• মাধুকর প্রতিনিধি
  • ৪ ঘন্টা আগে

নীতি-নৈতিকতায় অশুভ অনুপ্রবেশ, বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা!



আশরাফুল আলম►

মানুষ সামাজিক জীব। নীতি নৈতিকতা মানুষকে ভালো-মন্দের বিচার বিবেচনা এবং সামগ্রিক আচরণ ও কার্যকলাপকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। এটি একটি মানদণ্ড বা নীতিমালা যা ধর্ম, সংস্কৃতি, বা ব্যক্তিগত বিশ্বাস থেকে আসে। নৈতিকতা ব্যক্তির উদ্দেশ্য, সিদ্ধান্ত এবং কর্মের ফল হিসেবে ভালো-খারাপ দিকগুলো নির্ধারণ করে. কিন্ত বর্তমান সময়ে ব্যাপকভাবে লক্ষনীয় নীতি ও নৈতিকতায় অশুভ অনুপ্রবেশ। সমাজে প্রচলিত নিয়ম-নীতি এবং ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত নৈতিকতার মধ্যে খারাপ বা ক্ষতিকর কিছু বিষয় লক্ষ্য করা যায় যা মানুষকে অনৈতিক কার্যকলাপ, দুর্নীতি, ধর্ম বিভেদ অপপ্রচার, গুজব, গীবদ এবং অন্যায় অবিচারের মতো কাজে অন্তর্ভূক্ত করতে উৎসাহিত করে। যা সামগ্রিকভাবে সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে।

বর্তমানে সমাজে এবং রাষ্ট্রীয় সেবা সংস্থা ও দায়িত্বে থাকা বেশিরভাগ মানুষ এবং রাজনৈতিক পরিচয়ধারী অসৎ কর্মীদের  মধ্যে নীতি ও নৈতিকতায় অশুভ অনুপ্রবেশ ঘটেছে। যা কিছু বিষয় এবং ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত। যেমন-  সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে দুর্নীতি, ঘুষ, স্বজনপোষণ, এবং ক্ষমতার অপব্যবহার সমাজে প্রচলিত নিয়ম-নীতি এবং নৈতিকতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে নানা দিক থেকে। সমাজে ন্যায়বিচার না থাকা, দুর্বল ও দরিদ্রদের প্রতি বৈষম্য, মাদকের ব্যাপকতা বা মাদক নিয়ন্ত্রণে ব্যার্থতা এবং আইনের শাসনের অভাব, যা অশুভ অনুপ্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। মিথ্যা ও প্রতারণা সমাজের অহরহ ঘটনা। মিথ্যাচার, প্রতারণা, এবং বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনা বৃদ্ধি অব্যহত। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস কমে গেছে এবং নৈতিক অবক্ষয় ঘটমান। ব্যক্তিগত স্বার্থকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে একে অন্যের প্রতি যে  সহানুভূতি ও সহমর্মিতামূলক আচরণ তা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সমাজে সহিংসতা, বিদ্বেষ এবং ঘৃণা বৃদ্ধি  এখন চরমে। ফলে এখন বিভিন্ন স্তরে মানুষের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয়ের একটি সুস্পষ্ট লক্ষণ সবত্রই।

নৈতিক অবক্ষয় বলতে সমাজের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধের অভাব বা পতনের অবস্থাকে বোঝায়। যেখানে সমাজে প্রচলিত নিয়ম-নীতি এবং নৈতিকতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি করে। কথা হলো আমাদের সমাজে যে কাজ বা ঘটনা গুলো একসময় অনৈতিক বা ভুল বিষয় বলে বিবেচিত হতো, এখন তা সমাজে স্বাভাবিক বা গ্রহণযোগ্য হিসেবে সহনীয় হতে শুরু করেছে। সহজ ভাষায়, সমাজের প্রচলিত নিয়ম-কানুন ও নীতি-নৈতিকতার অবমূল্যায়নই হলো নৈতিকতার অবক্ষয়। যেমন অর্থ কামানোর জন্য ভুয়া  বা অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বানিয়ে নামে মাত্র কাজ করে অর্থ উপার্জনের একটি মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্টা করা হচ্ছে। অথচ সেই প্রকল্প আদৌ জনগনের প্রয়োজন আছে কি না তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন গুরুত্বহীন। অন্য দিকে মনিটরিং কাঠামো থাকলেও ভাগ বাটোয়ারার মধ্যে সেই কাঠামোতো দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির অংশ যেন পাওনা হিসেবে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন অফিসের কাজে ঘুস যেনো একটি অবৈধ অনৈতিক অধিকার হয়ে আত্বস্বীকৃত হয়েছে। কারণ সামান্য থেকে বৃহৎ পরিমান ঘুষের  অর্থকে কখনো টোকেন মানি কখনো সম্মানি আবার কখনো পাওনা % আকারে প্রকাশ করা এবং আদায় করা হয়। দীর্ঘ দিনে চর্চা করতে করতে অবস্থা এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে যিনি কোনো কাজ করতে যাবেন তিনি নিজেই বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে কর্মকর্তার ঘুষের পরিমাণ আগে থেকেই অবগত এবং কাজ ছড়িয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন কোনো কোনো কাজে আবার সেবা গ্রহণকারী নিজেই কাজ ছাড়িয়ে নিতে আগে থেকেই ঘুষের অফার দিয়ে বসেন, এমন অবস্থায় আমাদের সামনে বড় বিপত্তি দৃশ্যমান তা হচ্ছে ব্যক্তি নৈতিকতার অবক্ষয়।   ব্যক্তি নৈতিক  অবক্ষয়ের নিদ্দিষ্ট  কিছু সাধারণ কারণ আমাদের চারপাশে দৃশ্যমান। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় যা দৃশ্যমান তা থেকে বলা যায় বাংলাদেশে আর কোনোদিন মনে হয় গণতন্ত্র ফিওে আসার স্বপ্ন দেখা অধরাই থেকে যাবে কারণ যে দেশের রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে একে অপরের প্রতি সামান্য শ্রদ্ধা বা শালীনতা দেখা যায় না সেখানো নীতি নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত চ্যালের্ঞ্জিং বিষয় কারণ তাদের মধ্যে অশুভ চিন্তা চেতনার অনুপ্রবেশ ঘটেছে আর তাতে সবত্রই অপরাধ  প্রবনতা কমছেই না কদিন আগেই যারা একসাথে একই রকম উদ্দেশ্যে জীবন বাজি রেখে রাজপথে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য একসাথে একই ছাতার নিচে দাড়িয়ে কথা বলেছে আজ তারা নিজেদের ভিন্ন স্বাথের্র জন্য মুখে নানান কথা বলছেন একে অপরকে গালমন্দ করছে, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মিথ্যা হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা দায়েরসহ বিভিন্ন বিদ্বেষমূলক কার্যক্রমে লিপ্ত। রাজনৈতিক দলের হানা হানির মাঝে অশুভ শক্তি সমাজে চুরি ছিনতাই ডাকাতিসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধমূলক কাজ বেড়ে গেছে। সাধারণ মানুষ অশান্তি আর অস্থিরতার মধ্যে বাস করছে। রাজনীতির মাঠে নীতি নৈতিকাকে বিসর্জন দিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি খরাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে যা ভবিষ্যতে দেশের নাগরিকদের উপর আরও বেশি খরগ হয়ে দেখা দিতে পারে। সমাজের মানুষের মাঝে নীতি নৈতিকতার অবক্ষয়ের কিছু কারণ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে যেমন: 

শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি, অনেক ক্ষেত্রে, শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অভাব দেখা যায়, যা শিক্ষার্থী এবং সেবা গ্রহণকারী ও সেবা গ্রহীতার মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি করছে। পরিবার ও সমাজের প্রভাব : পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নৈতিকতার অভাব এবং সমাজের নেতিবাচক প্রভাবও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ হিসেবে ভুমিকা রাখছে। ধর্মীয় শাসনের অভাব: ধর্মীয় অনুশাসন থেকে দূরে থাকার কারণেও সমাজে নৈতিক অবক্ষয় বেড়ে গেছে যা নিয়ন্ত্রণ করা সত্যই চ্যালেঞ্জিং অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতির বিস্তার: সমাজে অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতির প্রসার নৈতিক অবক্ষয়কে আরও ত্বরান্বিত করছে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্তরে তার মধ্যে অনেক বড় একটি মাধ্যম মোবাইল ফোনে টিকটক ও অশ্লীল ভিডিও। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা: রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা সমাজে বিভিন্ন অস্থিরতা তৈরি করে, যা নৈতিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ আমরা বলি অভাবে স্বভাব নষ্ট। বাক্যটি যথেষ্ট যৌক্তিক। আবার প্রযুক্তির অপব্যবহার মানুষকে ভুল পথে চালিত করছে আর গুজবে বিশ^ টালমাটাল অবস্থায় পাশাপাশি এআই এর অপব্যবহার মাঝে মধ্যেই মানুষকে কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা বুুুঝতে দিধা দন্দের মধ্যে ফেলে দেয়। ফলে নীতি ও নৈতিকভাবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তবে বিষয়টিকে নিয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তার গুরুত্ব দিয়ে পরিবার,সমাজে ও রাষ্ট্রে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার স্বার্র্থে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে নৈতিকতার অবক্ষয় রোধ করা জরুরী। উপযুক্ত কিছু পদক্ষেপ  গ্রহণ করা যেতে পারে যেমন- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়া,পরিবার ও সমাজে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চা করা,ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা,অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে জনমত গঠন, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, নৈতিক অবক্ষয় একটি গুরুতর সমস্যা যা সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করে। তাই, এই সমস্যা সমাধানে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। 

আমরা জানি সমাজের ক্ষুদ্রতম একটি অংশ হলো পরিবার, যা মাতাপিতা, স্ত্রী-সন্তান-সন্ততি, এই নির্দিষ্ট কয়েকটি সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়। এই ক্ষুদ্র অংশটিই সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ফলে পরস্পরের মাঝে যে দৃঢ় বন্ধন ও মৈত্রী তৈরি হয়, তা আমাদেরকে সংগঠিত হবার স্বপ্ন দেখায় এবং আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে তাই ইসলামী জীবন বিধান মেনে সমাজের প্রতিটি মানুষকে সৎ ও আদর্শরূপে গড়ে তোলা, নীতি-নৈতিকতায় ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টি করা। সামাজিক কৃষ্টিকালচার-সংস্কৃতি অনুধাবনে সক্ষম করে তোলা, সামাজের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো সকলের সামনে স্পষ্ট করে দেয়া, যাতে করে প্রতিটি মানুষ চিন্তা এবং বাস্তব এ দুইয়ের সমন্বয়ে ধর্মীয়, সামাজিক-সাংস্কৃতির উন্নয়ন, সামাজিক অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং সার্বিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।  সমাজের প্রতিটি মানুষকে আলোকিত করা গুরুত্বপূর্ণ। যা এই সমাজের কোনায় কোনায় লুকিয়ে থাকা যাবতীয় অপসংস্কৃতি, পাপ-পঙ্কিলতা মুছে দিতে পারে।  সত্য ও ন্যায়ের বাস্তবায়নে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে, দেশ ও জাতির স্বার্থে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে পরিসিদ্ধ করে ইসলামী বিধিবিধানের আওতায় থেকে নীতি ও নৈতিকায় অশুভ অনুপ্রবেশকে প্রতিরোধ করে একটি সভ্য-সুশীল ও আদর্শ সমাজ বিনির্মানের মাধ্যমে দেশ ও জাতির স্বার্থে সকল ক্ষেত্রে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করা অতীব জরুরি। আর সেটা না হলে আমাদের সামনে মহাবিপদ আসন্ন।

লেখক: উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী