকল-পরা ছল’

প্রতীকী কফিন মিছিল ও দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই স্মরণ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের ১৭ জুলাইয়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী হবে।

১৮ জুলাই ‘আওয়াজ উডা’

এক মিনিটের প্রতীকী ইন্টারনেট ’ব্ল্যাকআউট’ করা হবে। সেদিন জুলাই বিষয়ক গান, ডকুমেন্টারি, ড্রোন শো, ট্র্যাশন শো ও ম্যারাথনের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠান হবে।

১৯ জুলাই- ‘কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙ্গা’

ভিডিও শেয়ার ও ’শহীদদের’ স্মরণে নরসিংদী ও সাভারে সমাবেশ করা হবে। ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জুলাইয়ের তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। এই দিনকে ‘গণহত্যা ও ছাত্রজনতার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে কর্মসূচিতে।

২০ জুলাই – ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’

বসিলা ও মিরপুর ১০ নম্বরে হবে স্মরণ সমাবেশ। ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতেও জুলাই বিষয়ক স্মৃতিচারণমূলক ভিডিও ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।

২১ জুলাই ‘রক্ত গরম মাথা ঠান্ডা’

স্মরণ ভিডিও শেয়ার করা হবে। ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জুলাইয়ের তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে সব মাদ্রাসায় জুলাইয়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করা হবে। শহিদদের স্মরণে করা হবে সমাবেশ-৩ (স্থান-যাত্রাবাড়ি)।

২২ জুলাই ‘আভাস’

ভিডিও শেয়ারের পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগরে ‘অদম্য-২৪’ স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করা হবে। এছাড়া জুলাইয়ের পঙক্তিমালা ও রাজু ভাস্কর্যের সামনে জুলাইয়ের কবিতা পাঠ করবেন কবিরা।

২৩ জুলাই ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’

’রিমেমবারেন্স’ ভিডিও শেয়ারের পাশাপাশি রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সংযুক্ত করে অনুষ্ঠান করা হবে। ’গ্লোবাল সলিডারিটি’: জুলাই আন্দোলনে বিদেশি সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মধ্যে যারা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের নিয়ে অনলাইন ও অফলাইন আয়োজন করা হবে। এছাড়া দূতাবাসগুলোতে জুলাইয়ের কিছু নির্বাচিত ছবি ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী করা হবে। গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচি এবং জুলাইয়ের গ্রাফিতি প্রদর্শন করা হবে।

২৪ জুলাই ‘কী করেছে তোমার বাবা’

শিশু ’শহীদদের’ স্মরণে দেশব্যাপী কর্মসূচি পালন করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২৪ এর রঙে গ্রাফিতি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। নারায়ণগঞ্জে শিশু ’শহীদ’ রিয়া গোপের স্মরণে হবে অনুষ্ঠান। তাদে;র স্মরণে অনুষ্ঠানের পাশাপাশি জুলাইয়ের তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও গানের আয়োজন রয়েছে। জুলাইয়ের শিশু ‘শহীদদেরকে’ থিম করে একটি আইকনিক ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে শিশু অ্যাকাডেমিতে। এছাড়াও শিশুদের জন্য জুলাই আন্দোলনকে উপজীব্য করে গ্রাফিক নভেল প্রকাশ করা হবে।

২৫ জুলাই ‘চলো ভুলে যাই’

ভিডিও শেয়ার করা হবে। মঞ্চে বিপ্লব: দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট নাট্যমঞ্চ প্রস্তুত করে নাটক মঞ্চস্থ করা হবে।

২৬ জুলাই ‘পলাশীর প্রান্তর’

ভিডিও শেয়ার করা হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করা হবে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের জমায়েত ও অনুষ্ঠান । মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ভূমিকা নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শনী। জুলাইয়ের র‍্যাপ গানের অনুষ্ঠান করা হবে। বাংলা একাডেমিতে জুলাইয়ের প্রকাশিত বই নিয়ে বইমেলা।

২৭ জুলাই ‘ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর গান’

ভিডিও শেয়ার করা হবে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক সংলাপের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের তথ্যচিত্র ও বৌদ্ধ পূর্ণিমা নিয়ে ভিডিওচিত্র প্রচার করা হবে।

২৮ জুলাই ‘চলো ভুলে যাই’

ভিডিও শেয়ার করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার একটি ভিডিওবার্তা দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। জুলাইয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে অনুষ্ঠান ’মুনসুন আর্কাইভ’ প্রকাশ করা হবে। ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো ডেড-বডিস’ শীর্ষক তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনীর পাশাপাশি সারাদেশে রক্তদান ও মেডিকেল ক্যাম্পেইন হবে।

২৯ জুলাই ‘বাংলা মা’

ভিডিও শেয়ার করা হবে। অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক বুদ্ধিবৃত্তিক প্যানেল আলোচনা হবে। গাজীপুর ও সাভারে হবে শ্রমিকদের সমাবেশ।

৩০ জুলাই ‘চল চল চল’

ভিডিও শেয়ার করা হবে। অনলাইনে জুলাই স্মরণ করা হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখা সাংবাদিকদের নিয়ে অনুষ্ঠান করা হবে। জুলাই অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক বুদ্ধিবৃত্তিক প্যানেল ডিসকাশনও করা হবে।

৩১ জুলাই ‘কাণ্ডারি হুঁশিয়ার’

ভিডিও শেয়ার করা হবে। দেশব্যাপী সব কলেজে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি স্মরণে অনুষ্ঠান করা হবে।

৩২ জুলাই (আগস্ট ১) ‘গণজোয়ার’

ভিডিও শেয়ার করা হবে। ৬৪টি জেলায় জুলাই নিয়ে বানানো তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। এছাড়াও সকল বাংলাদেশি দূতাবাসে জুলাই নিয়ে বানানো নির্বাচিত তথ্যচিত্র প্রদর্শনী হবে। জুলাই ২৪ নিয়ে ছবির ‘কফি টেবিল বুক’ প্রকাশনা করা হবে । জুলাই হত্যাযজ্ঞের খুনিদের বিচারের দাবিতে গণ-স্বাক্ষর কর্মসূচির সমাপ্তি।

৩৩ জুলাই (আগস্ট ২) ‘আমি বাংলায় গান গাই’

ভিডিও শেয়ার করা হবে। বাংলাদেশের সব জেলার ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার পাশাপাশি হবে ‘প্রজেকশন ম্যাপিং’।

৩৪ জুলাই (আগস্ট ৩) ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’

ভিডিও শেয়ার করা হবে। শাহবাগ থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত হবে শোভাযাত্রা । রিকশায় জুলাইয়ের গ্রাফিতি অঙ্কন ও রিকশা মিছিল হবে। ৬৪টি জেলায় জুলাই নিয়ে বানানো তথ্যচিত্র প্রদর্শনী হবে।

৩৫ জুলাই (আগস্ট ৪) ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’

ভিডিও শেয়ার করা হবে। সারাদেশে জুলাই যোদ্ধাদের সমাগম। জুলাইয়ের কার্টুনের প্রদর্শনী হবে। ৬৪টি জেলায় আন্দোলনের নায়কদের নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।

৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) ‘শোনো মহাজন’

ভিডিও শেয়ার করা হবে। ৬৪ জেলার কেন্দ্রে জুলাই ’শহীদ’ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। শহীদ পরিবারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ, শহীদদের জন্য প্রার্থনা, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে বিজয় মিছিল ও এয়ার শো হবে। গানের অনুষ্ঠান, ‘জুলাইয়ের ৩৬ দিন’সহ আন্দোলনের তথ্যচিত্র প্রদর্শন, ড্রোন শো এবং র‍্যাপের সঙ্গে বচসার আয়োজন থাকবে এই দিনে।