• মাধুকর প্রতিনিধি
  • ২২ ঘন্টা আগে

ভঙ্গুর অবস্থায় চলছে গাইবান্ধার নিজাম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়



মোদাচ্ছেরুজ্জামান মিলু►

গাইবান্ধা জেলা শহরে সরকারের এমপিওভূক্ত যে কযেকটি হাইস্কুল আছে তার মধ্যে ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া গাইবান্ধা নিজাম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় একটি। স্বাধীনতার পর থেকেই মানুষ এই বিদ্যালয়ের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এই বলে যে গাইবান্ধার সবচেয়ে অগা ছাত্ররা নাকি এখানে পড়তে আসে। যদি কোনো স্কুলের ফলাফল ভালো না হয়, ক্লাস হয় কি হয় না সেটাও যদি থেকে যায় আড়ালে আবডালে তাহলে তো সেই প্রতিষ্ঠানের নাম মানুষ আস্তে আস্তে ভুলেই যাবেন।

সরেজমিনে এই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, এই স্কুলের ভগ্নদশার নানান চিত্র। খুবই কম সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী দেখা গেল বামে দোতলা বিল্ডিং এর নিচতলায় বসে আছে। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হচ্ছেন জান্নাতুন্নাহার। তিনি ২০০১ সালে এই প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন, ২০১৪ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান এবং  ২০১৪ সালে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে এ অবধি চাকরি করে আসছেন। স্কুলের তালিকা অনুযায়ী মোট ছাত্র-ছাত্রী ১৯৫ জন। সিক্সে ৪৬ জন, সেভেনে ৩২ জন, এইটে ৪৩ জন, নাইনে ৪৯ জন এবং ক্লাস টেন এ ২৫ জন। ক্লাস টেন এ মাত্র ২৫ জন কেন জিজ্ঞাসা করলে পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক জানান যে ক্লাস টেন এ আরো বেশি হবে।

এখানে একটি প্রশ্ন দেখা যায় যে এই কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ক্লাস টেন এ কতজন তা দ্বিতীয়বার সংশোধন করে বলা মানে সেখানে সন্দেহের তীর অন্যদিকে যায়। মোট ১১ জন শিক্ষক আছেন বলে প্রধান শিক্ষক জানান। এছাড়াও অফিস সহকারী, কর্মচারী ও নৈশ প্রহরী আছে।

১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই নিজাম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পাসের হার সন্তোষজনক নয়। তথ্যসূত্রে জানা যায় যে, ২০০৮ সালে ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে এই স্কুলের বেতন স্থগিত করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে বোর্ডের মিনিমাম শর্ত পূরণ হওয়ার পর ২০১১ সালে আবার বেতন নিয়মিত হয়। এদিকে গত দশ বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল দেখতে চাইলে প্রধান শিক্ষক রেজাল্ট সিট দেখিয়ে সহযোগিতা করেন।

ফলাফলে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ৭১ জন পরীক্ষা দেয় তার মধ্যে ৭ জন জিপিএ-৫ সহ ৬৩ জন পাস করে, ২০১৭ সালে ৩৯ জন পরীক্ষা দিয়েছে তার মধ্যে ২ জন জিপিএ-৫ সহ ৩৬ জন পাস করেছে, ২০১৮ সালে ৪৩ জন পরীক্ষা দিয়েছে তার মধ্যে ২ জন জিপিএ-৫সহ ৩৪ জন পাস করেছে, ২০১৯ সালে ৪০ জন পরীক্ষা দিয়েছে তার মধ্যে ১ জন জিপিএ-৫ সহ ৩৫ জন পাস করেছে, ২০২০ সালে ৩৭ জন পরীক্ষা দিয়েছে তার মধ্যে ৩১ জন পাস করেছে এবং কেউ জিপিএ-৫ অর্জন করতে পারে নাই, ২০২১ সালে ২৯ জন পরীক্ষা দিয়েছে তার মধ্যে কেউ জিপিএ-৫ পায় নাই এবং শতভাগ পাস করে, ২০২২ সালে ৩৯ জন পরীক্ষা দেয় এবং কোনো জিপিএ-৫ ছাড়াই ২১ জন পাস করে, ২০২৩ সালে ৭২ জন পরীক্ষা দেয় এবং ৩৯ জন পাস করে যেখানে কোনো জিপিএ-৫ নাই, ২০২৪ সালে ৭৩ জন পরীক্ষা দেয় এবং কোনো জিপিএ-৫ ছাড়াই ৩৮ জন পাস করে এবং সর্বশেষ ২০২৫ সালে ৪৮ জন পরীক্ষা দেয় যেখানে কোনো জিপিএ-৫ ছাড়াই ২২ জন পাস করে।

গত ১০ বছরের এই ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রথম পাঁচ বছরের ফলাফল মোটামোটি হলেও শেষ পাঁচ বছরের ফলাফল সন্তোষজনক নয়। দিনে দিনে আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে এই হাইস্কুলটি। শিক্ষক ও কর্মচারীরা মাস গেলে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু কেন ছাত্রদের ফলাফল ভালো হচ্ছে না সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। এদিকে কয়েক মাস আগে আইসিটি বিভাগের জন্য একজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যার নাম রুবেল সরকার। কিন্তু তার ক্লাসের জন্য কোনো বিশেষ রুম নেই এবং কোনো কম্পিউটার নাই আইসিটি ক্লাসের জন্য। এটিও অপরিকল্পিত যা থেকে কোনো আউটপুট আসছে কি না সে বিষয়েও প্রশ্ন রয়ে গেল।

সহকারী শিক্ষক নাজিমুজ্জামান যিনি ২ বছর আগে প্রমোশন নিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হয়েছেন তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ জানেন এবং আমরাও চেষ্টা করছি স্কুলের মান বৃদ্ধি করতে।

নিজাম উদ্দিন হাইস্কুলের সম্পত্তি নিয়ে অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে গেছে এখনো। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই চত্বরের সীমানা বা সম্পদ মূলত একটি। ১ একর ৬৩ শতক জমির উপর রয়েছে একদিকে নিজাম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন এবং কিছুটা মাঠ বাদ দিলে অপর প্রান্তে হযরত শাহ্ বাঙ্গাল হাফিজিয়া ক্বওমী মাদরাসা এবং মসজিদ। স্কুলের ভবন দক্ষিণ দিকে অথচ সেখানে স্কুলের অফিস নাই। সে অফিস মাঠের উত্তরে মসজিদের সীমানার মধ্যে। স্থানীয় জনগণ বলেন এতে করে স্কুলের যেমন অসুবিধা তেমনি মসজিদেরও অসুবিধা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সমস্যার সুরাহা হওয়া দরকার বলে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন।

এই সম্পত্তির উপর উভয় প্রতিষ্ঠানের অধিকার প্রশ্নে বিতর্ক হলে ১৯৯০ সালে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ একটি মামলা দায়ের করেন। ১৯৯২ সালে এই মামলার রায় হয় এবং রায়ে এই সম্পত্তিকে চিরস্থায়ী পীরোত্তর সম্পত্তি হিসেবে বলা হয়। এর পরবর্তীতে স্কুল কর্তৃপক্ষ আপিল করেছিলো এবং যতদুর জানা যায় বিষয়টি এখনো সুরাহা হয় নাই এবং আপিলের রায় হয় নাই। যেহেতু এই ক্যাম্পাসে নিজাম উদ্দিন হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাই স্কুলের নামে ১৫ শতক জায়গা রেকর্ড হয়েছে বলে জানা যায়।

শহরের বুকে নিজাম উদ্দিন হাইস্কুলের এতো সমস্যার কথা শুনে পলাশ পাড়ার ঠিকাদার ও সমাজ সেবক মেহেদী হাসান বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির উচিৎ তারা দ্রুত বসে সকল সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।